বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রধান কোম্পানিগুলোর আয় বৃদ্ধির তথ্যেও বড় পতন

  •    
  • ১৪ নভেম্বর, ২০২১ ১৪:৪৮

গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাপকভাবে আয় বাড়াতে পেরেছে পুঁজিবাজারের আলোচিত কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা, বিএসআরএম স্টিল, বিএসআরএম লিমিটেড, ওষুধ খাতের এসিআই, একমি ল্যাবরেটরিজ, রেনাটা, ইবনে সিনা। বস্ত্র খাতের বিভিন্ন কোম্পানির আয়ও বিনিয়োগকারীদের চমৎকৃত করেছে। প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশের পরও এই দরপতন নিঃসন্দেহে হতাশ করবে।

গত সপ্তাহে টানা দুই দিন বড় উত্থানের পর শেষ কর্মদিবসে সূচক বাড়লেও বেলা শেষের লেনদেনে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল, তারই প্রভাব দেখা গেল নতুন সপ্তাহের প্রথম দিনের লেনদেনে।

সূচকে আবারও বড় পতন, পাশাপাশি লেনদেনের খরাতেও স্পষ্ট হলো যে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া বাজার সংশোধন শেষ হতে আরও দেরি আছে।

এই পতন একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না বিনিয়োগকারীদের কাছে। কারণ, বাজারে সূচকে প্রভাব ফেলে, বড় মূলধনি এমন বেশ কয়েকটি কোম্পানির প্রান্তিক প্রতিবেদনে অভাবনীয় আয়ের তথ্য মিলেছে।

করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে দেড় বছর ধরে ব্যবসা ও উৎপাদনে যে মন্দাভাব ছিল, সেটি কাটিয়ে অর্থনীতির চাকা আবার ঘুরছে পুরোদমে।

গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাপকভাবে আয় বাড়াতে পেরেছে পুঁজিবাজারের আলোচিত কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা, বিএসআরএম স্টিল, বিএসআরএম লিমিটেড, ওষুধ খাতের এসিআই, একমি ল্যাবরেটরিজ, রেনাটা, ইবনে সিনা। বস্ত্র খাতের বিভিন্ন কোম্পানির আয়ও বিনিয়োগকারীদের চমৎকৃত করেছে।

রোববার লেনদেন শুরু হয় সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে। ৫ মিনিটেই বাড়ে ৩১ পয়েন্ট। কিন্তু সময় গড়াতে থাকলে শেয়ারগুলো দর হারাতে থাকে। এর প্রভাবে সূচকের বড় পতন হয়।

শেষ পর্যন্ত ২৭৩টি কোম্পানি দর হারায়। বিপরীতে শেয়ার দর বাড়ে ৬৮ টি কোম্পানি। আর ৩২ কোম্পানি দর ধরে রাখতে পারে। এতে সূচক কমে যায় ৬৫ পয়েন্ট।

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসের লেনদেনের এই চিত্র বিনিয়োগকারীদেরকে হতাশ করেছে

দিন শেষে লেনদেন এক হাজার কোটি টাকার ঘর ছাড়ালেও সেটি হয়েছে শেষ বেলার ক্রয় চাপে। প্রথম ঘণ্টায় ৩১৭ কোটি টাকার লেনদেন হলেও বেলা সোয়া ২টায় তা ছিল ৮০০ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। তখন মনে হচ্ছিল ২৮ এপ্রিলের পর প্রথমবারের মতো লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে যায় কি না।

তবে শেষ ২৫ মিনিটে গতি পায় লেনদেন। আর তাতে সেই বিষয়টি আর ঘটেনি।

দিন শেষে সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯৩০ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ১ হাজার ৫০৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দর সংশোধনে টাকা বাড়তে থাকা বেক্সিমকো লিমিটেড গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ২৯ গুণেরও বেশি আয় করার তথ্য দেয়ার পর অপ্রত্যাশিত দরপতন ঘটেছে। একপর্যায়ে প্রায় ১০ টাকা দর হারিয়ে ফেলে কোম্পানিটি। পরে সেখান থেকে ৫ টাকা ফিরে পায়।

সূচকের পতনে প্রধান ভূমিকায় অবশ্য ছিল ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বেক্সিমকো।

সূচক পতনের প্রধান কারণ এই ১০টি কোম্পানি

এর বাইরে বেক্সিমকো ফার্মা, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট, রবি, ওয়ালটন, তিতাস গ্যাস, আইসিবি, ইউনাইটেড পাওয়ার ও ওরিয়ন ফার্মার দরপতন সূচকের পতনে প্রধান ভূমিকায় ছিল।

গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বাজার সংশোধনে এই কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগের দর বেড়েছিল।

এই ১০টি কোম্পানির কারণেই সূচক থেকে হারিয়ে গেছে ৪৩.৭১ পয়েন্ট।

অন্যদিকে জাপানি কোম্পানির কাছে বিকাশের শেয়ার বিক্রির ইস্যুতে টানা দ্বিতীয় দিন দর বৃদ্ধি পাওয়া ব্র্যাক ব্যাংক, শাহজিবাজার পাওয়ার, বিএসআরএম স্টিল, জেনেক্সিল ইনফোসিস, বিকন ফার্মা, একমি ল্যাবরেটরিজ, ইবিএল, ফরচুন সুজ, এসিআই লিমিটেড ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের শেয়ার দর বাড়ায় সূচকে কিছু পয়েন্ট যোগ হয়েছে।

এই ১০টি কোম্পানি সূচকে যোগ করেছে ১৪.৭৮ পয়েন্ট।

এই ১০টি কোম্পানি সূচকে কিছু পয়েন্ট যোগ করেছে

সব খাতেই দরপতন দেখা গেছে। এর ভিড়ে বেশি পতন হয়েছে প্রকৌশল, আর্থিক, জ্বালানি, বিমা, বস্ত্র, সিমেন্ট, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। এসব খাতে খুব কমসংখ্যক শেয়ারের দর বেড়েছে।

আগের তুলনায় লেনদেনে কমলেও শীর্ষে বেক্সিমকো

নানামুখি খবরে চাঙ্গা থাকা বিবিধ খাতের কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেড সপ্তাহের প্রথম লেনদেনেও আগের অবস্থা ধরে রেখেছে। যদিও আগের দিনের তুলনায় লেনদেন অর্ধেক কমে এসেছে। তারপরও কোম্পানিটির লেনদেন যে কোনো কোম্পানির তুলনায় বেশি হয়েছে রোববার।

বেক্সিমকো লিমিটেডের লেনদেন হয়েছে ১৫৪ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩৪২ কোটি টাকা, যা ছিল সে দিনের মোট লেনদেনের এক চতুর্থাংশ।

লেনদেনের শীর্ষে থাকলেও কোম্পানিটির শেয়ার দর এদিন কমেছে ২.৩২ শতাংশ। শেয়ারদর ১৮৫ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৮০ টাকা ৭০ পয়সা।

লেনদেনের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল ব্র্যাক ব্যাংক, যার মোট লেনদেন হয়েছে ৬৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। শেয়ার দর বেড়েছে ৫.৫৪ শতাংশ। প্রতিটি শেয়ারে যোগ হয়েছে ২ টাকা ৭০ পয়সা।

ওষুধ খাতের ওরিয়ন ফার্মার লেনদেন হয়েছে ৪৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ব্যাংক খাতের আরেক কোম্পানি আইএফআইসিতে লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

চারটি খাতেই কেবল একশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে

তালিকায় আছে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের জেনেক্স ইনফোসিস, রোববার যার মোট লেনদেন হয়েছে ৩৪ কোটি ২০ লাখ টাকা।

সাইফ পাওয়ারটেকে লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। কোম্পানিটি লেনদেনের দিক দিয়ে উঠে এসেছে ছয় নম্বরে।

সাত নম্বরে আছে খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের ব্রিটিশ আমেরিমান ট্যোবাকো বাংলাদেশ (বিএটিবিসি), যার লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। হাতবদল হয়েছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৩২১টি শেয়ার।

লেনদেনে ভালো অবস্থানে থাকা বাকি কোম্পানিগুলোর মধ্যে আছে এনআরবিসি ব্যাংক, লাফার্জ হোলসিম, ডেল্টা লাইফ, ফরচুন সুজ ও মালেক স্পিনিং।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে যেগুলো

সদ্য তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার এখনও স্বাভাবিক হয়নি। গত ৬ নভেম্বর থেকে লেনদেনে আসা এই কোম্পানিটির শেয়ার দর প্রতিদিনই দিনের সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হচ্ছে।

এর আগে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন শুরু করলে প্রথম দুদিন ৫০ শতাংশ করে দর বৃদ্ধির সুযোগ ছিল। গত ৭ মে’র পর থেকে এই সুযোগ বন্ধ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিএসইসি। ফলে নতুন যত কোম্পানি লেনদেনে আসছে সেগুলোর দর প্রথম দিন থেকেই নিয়মিত সার্কিট ব্রেকার বা ১০ শতাংশের নিয়ম কার্যকর হচ্ছে।

গত ছয় দিনের কোম্পানির শেয়ার দর ১০ শতাংশ করে বেড়েছে ১০ টাকা শেয়ার রোববার লেনদেন হয়েছে ১৭ টাকা ৬০ পয়সা।

কোম্পানিটির এদিন মোট ৮ হাজার টাকার ৪৭০টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

তারপরই আছে একমি প্যাস্টিসাইট, এটিও নতুন কোম্পানি। ১০ টাকার শেয়ার দিনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা শেয়ার প্রতি ১ টাকা বেড়ে হয়েছে ১১ টাকা।

লেনদেনের শীর্ষে থাকা আরেক কোম্পানি ছিল খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের জেমিনি সি ফুড, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৭১ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ২৫২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭৪ টাকা ৫০ পয়সা।

শেয়ারদরের পাশাপাশি প্রায় সব খাতেই লেনদেনও কমেছে

দর বৃদ্ধি তুলনামূলক বিচারে এদিন খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের প্রাধান্য ছিল সবচেয়ে বেশি। শীর্ষ দর বৃদ্ধির ১০টি কোম্পানির মধ্যে চারটি ছিল এ খাতের।

এই খাতের বিচ হ্যাচারির শেয়ার দর ৭.৯৬ শতাংশ, এপেক্স ফুডের শেয়ার দর ৬.৯৬ শতাংশ আর লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ারদর বেড়েছে ৫.৬৯ শতাংশ।

প্রকৌশল খাতের গোল্ডেনসনের শেয়ার দর বেড়েছে ৭.০৩ শতাংশ।

যতগুলো কোম্পানির দর বেড়েছে, তার মধ্যে ২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে ৪৬টি।

দর পতনের শীর্ষ ১০

দর পতনের দিক দিয়ে রোববার শীর্ষে ছিল বস্ত্র খাতের কোম্পানি আরগন ডেনিম, যার শেয়ার প্রতি দর হারিয়েছে ৯.৮২ শতাংশ।

গত জুলাই থেকে সেপ্টম্বর পর্যন্ত বস্ত্র খাতের যেসব কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন খারাপ এসেছে, এটি কার একটি, যেটি শেয়ারে ৫৭ পয়সা লোকসান দিয়েছে।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রিমিয়ার সিমেন্ট দর হারিয়েছে ৯.৮০ শতাংশ।

এদিন নয় শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়ে মোট তিনটি কোম্পানি। উপরে ‍দুটি ছাড়া আরও একটি ছিল বস্ত্র খাতের ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং, যার শেয়ার দর হারিয়েছে ৯.০৯ শতাংশ।

আট শতাংশের বেশি শেয়ার দর হারিয়েছে দুটি কোম্পানির, এমবি ফার্মা আর সাফকো স্পিনিং। এমবি ফার্মার শেয়ার দর হারিয়েছে ৮.৩০ শতাংশ আর সাফকো স্পিনিংয়ের দর কমেছে ৮.১৭ শতাংশ।

শাইনপুকুর সিরামিক ৭ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে। ৬ শতাংশের বেশি শেয়ার দর হারিয়েছে ৪টি কোম্পানি। এরমধ্যে আছে প্রকৌশল খাতের মীর আক্তার, যার দর কমেছে ৬.৬৯ শতাংশ। এমআই সিমেন্ট, প্যাসিফিক ডেনিম, তিতাস গ্যাসের দর কমেছে ৬.২৬ শতাংশ।

পাঁচ শতাংশের বেশি শেয়ার দর কমেছে ৭টি কোম্পানির। তিন থেকে চার শতাংশ পর্যন্ত দর কমেছে ৪৮টি কোম্পানি। আর দুই শতাংশ থেকে এক শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার দর কমেছে ১৩৬টি কোম্পানির।

এ বিভাগের আরো খবর