জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৯টি বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) সার্ভিস চার্জ ২৩ শতাংশ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা)।
এ চার্জ ৪ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করার কথা। কনটেইনার ডিপোর সার্ভিস চার্জ বাড়ালে দেশের তৈরি পোশাক খাত নতুন করে সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা)।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে রপ্তানি পণ্যের ৯০ শতাংশ ডিপোর মাধ্যমে কনটেইনারে বোঝাই হয়। আর খাদ্যপণ্যসহ ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামানোর পর ডিপোতে নিয়ে খালাস করতে হয়। এর পরিমাণ মোট আমদানির ২১ শতাংশ। অর্থাৎ রপ্তানিতে ৯০ শতাংশ এবং আমদানিতে ২১ শতাংশ পণ্যে এ প্রভাব পড়বে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ১ থেকে ২৬ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯টি কনটেইনার ডিপো এই মাশুল আদায় করবে। তবে ডিপোগুলো বেশি ব্যবহার করেন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।
আমদানি পণ্য খালাস, রপ্তানি পণ্য কনটেইনার বোঝাই, চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার পরিবহন, কনটেইনার ওঠানো-নামানো এবং ওজন মাপার চার্জ বৃদ্ধি করেছে বিকডা। কনটেইনার ডিপো আরও ব্যবহার করেন আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, বিদেশি ক্রেতা এবং কনটেইনার মালিকপক্ষ।
আগের নিয়মে ২০ ফুট লম্বা কনটেইনার পরিবহন মাশুল ছিল ১ হাজার ১৫০ টাকা। ২৬৫ টাকা বাড়িয়ে তা করা হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ টাকা। ৪০ ফুটের কনটেইনার ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৮৩০ টাকা করা হয়েছে।
২০ ফুট কনটেইনারে ইমপোর্ট হ্যান্ডেলিং প্যাকেজ আগে ৭ হাজার ৯৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ৭৫৪ টাকা এবং ৪০ ফুটের ক্ষেত্রে ৯ হাজার ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১ হাজার ২৫৫ টাকা করা হয়েছে। এক্সপোর্ট স্টাফিং প্যাকেজ চার্জ ২০ ফুটের কনটেইনারে আগের ৪ হাজার ১৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার ৯২ টাকা এবং ৪০ ফুটের ক্ষেত্রে ৫ হাজার ৫২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ হাজার ৭৯০ টাকা করা হয়েছে।
লিফট অন-লিফট অফ এর ক্ষেত্রে ২০ ফুট এবং ৪০ ফুট কনটেইনার ৩৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভিজিএম চার্জে ২০ ফুট এবং ৪০ ফুট কনটেইনার ১ হাজার ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৪১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কনটেইনার ডিপোর চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে। কারণ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৮০ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে এ সিদ্ধান্তের কারণে।
পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার প্রভাব কাটিয়ে সবেমাত্র তৈরি পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। দেশে অন্য খরচ বেশি হলেও শ্রমিক খরচ কম বলে এখন পর্যাপ্ত কার্যাদেশ আসছে পোশাক খাতে। এখন বাড়তি চার্জ চাপিয়ে দেয়া হলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে যাব।’
তিনি বলেন, ‘কনটেইনার ডিপোগুলো যেন বাড়তি চার্জ না নেয়, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দেব। আর তা না হলে কনটেইনার ডিপো বাদ দিয়ে আমরা সরাসরি বন্দর থেকে পণ্য খালাস নেব। তবুও এত চার্জ বহন করতে পারব না।’বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘২৩ শতাংশ চার্জ বাড়ায় বিশেষ করে রপ্তানিকারকরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হবে। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। এ খাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত নতুন করে বিবেচনা করা প্রয়োজন।’
বিকডার সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, ‘ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে আইসিডিতে আর্থিক সংকট আরও বেড়েছে। পণ্যবাহী গাড়ি ও আইসিডির যন্ত্রপাতির জ্বালানি খরচ বাড়ছে। সব সমন্বয় করতে জ্বালানি সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। যে চার্জ বাড়ানো হয়েছে তা অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয় সমন্বয়ে ব্যয় হবে। এ ছাড়া আইসিডি কোনো ব্যয় বৃদ্ধি করেনি।’
২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল চার হাজার ১০০ কোটি ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের আয় ছিল তিন হাজার ৩৬৭ কোটি ডলার। এ হিসাবে ১৩.৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে চলতি অর্থবছরে। কনটেইনার ডিপোর বাড়তি চার্জের কারণে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় অর্জিত হবে কি না সেটা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।