সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ইস্যুতে দেয়া একটি বক্তব্যের জেরে নিজ নির্বাচনি এলাকাতেই ক্ষোভের মুখে পড়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকা থেকে শুক্রবার বিকেলে তার বিরুদ্ধে ধিক্কার মিছিল বের করে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। মিছিল শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশ করে সংগঠনটি। সেখানে মন্ত্রিসভা থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সিলেট নগর ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসনের সাংসদ। গত নির্বাচনে এই আসন থেকে বিজয়ী হন তিনি। এর আগে তার বড় ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত এই আসনের সাংসদ ছিলেন।
দুর্গাপূজায় সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা।
নানুয়ার দিঘির পাড়ের ওই মণ্ডপসহ নগরীর বেশ কিছু মণ্ডপে ভাঙচুর চলে। পরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।
এ নিয়ে দেশজুড়ে যখন প্রতিবাদ চলে, তখন বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা নিয়ে কিছু অতি উৎসাহী গণমাধ্যম বানোয়াট গল্প রটাচ্ছে। নোয়াখালীতে হামলার ঘটনায় যে দুজন হিন্দু মারা গেছেন, তাদের একজনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এবং অন্যজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন। কিছু অতি উৎসাহী গণমাধ্যম ও ব্যক্তিরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মৃত্যু নিয়ে গল্প ছড়াচ্ছে।’
তার এই বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যায়িত করে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেটে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সদস্যরা।
সংগঠনের সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসের ভিত্তিতে মিথ্যাচার করেছেন? পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য আমাদের আঘাত দিয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই অসাম্প্রদায়িক সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন জানিয়ে তাকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন বক্তারা।
তারা আরও বলেন, কুমিল্লার পর নোয়াখালী, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপ, মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা, হত্যাকাণ্ড ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসব তাণ্ডব নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন মিথ্যাচার করেছেন। এতে করে সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের উসকে দিচ্ছেন সরকারের দায়িত্বশীল এই মন্ত্রী।