পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। জাতীয় সংসদে আইন পাস করার মধ্য দিয়ে এটি ২০০৫ সালে কলেজ থেকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়। তবে প্রতিষ্ঠার ১৬ বছরেও উপ-উপাচার্যশূন্য রয়ে গেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি।
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জবিশিস) নির্বাচনি ইশতেহারে এ সম্পর্কিত ঘোষণা এবং সমিতির নতুন নেতৃত্ব আইন সংশোধনের বিষয়ে কথা বলার পর উপ-উপাচার্য পদ সৃজন এবং তাতে নিয়োগের বিষয়টি সামনে আসে। শিক্ষকরা তো বটেই, খোদ উপাচার্যও চান উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ হোক।
দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন করে উপ-উপাচার্য রয়েছেন। অথচ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এই পদে নিয়োগের বিধানই নেই। আইন সংশোধনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন থেকে প্রশাসনে দাবি জানালেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করছেন অনেক শিক্ষক ও কর্মকর্তা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা বলছেন, উপ-উপাচার্য পদ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়কে অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিকসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। উপ-উপাচার্য থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক জটিলতা দূর হবে, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমেও গতি আসবে। সে সঙ্গে সেশন জটসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সমস্যারও সমাধান হবে।
অভিযোগ আছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্যের কাজ কোষাধ্যক্ষকে দিয়ে করানো হয়। অথচ কোষাধ্যক্ষ আর উপ-উপাচার্যের আলাদা আলাদা কাজ রয়েছে। উপ-উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
জবিশিস নেতারা বলছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬৮৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। তাদের মধ্যে অধ্যাপক ১০৭ জন ও প্রথম গ্রেডের অধ্যাপক রয়েছেন ২৬ জন। ৩৬টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য পদ না থাকাটা অস্বাভাবিক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে আইন সংশোধন করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই উপ-উপাচার্য নিয়োগ দিতে পারে বলে দাবি তাদের।
জবির আর্থ অ্যান্ড লাইফ সায়েন্স অনুষদের সাবেক ডিন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, ‘অবশ্যই উপ-উপাচার্য নিয়োগ হওয়া দরকার। এই পদে দুজন দরকার। কারণ এটি একটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়।
‘আমি শিক্ষক সমিতির সভাপতি থাকাকালে ২০১৬ সালে প্রতিটি বিভাগের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নিয়ে রেজিস্ট্রার স্যারের কাছে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন থেকে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া হয়নি। তারা গড়িমসি করেছে।’
জবিশিস সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির আগের কমিটি উপ-উপাচার্য নিয়োগ ইস্যুতে কিছু কাজ করেছিল। আমরা সেই কপি নিয়ে আবার কাজ শুরু করব। আমরাও চাই উপ-উপাচার্য নিয়োগ হোক। এই পদে যাতে দু’জন নিয়োগ হয় সে চেষ্টা থাকবে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীল দলের (একাংশের) সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, ‘অবশ্যই উপ-উপাচার্যের প্রয়োজন আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে গতিশীলতা আনতে এই পদে নিয়োগের প্রয়োজন আছে। আর এই নিয়োগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই হোক। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এখনও দুজন উপ-উপাচার্য প্রয়োজন। আমাদের আইনও সংশোধন করা দরকার।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকও চান বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হোক। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষকরা দাবি করবেন এটাই স্বাভাবিক। কারণ তাদের লোক দরকার। কিন্তু আইন সংরক্ষণের যে কমিটি তারা তো এখনও সুপারিশই দেয়নি। তাহলে আমি কী করব। আমার কাজ এটা উপরে পাঠানো। অনেক সময়ই উপাচার্য চান না যে কেউ তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে এসে চেয়ারে বসে যাক, কিন্তু আমি চাই। উপ-উপাচার্য নিয়োগ হলে আমার কাজ কিছুটা কমে।’
সাবেক উপাচার্যের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের পক্ষ থেকেও উপ-উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানানো হয়। কিন্তু কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
তাৎপর্যের বিষয় হলো, জবির এক বছর পর যাত্রা শুরু করেও উপ-উপাচার্য পেয়ে গেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। ২০০৬ সালে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৬ এর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে কুবি। ২০১৩ সালে এই আইনের ১১ ধারা সংশোধন করে উপ-উপাচার্য পদ সৃষ্টি করা হয়। গত ৪ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সিন্ডিকেট সদস্য ড. মোহম্মদ হুমায়ুন কবিরকে কুবিতে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।