তিন বছর আগে জমি অধিগ্রহণ করা হলেও এখনও শেষ হয়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ। প্রাচীর না থাকায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় এখনও রয়েছে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গরু ও হাঁস-মুরগির খামার। নতুন ক্যাম্পাসেও রয়েছে শতাধিক পুকুর। সেখানেও মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালীরা।
দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাস অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকলেও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে আরও প্রায় এক বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহণ এবং উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ২০০ একর জমির সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ইতোমধ্যে প্রাচীর নির্মাণের জন্য সামগ্রী নিয়ে যাওয়া শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শ্রমিকদের থাকার জন্য অস্থায়ী ছাউনির নির্মাণও শেষ হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রী বুয়েট থেকে টেস্টের পরই কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের এক বছরের চুক্তি হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে হয়তো সময়ের একটু এদিকসেদিক হতে পারে। যেহেতু প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়াল তুলবে, ইতোমধ্যে তারা মালামাল নিয়ে যাওয়া শুরু করেছে। আমরা সেগুলো বুয়েটে টেস্টের জন্য পাঠাব। কোয়ালিটি চেক করে তারপর কাজ শুরু হবে। এখন তারা দেয়াল তোলার জন্য লেভেল স্থাপনের কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু ওটা বন্যা কবলিত এলাকা, তাই আমরা মাটি ভরাটের জন্য লেভেল ঠিক রাখার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। পাশের যে পাকা রাস্তাগুলো আছে সেটি থেকে দুই ফুট উঁচুতে আমরা মাটি ভরাট করব। এর উপরে আবার বিল্ডিংয়ের যে গ্রাউন্ড শেড থাকে সেটা হবে।’
কিংডম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুসরত বলেন, ‘ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। মালামাল সব চলে গেছে, মোবিলাইজেশন হয়ে গেছে। মালামাল টেস্টেও চলে গেছে, টেস্ট রিপোর্ট হয়ে আসলেই ওখানে কাজ শুরু হবে। এখন পাইল কাস্টিং শুরু হবে। লেবার শেড, লেবার যাওয়া, মোবিলাইজেশন সবকিছুই শেষ।’
কাজ শেষ করতে কতদিন লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বছরখানেক লাগবে অর্থাৎ ১২ মাসের মতো সময় লাগবে। এর মধ্যে সময়ে একটু কমবেশি হতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময়ে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের কানে এসেছে। সীমানাপ্রাচীরটা হয়ে গেলে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিছুটা হলেও ভালো হবে। আর নতুন ক্যাম্পাসে আমাদের একটা পুলিশ ফাঁড়ি করার পরিকল্পনা করছি। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফাইলও পাঁঠিয়েছি।’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘এক বছর সময় লাগলে লাগুক। এর আগে আমরা খেলার মাঠটা করে ফেলব। আর মাস্টারপ্ল্যানের কাজ চলছে, দ্রুতই হয়ে যাবে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে অধিকৃত ২০০ একর জমিতে প্রায় পৌনে পাঁচ হাজার মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য ৩০ কোটি টাকার ই-টেন্ডার ছাড়া হয়েছিল।
কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ একরের নতুন ক্যাম্পাসে ১৩টি হল ও নয়টি অনুষদ ভবন ছাড়াও উপাচার্য ভবন, আবাসিক ও কোষাধ্যক্ষ ভবন, লেক খনন, ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা, পানি, ইলেকট্রিসিটি ও ওয়াল তৈরি হবে।
পরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে নতুন ক্যাম্পাসে একাধিক অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হল, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসা কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, সুইমিং পুল, মসজিদ এবং পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে।