প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ফ্রান্স এবার বিরল সম্মান দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহা। আর সরকারপ্রধানের এবারের ফ্রান্স সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্যারিস সফরকালীন আবাসস্থল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এবার প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফর ঐতিহাসিক। এই সফরে তিনি যে সম্মান পেয়েছেন তেমনটা আগে বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান পাননি।’
ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহা, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন।
ফ্রান্স সফরে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন কর্মসূচি, দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে সম্মান দেয়া হয়েছে তা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তা-ও উঠে আসে ব্রিফিংয়ে।
ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে ফ্রান্সে যে সম্মান দেখানো হয়েছে তা সত্যিই বিরল। এ থেকে বোঝা যায় যে ফ্রান্স আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরো উন্নত ও গভীরতর করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সেক্টরে তারা আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে অত্যন্ত আগ্রহী।’
তিনি বলেন, সফরে প্রধানমন্ত্রী অফিসিয়াল কর্মসূচিতে যেখানেই গেছেন সেখানে তাকে সশস্ত্র সালাম ও লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ তালহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের মধ্য দিয়ে ইউনেস্কোতেও বাংলাদেশের অবস্থান ও মর্যাদা অনেক উঁচুতে উন্নীত হয়েছে। সারা বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবছে। একইসঙ্গে তারা সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছে।’
প্যারিসে বাংলাদেশের দূত বলেন, ‘বিশ্ব পর্যায়ে একটা সময়ে ধারণা ছিল যে বাংলাদেশ দারিদ্র্যপীড়িত। সেই ইমেজ সংকট কেটে গেছে। বাংলাদেশ যে উদীয়মান সম্ভাবনাময় একটি দেশ সে বিষয়টি এখন অনেকের কাছেই স্পষ্ট।’
বিভিন্ন দেশকে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ‘আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ হচ্ছি, নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছি। আমরা অনেক দেশকে টেকনিক্যাল সহায়তা দেয়া শুরু করেছি।’
অন্য দেশকে সহায়তা করতে একটা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির পরিকল্পনা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘এটাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া যায় কিনা… বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসিসটেন্স প্রোগ্রাম এরকম কিছু। অন্য অনেক দেশে যেভাবে আছে।’
প্যারিস সফরকালে প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন কর্মসূচির বাইরে ইউনেস্কো এবং প্যারিস পিস ফোরামের কর্মসূচিতে অংশ নেন।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ও লন্ডন সফর শেষে ৯ নভেম্বর স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে প্যারিসে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৬) যোগ দিতে ৩১ অক্টোবর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে আসেন। সেখানে অবস্থানকালে তিনি সম্মেলনের মূল পর্বে অংশগ্রহণ ছাড়াও সাইডলাইনে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন।
গ্লাসগোতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটেনের রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লসসহ বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন সংস্থা প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
৩ নভেম্বর লন্ডন আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১: বিল্ডিং সাসটেইনেবল গ্রোথ পার্টনারশিপ’ শীর্ষক রোড-শো উদ্বোধন ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি।
শনিবার স্থানীয় সময় বিকেলে প্যারিস থেকে ঢাকার পথে রওনা হবেন শেখ হাসিনা। রোববার সকালে তার দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।