রোহিঙ্গা সংকটে সৃষ্ট ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আঞ্চলিক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিগগিরই রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
প্যারিসের লা ভিলেটের গ্র্যান্ড হলে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় প্যারিস পিস ফোরামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, “শিগগিরই রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে বিশ্বকে গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে হবে। অন্যথায় এই সংকটের ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ আমাদের সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা ইতিমধ্যে সেই লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি।”
মানবিক দিক বিবেচনা করে জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের সাময়িক আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকে বড় ধরনের আঞ্চলিক সংঘাত এড়াতে সহায়তা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সীমান্তে আটকে থাকা হাজার হাজার অভিবাসীর প্রশ্নের জবাব খুঁজে বের করা দরকার। আমাদের অবশ্যই জাতি, বর্ণ এবং জাতিগত বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে।
‘আমাদের নারী এবং মেয়েদের কাঁচের দেয়াল ভাঙার অনুমতি দিতে হবে। সবার জন্য উপযুক্ত কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে। অবশ্যই আমাদের কথা এবং কাজের মিল থাকতে হবে।’
বিশ্ব শান্তি প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সারা বিশ্বে শান্তি হলো আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় নিশ্চয়তা। আমরা সংঘাতের পথ এড়িয়ে চলি এবং বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।’
এ ক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সীমান্ত ও সমুদ্র বিরোধ নিরসনের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শূন্য সহিষ্ণুতা নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশের মাটি অন্য যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দিই না।’
বিশ্বকে অস্ত্র প্রতিযোগিতা পরিহার করে সম্পদকে শান্তি ও টেকসই উন্নয়নে ব্যবহার করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব এখনও অনেক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্যে রয়েছে। পুরোনো ও নতুন সংঘাতগুলোর শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ী সমাধানে আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে।’
কোভিড-১৯ মহামারিতে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ‘ত্রুটি রেখাগুলো’ বেরিয়ে এসেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে এবং সেই ফাঁকগুলো বন্ধ করতে হবে।’
সবার জন্য করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার সুবিধা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করা ছাড়া লাখ লাখ মানুষকে সুরক্ষিত করা সম্ভব না।’
মানুষের জীবন-জীবিকা এবং বাড়িঘর বাঁচাতে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়াতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্যারিস পিস ফোরামের প্রেসিডেন্ট প্যাসকেল ল্যামি।