বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চবিতে সাপের ছড়াছড়ি, চিকিৎসাকেন্দ্রে নেই প্রতিষেধক

  •    
  • ১৩ নভেম্বর, ২০২১ ০৯:০৮

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিবছর শীতের শুরুতে ও বর্ষা ঋতুতে সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। এ সময় খাবারের সন্ধান ও উষ্ণতার জন্য লোকালয়ে চলে আসে সাপ। সম্প্রতি কাটা পাহাড়ের রাস্তায়, আবাসিক হল, অনুষদ ভবনে বেশ কিছু সাপের দেখা মেলায় অনেকে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

পাহাড়ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। ২ হাজার ১০০ একরের বিশাল ক্যাম্পাসে আবাসিক হল, অনুষদ ভবন ও রাস্তাগুলো পাহাড়ঘেঁষা হওয়ায় তাই প্রায়ই দেখা মেলে নানা প্রজাতির সাপ।

অথচ চবি চিকিৎসাকেন্দ্রে সাপের কামড়ে অসুস্থদের চিকিৎসায় নেই কোনো ব্যবস্থা। সাপের বিষের কোনো প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নেই এখানে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ সাপের কামড়ে অসুস্থ হলে তাকে পাঠানো হয় ২২ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক)।

সবশেষ গত বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে রাস্তায় হাঁটার সময় বিষধর সবুজ বোড়া সাপের কামড়ে অসুস্থ হন এক ছাত্র। এর আগে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের কক্ষ পরিষ্কার করতে গিয়ে ঘরগিন্নি নামে সাপের কামড়ে আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের এক কর্মচারী।

দুজনকেই চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিবছর শীতের শুরুতে ও বর্ষা ঋতুতে সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। এ সময় খাবারের সন্ধান ও উষ্ণতার জন্য লোকালয়ে চলে আসে সাপ। সম্প্রতি কাটা পাহাড়ের রাস্তায়, আবাসিক হল, অনুষদ ভবনে বেশ কিছু সাপের দেখা মেলায় অনেকে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ও ভেনম রিসার্চ সেন্টারের শিক্ষানবিশ গবেষক রফিকুল ইসলামের দেয়া তথ্যানুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২২টির মতো সাপ জীবিত উদ্ধার করে সেগুলোকে অবমুক্ত করা হয়েছে। উদ্ধার করা সাপের অর্ধেক ছিল বিষধর।

বিষধর সাপের তালিকায় রয়েছে পদ্মগোখরা (Monocled Cobra), শঙ্খিনী (Banded Krait), সবুজ বোড়া (Green Pit Viper) ও বড় কাল কেউটে (Greater Black Krait)। এ ছাড়া ২০১৮-২০২১ সালের মধ্যে মৃত তিনটি কিং কোবরা উদ্ধার করা হয়েছে ক্যাম্পাস থেকে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, ক্যাম্পাসে প্রায় ৩৬ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এর মধ্যে ধোড়া সাপ (Checkered Keelback) সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বিষধর সাপ রয়েছে আট প্রজাতির। এর মধ্যে শঙ্খিনী বেশি দেখা যায়।

গত মাসের ২৮ অক্টোবর চবির নির্মাণাধীন কলা অনুষদ ভবনে শঙ্খিনীর দেখা মেলে। শ্রমিকরা সাপটি দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লে রফিকুল তার দল নিয়ে সাপটি উদ্ধার করেন।

৩৬ প্রজাতির সাপের আবাসস্থল হলেও চিকিৎসাকেন্দ্রে কোনো প্রতিষেধক না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আলাওল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শিফু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন এক কর্মচারীকে কামড় দিলে আমরা ভেবেছিলাম, এটা বিষাক্ত সাপ। আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে চবি মেডিক্যালে নিয়ে যাই।

‘মেডিক্যালে গেলে কোনো সার্ভিস না দিয়েই তাকে অ্যাম্বুলেন্সে চমেকে পাঠিয়ে দেয়। কাউকে সাপে কাটলে অ্যান্টিভেনম লাগতে পারে। মেডিক্যালে নাপা ও গ্যাসের ট্যাবলেট ছাড়া ত কিছুই নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু আমাদের ক্যাম্পাসে সাপের উপদ্রব বেশি। এখানে বিষাক্ত সাপও আছে। কাউকে যদি বিষাক্ত সাপে কামড় দেয় দ্রুত তাকে হাতপাতালে নিতে হয়।

‘এ ক্ষেত্রে দূরে কোথাও নিলে সময়ক্ষেপণ হয়। আমাদের মেডিক্যালে এক ডোজ হলেও অ্যান্টিভেনম রাখা দরকার। কর্তৃপক্ষ চাইলে আমাদের মেডিক্যালকে উন্নত করতে পারে।’

এ বিষয়ে চবি মেডিক্যাল সেন্টারের প্রধান কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাপে কামড়ের ট্রিটমেন্ট শুধু চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে দেয়া হয়। অ্যান্টিভেনম এর বাইরে কোথাও দেয়া হয় না; অ্যালাও না।

‘এটার অন্য সাইড ইফেক্ট আছে, সেটাও মনিটর করতে হয়। অ্যান্টিভেনম দিতে হলে আলাদা ব্যাক-আপ ইউনিট (আইসিইউ/সিসিইউ) লাগবে, কারণ যেকোনো সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী পিলু জানান, শীতকালে নিদ্রায় যায় সাপ, এ জন্য তারা দুই মাসের জন্য একটা আশ্রয় খোঁজে। এই কারণে শীতকালের শুরুতে বা আগে লোকালয়ে সাপ বেশি দেখা যায়।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে কিং কোবরা মাঝে মাঝে দেখা যায়। শঙ্খিনী প্রায় সময় পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে ৭-৮ প্রজাতির বিষধর সাপ পাওয়া যায়।

‘প্রতিবছর ক্যাম্পাসে গড়ে একজন করে বিষাক্ত সাপের কামড়ে অসুস্থ হয় বলে শোনা যায়। সাপে কামড়ের পরবর্তী সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ১ ঘণ্টার মধ্যে তাকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।’

চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাপের কামড়ে অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য যে এন্টিভেনম ও লাইফ সেভিং ড্রাগ প্রয়োগ করা হয়, সেটির জন্য ডাক্তারদের বিশেষ প্রশিক্ষণের দরকার হয়। প্রধানমন্ত্রী আমাদের (স্নেক বাইট ক্লিনিক, চমেক) নির্দেশ দিয়েছেন প্রত্যেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য।

‘আশা করছি, দু-তিন বছরের মধ্যে সবার প্রশিক্ষণ হয়ে গেলে আমাদের মেডিক্যাল সেন্টারেও সাপে কামড়ের চিকিৎসা পাওয়া যাবে।’

ভেনম রিসার্চ সেন্টারের শিক্ষানবিশ গবেষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাপকে বিরক্ত না করলে সে কামড় দেয় না। ক্যাম্পাসের কোথায়ও সাপ পাওয়া গেলে আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের কল দিলেই আমরা উদ্ধার করে আনি।

‘ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে সাপের উপদ্রব কমে আসে। এ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। কার্বলিক অ্যাসিডের বিষয়টিও বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য নয়।’

এ বিভাগের আরো খবর