বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পর্যটক খরা কাটাতে আঞ্চলিক পর্যটনে জোর

  •    
  • ১৩ নভেম্বর, ২০২১ ০৮:১৫

প্রতিবছর বৌদ্ধ অধ্যুষিত নানা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আনাগোনা হয় নেপাল, ভারত ও মিয়ানমারে। বাংলাদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ নির্দশন আছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, ময়নামতি এবং উয়ারি বটেশ্বর। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কিত প্রত্নস্থান আছে অন্তত ৫০০টি।

এক সময় বিদেশি পর্যটক বললেই সামনে ভাসত কোনো ইউরোপীয় বা আমেরিকানের চেহারা। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। এখন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পর্যটক বেড়াতে বের হন মধ্য এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে উপরে রয়েছে চীন ও জাপান। এই দেশগুলোর মানুষের পর্যটনের বড় একটি কারণ ধর্মীয়।

মধ্য এশিয়া ও দূর প্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশই মূলত বৌদ্ধ অধ্যুষিত। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বৌদ্ধ ধর্মের নানা নিদর্শন। কারণ বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তি এই অঞ্চলের নেপালে, যেখানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের জন্ম।

খ্রিষ্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দে তৎকালীন লুম্বিনি কাননে (নেপাল) জন্ম নেন গৌতম বুদ্ধ। তিনি তার জীবদ্দশায় প্রায় ৪৫ বছর দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের প্রচার চালান। জনশ্রুতি রয়েছে, তিনি এখনকার নওগাঁ জেলার পাহাড়পুর বিহারেও কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন। এ কারণে এটি বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবে সুপরিচিত।

প্রতিবছরই বৌদ্ধ অধ্যুষিত নানা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আনাগোনা হয় নেপাল, ভারত ও মিয়ানমারে। বাংলাদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ নির্দশন আছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, ময়নামতি এবং উয়ারি বটেশ্বর। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কিত প্রত্নস্থান আছে অন্তত ৫০০টি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার কারণে পশ্চিমা পর্যটকরা খুব সহসাই এশিয়ামুখী হবে, এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তাই বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকের চাহিদার যোগান আসতে পারে এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে।

পর্যটন বিষয়ক পত্রিকা বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক ও পর্যটন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এশিয়ার দেশগুলো এখন ভালো টার্গেট হতে পারে। জাপান, কোরিয়া, হংকং, চায়না খুব ভালো মার্কেট বুদ্ধিস্ট ট্যুরিজমের জন্য। এখন ইউরোপ আমেরিকার খুব বেশি পর্যটক আমরা আশা করতে পারব না। আমাদের এখন আঞ্চলিক পর্যটনকে প্রাধান্য দিতে হবে।

‘ছোট ছোট গন্তব্যগুলোতে মানুষ বেশি ট্রাভেল করবে। সে হিসেবে ভারতও ভালো বাজার হতে পারে। এ সব জায়গায় যদি আমরা ইফেকটিভ প্রোমোশন করতে পারি, মার্কেটিং করতে পারি, তাহলে এটা দীর্ঘ মেয়াদে খুব ভালো ফল দেবে।’

২০১৫ সালে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পর্যটকদের বিষয়টিকে মাথায় রেখেই ঢাকায় আয়োজন করা হয়েছিলো বুদ্ধিস্ট কনফারেন্স। আশা করা হয়েছিল, এর ফলে বছরে ১০ লাখের বেশি পর্যটক পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু এর সুফল খুব একটা মেলেনি। সম্প্রতি বিষয়টিকে এগিয়ে নিতে নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এ সংক্রান্ত একটি এমওইউ (সমঝোতা) সই করেছে বাংলাদেশ।

পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বুদ্ধিস্ট সার্কিট ট্যুরিজমের বিষয়ে আমরা অনেকগুলো দেশের সাথে এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) করছি। এরই মধ্যে নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সাথে আমরা এমওইউ করেছি। আমাদের এখানে কিন্তু ইসলাম ধর্ম বা বৌদ্ধ ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম সব কিছুই বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

‘বুদ্ধিস্ট সার্কিটের মাধ্যমে পর্যটনের একটি বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, মিয়ানমার – এই যে একটি সার্কিট, এখানে কিন্তু সব দেশগুলোর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে পর্যটন খাতকে উন্নত করার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য কালচারও এখানে আছে, অন্যান্য যে ধর্মগুলো রয়েছে সেগুলোকে ফোকাস করেও কিন্তু আমরা বিদেশি পর্যটক আনতে পারি।’

সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও টোয়াবের হিসেবে স্বাভাবিক সময়ে প্রতি বছর দেশে গড়ে বিদেশি পর্যটক আসে ৫ লাখের মতো। এর বাইরেও বছর জুড়ে দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে আনাগোনা থাকে ৬০ থেকে ৭০ লাখ অভ্যন্তরীণ পর্যটকের।

অবশ্য শুধু সমঝোতা সই করলেই পর্যটক পাওয়া যাবে না বলে মত পর্যটন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলমের। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বুদ্ধিস্ট ট্যুরিজমের বিকাশের একটি বড় সুযোগ আছে, কারণ এখানে অনেকগুলো রেলিক্স (প্রত্ননিদর্শন) আছে। বুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত যে জায়গাগুলো রয়েছে, সেগুলোকে যদি ঠিকভাবে সামনে আনা যায়, তাহলে বিপুল পর্যটক পাওয়া যাবে। বুদ্ধিস্ট কমিউনিটি কিন্তু ছোট না।

‘দূরপ্রাচ্যের দেশ যদি ধরি, তাহলে জাপান, কোরিয়া, চীন, বার্মা, থাইল্যান্ডের প্রচুর পর্যটক আছে। অনেক দিন ধরে এটা বলা হচ্ছে, বুদ্ধিস্ট কনফারেন্সও করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এখানে কোনো কিছুরই তো ফলোআপ হয় না। কোনো জিনিসের কন্টিউনিটি না থাকলে কাজ হয় না।’

তিনি বলেন, ‘শুধু এমওইউ করে লাভ হবে না। বাংলাদেশের সাথে বহু দেশেরই এমওইউ করা আছে, কিন্তু এতে কোনো কাজ হবে না। কাজ করতে গেলে মাঠে আসতে হবে।

‘ঘরে বসে এমওইউ সাইন করলাম আর কাজ হয়ে যাবে, বিষয়টি তো এমন নয়। মাঠে নামতে হবে, যার যা দায়িত্ব সেটা পালন করতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর