টঙ্গী ব্রিজের স্ল্যাব ধসে পড়ার কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে, রোববার প্রথম কর্মদিবসে তার মাত্রা বাড়িয়েছে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি।
এ পথে চলাচলকারীরা বলছেন, অন্য দিনগুলোতে অনেকেই নিকট গন্তব্যে হেঁটে পৌঁছেছেন। তবে এদিন তাও ছিল ভীষণ কষ্টের। এমনিতেই ফুটপাত নেই, যতটুকু আছে কাদা-জলে তা ছিল চলাচলের অনুপযোগী। এ অবস্থায় বেশি বিপাকে পড়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা।
গাজীপুর থেকে রোববার সকালে রাজধানীর পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিল নীলিমা আক্তার। সে বলে, ‘পরীক্ষায় অংশ নিতে সকাল ৭টায় টঙ্গী কলেজ গেট থেকে রওনা হয়েছিলাম। এয়ারপোর্টে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে সকাল ১০টা বেজে গেছে। যানজটের কারণে টঙ্গী বাজার থেকে উত্তরা পর্যন্ত হেঁটে এসে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। এভাবে দুঃশ্চিন্তা নিয়ে বাকি পরীক্ষাগুলো কীভাবে দেব?
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের (বিআরটি) কারণে গেল ৫ বছর ধরে এ পথে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। যানজটের কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের আটকে থাকতে হচ্ছে সড়কে। খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রকল্পটিকে ‘গলার কাঁটা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। সেই গলার কাঁটার অস্বস্তি বাড়িয়েছে টঙ্গী ব্রিজের স্ল্যাব ধসের ঘটনা।
হাঁটার পথেও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মানুষটঙ্গী ব্রিজের অংশবিশেষ মঙ্গলবার হঠাৎ ধসে পড়ে। এর পর থেকেই ব্রিজের ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যাত্রীদের আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ হয়ে কামারপাড় দিয়ে মিলগেট এলাকায় উঠতে হচ্ছে। এই পথে আগে থেকে দূরপাল্লার গাড়ির চাপ থাকায় মাত্র দুই কিলোমিটার যেতে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
টঙ্গী ব্রিজের এই সমস্যায় রাজধানীর উত্তরা, আশুলিয়া, গাজীপুরের যাত্রীরা ছাড়াও দূরপাল্লায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগের যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। উত্তরা পাড়ি দিতেই যে সময় লাগছে, কোনো কোনো জেলায় পৌঁছে যাওয়া যেত তার চেয়ে আগে।
যাত্রীরা বলছেন, মহাসড়কের টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে থেমে থেমে যানজট তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া রাজধানীর উত্তরা থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কেও তীব্র যানজট রয়েছে।
সাইফুল ইসলাম গুলশানের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত ৮ বছর ধরে গাজীপুর থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস করছি। এর মধ্যে পাঁচ বছর ধরে বিআরটি প্রকল্পের কারণে যানজটের দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। অফিস শেষে বাসায় ফিরতেও গভীর রাত হয়ে যায়। তার মধ্যে আবার টঙ্গী ব্রিজ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েছে কয়েক গুণ। এই দুর্ভোগের শেষ কবে?
টঙ্গী ব্রিজের ধসে পড়া অংশ। ছবি: নিউজবাংলাঢাকা-শেরপুর রুটে চলাচল করা শ্যামলী পরিবহনের চালক খোরশেদ বলেন, আগে ঢাকা থেকে শেরপুর গিয়ে আবার যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরতে পারতাম। কিন্তু গত চার-পাঁচ দিন ধরে একবারের বেশি ট্রিপ হয় না। চান্দনা চৌরাস্তার পর আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত আসতে সীমাহীন কষ্ট হচ্ছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শুক্রবার আর শনিবারের তুলনায় সড়কে গাড়ির চাপ অনেক বেশি। সকালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ও অফিসগামী যাত্রীরা একই সঙ্গে সড়কে বের হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন। তবে আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি রেখেছিলাম। সড়কের শৃঙ্খলায় ট্রাফিক পুলিশ ও থানা পুলিশ একযোগে কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, এই মহাসড়ক দিয়ে অন্তত ২০টি রুটের যানবাহন চলাচল করে। ঢাকায় ঢুকতে ও বের হতে টঙ্গী ব্রিজের বিকল্প কোনো সড়ক নেই। কামাড়পাড়া দিয়ে ঢাকার এবং আশুলিয়া বাইপাসের গাড়িগুলো গাজীপুরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। তবে ওই সড়কটিও বেশ সরু। এ ছাড়া গাজীপুর থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত বাইপাস সড়কটি বেহাল। তাই যানজট মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে।