ছাতার ছায়ায় বসে বড়শির শলায় দৃষ্টি অর্ধশতাধিক মানুষের। এর বাইরে কেউ কেউ ব্যস্ত মাছের খাবার বানাতে।
সপ্তাহের পাঁচ দিন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন এসব মানুষ। শুক্র-শনি এলেই তারা মজে যান মাছশিকারে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়া বাজার থেকে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ১০ জন বন্ধু গাড়ি নিয়ে আসেন গোমতী নদীতে। তাদের লক্ষ্য সারা দিন বড়শিতে মাছ ধরা।
বন্ধুদের একজন শহিদুল ইসলাম। সপ্তাহের ছয় দিন পেশাগত কাজে ব্যস্ত থাকেন। শুক্রবার এলেই ২৫ কিলোমিটার দূর থেকে গোমতীতে আসেন মাছ ধরতে।
শহিদ জানান, মাছ শিকার তার নেশা। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বড়শিতে তিনটি রুই মাছ পেয়েছেন।
আবদুর রহিম এসেছেন বরুড়া উপজেলা থেকে। দুটি কালিবাউশ ধরেছেন।
আবদুর রহিম পেশায় ব্যাংকার। শুক্র ও শনিবার সুযোগ পেলেই চলে আসেন গোমতী নদীতে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার এলে বাড়ি থেকে বড়শি, মাছ ধরার খাবার, ছাতা, গোসল করার সাবান ও গামছাসহ সব কিছু নিয়ে আসি। টিফিন বক্সে দুপুরের খাবার থাকে।
‘দুপুরে ও বিকেলে নদীর পাড়ে নামাজও পড়ি। সারা দিন একটা পিকনিক পিকনিক মুডে থাকি; খুব ভালো লাগে।’
সবচেয়ে বেশি মাছশিকারি আসেন আদর্শ সদর উপজেলার টিক্কারচর, ঝাকুনিপাড়া, গোলাবাড়ী থেকে। এ ছাড়াও বুড়িচং উপজেলার ভান্তি, বালিখাড়া, পূর্বহুড়া, গোবিন্দপুর এলাকা থেকেও মাছশিকারিরা আসেন বড়শি নিয়ে।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ঝাকুনিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, এখানে মাছশিকারিদের বড়শিতে প্রায়ই ৫ থেকে ৭ কেজি ওজনের রুই, কাতলা ওঠে। শিকারিদের সবাই শখের বশে এ কাজ করেন।
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গোমতীতে এহন তেমন মাছ পাওন যায় না। গেছে ১০-১৫ বছর আগেও বড় বড় বোয়াল, কালিবাউশ, আইড় মাছ পাওন যাইত। আমার মনে আছে ১৯৯৬/৯৭ সালের কথা।
‘আমি টিক্কারচর বিরিজের নিচে কনুই জাল দিয়া খেমাইতেছি। হাইনজালার (সন্ধ্যা) সময় আতকা জালডা টান পড়ছে। পরে জালডা টাইন্যা পাড়ো আনছি। ৯ কেজির একটা আইড় মাছ পাইছি।’
কথাগুলো বলতে বলতে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন সাইফুল।
এ বিষয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘গোমতী নদী নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করার পর আশা করি গোমতী তার হারানো সৌন্দর্য ফিরে পাবে।’