ধর্ষণের মামলা নিয়ে কামরুন্নাহারের বক্তব্য বিচার বিভাগের জন্য বিব্রতকর মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ওই বিচারককে কারণ দর্শাতে বলা হবে।
সচিবালয়ে রোববার নিজ কার্যালয়ে সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিচারকের (কামরুন্নাহার) পর্যবেক্ষেণ সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে আমাদের যে মৌলিক অধিকার, সেটার পরিপন্থি। তিনি যেটা বলেছেন, তার একটি ইমপ্লিকেশন আছে। এ কারণেই বিচার বিভাগের গার্ডিয়ান প্রধান বিচারপতিকে ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। এই বক্তব্য আমার মনে হয় বিজ্ঞ বিচারকদের জন্য বিব্রতকর। এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি ভুল নির্দেশনা।
‘এ জন্যই ব্যবস্থা নেয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সেটিও আইনানুগভাবে এগিয়ে যাবে। তাকে শোকজ করা হবে। তিনি কেন এটা বলেছেন, ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। সেটা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আদালতের রায়ের ব্যাপারে আমি কোনো বক্তব্য দেব না। এর কারণ হচ্ছে এই রায়ের পরে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করা যাবে। তারপর হাইকোর্ট বিভাগ রায় দিলে আপিল বিভাগে আপিল করা যাবে। এটা হচ্ছে বিচারিক কার্যক্রম। বিচারিক বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে পারব না।
‘প্রধান বিচারপতির চিঠি এখনও পাইনি। সকালে আমি শুনেছি মাননীয় প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন যে তিনি তার (বিচারক) বিচারিক ক্ষমতা বিজ্ঞ বিচারকের, সেটি তিনি নিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করছেন।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘একটা বাক্য আপনারা উল্লেখ করেন। আমি মনে করি এটা না করাটাই ভালো। সেটা হচ্ছে কেড়ে নেয়া। আইনে যে প্রভিশনস দেয়া আছে, সে অনুযায়ী সব হচ্ছে। মনে হচ্ছে যে জোর করে কেড়ে নেয়া। আসলে এটা জোর করে কেড়ে নেয়া নয়।
‘এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে প্রধান বিচারপতির এ ক্ষমতা আছে। তিনি বিচারককে কিছুদিনের জন্য বিচারকাজ থেকে সরিয়ে নিতে পারেন।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, ‘কথা হচ্ছে, এটা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন। বিজ্ঞ বিচারকগণ প্রত্যেক দিনই রায় দেন। কেউ সন্তুষ্ট হয়; কেউ অসন্তুষ্ট হন। যারা অসন্তুষ্ট হন, আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, আমাদের সংবিধান অনুযায়ী তারা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। রায় দেয়ার জন্য যেকোনো বিচারককে শাস্তি দেয়া হয়, তা নয়। রায় দেয়ার ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন।
‘কিন্তু এখানে যেটা হয়েছে, একজন বিজ্ঞ বিচারক তিনি ওপেন কোর্টে রায় দেয়ার সময় তার পর্যবেক্ষণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছেন যে ৭২ ঘণ্টা পরে কোনো ধর্ষণ মামলা না নিতে। এটাই আপত্তির জায়গা। কোনো ফৌজদারি অপরাধ মামলা করার ব্যাপারে তামাদি হয় না। মানে ইট ইজ নট পার্ট বাই লিমিটেশন।’
এ ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা মামলার ঘটনা উল্লেখ করেন তিনি।
রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই নারীকে ধর্ষণের আলোচিত মামলায় গত বৃহস্পতিবার পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেন ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক কামরুন্নাহার।
২০১৭ সালের ২৮ মার্চ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে অস্ত্রের মুখে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ৬ মে বনানী থানায় পাঁচজনের নামে মামলা হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে ঘটনার ৩৮ দিন পর ধর্ষণের মামলা করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারক কামরুন্নাহার।
তিনি বলেন, ৭২ ঘণ্টা পর মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না।
ওই সময়ের পর পুলিশকে কোনো ধর্ষণ মামলা না নিতেও পরামর্শ দেন তিনি।
ধর্ষণ মামলা নিয়ে বিচারকের এমন মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
বিচারকের বিবেচনা বোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে প্রতিক্রিয়া জানান। এর মধ্যেই কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।