চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু থেকে লোহাগাড়া উপজেলার দূরত্ব ৫২ কিলোমিটার। পটিয়া বাইপাস সড়ক নির্মাণ হওয়ায় দূরত্ব কয়েক কিলোমিটার কমে গেছে। সেখানে ভাড়া বাড়ানোর আগ পর্যন্ত যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হতো ৮০ থেকে ৯০ টাকা।
নতুন তালিকা অনুযায়ী, ৫২ কিলোমিটারে সরকারনির্ধারিত ভাড়া হওয়ার কথা ৯৩ টাকা ৬০ পয়সা। অথচ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে এখন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। ‘ডাইরেক্ট গাড়ি’ তকমা দিয়ে ১৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় হচ্ছে।
লোহাগাড়ার বাসিন্দা আহমেদ মুছা বলেন, ‘আমরা পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। পরিবহন খাতের মাফিয়া চক্র লাগামছাড়া ভাড়া নির্ধারণ করছে। আমরাও তা দিয়ে যাচ্ছি। এসব বিষয়ে সরকারকে তদারকি করতে হবে।’
শুধু শাহ আমানত সেতু থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত নয়, এই সড়কে বিভিন্ন রুটে চলছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।
পটিয়ার বাসিন্দা কাউছার আহমেদ বলেন, ‘শাহ আমানত সেতু থেকে পটিয়া ২০ কিলোমিটার পথে ৩৫ টাকা ভাড়ার জায়গায় আগে ৬০ টাকা নেয়া হতো। এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। পরিবহনসংশ্লিষ্টরা খেয়ালখুশিমতো টাকা আদায় করছে। তাদের থামানো যাচ্ছে না।’
চালকরা বলছেন, তারা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন।
পটিয়া রুটে চলাচলকারী মায়ের দোয়া পরিবহনের চালক শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বেড়েছে। এটা অযৌক্তিক।
‘লিটারে ৫ টাকা করে বাড়ালে এত ভাড়া বাড়ত না। এখন আমরা বাধ্য হচ্ছি।’জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে গণপরিবহনে অযৌক্তিকভাবে ভাড়া বাড়ানোয় রাজধানীসহ সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।
যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহনচালক ও শ্রমিকদের বচসা, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে চারটি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
গত বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে দেয়া চিঠিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি এ প্রস্তাব পাঠায়। চিঠিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরী এবং দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার চিত্র তুলে ধরে সমিতি।
চট্টগ্রাম মহানগরীর বেশ কয়েকটি বাস রুটে বেশি ভাড়া আদায়ের চিত্র তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, শাহ আমানত সেতু থেকে পটিয়ায় ২০ কিলোমিটার পথে ৩৫ টাকা ভাড়ার জায়গায় আগে ৬০ টাকা নেয়া হতো। এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকা আদায় হচ্ছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এখন যাত্রীপ্রতি ৭০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নয়; সারা দেশের ২২০টি সড়কে অতিরিক্ত দূরত্ব দেখিয়ে অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
‘বাস ভাড়া নির্ধারণের আগে এক গন্তব্য থেকে অপর গন্তব্য কত কিলোমিটার, তা নির্ধারণ করতে হবে। সে অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ হবে। এখন এসবের কোনো বালাই নেই। সব ইচ্ছেমতো করা হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম মহানগর বাস মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, ‘সরকারনির্ধারিত ভাড়া নিতে বাসচালকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সমিতির পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ ভাড়ার চার্ট গাড়িতে লাগিয়ে দিয়েছে। যাত্রীদের চার্ট দেখে ভাড়া দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।’
বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একিমিত্র চাকমা বলেন, ‘যারাই বাড়তি ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের হয়রানি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। অভিযোগ পেলে সেখানে অভিযান চালাব।’
বিআরটিএর অভিযান
বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে গত বুধবার থেকে মাঠে রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), জেলা প্রশাসন ও মেট্রোপলিটন পুলিশ। পুনর্নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি টাকা নেয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার ৩৩৬টি বাসকে জরিমানা করেছে বিআরটিএ।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এই অভিযান পরিচালনা করেন।
বাড়তি ভাড়া আদায় ও পরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধে বিআরটিএ এবং অন্যান্য সংস্থার এই ভ্রাম্যমাণ আদালত ও তদারকি চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে কত দিন চলবে তা জানাতে পারেননি তারা।