বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ১৪ নভেম্বরের মধ্যে আসামিপক্ষকে যুক্তিতর্ক শেষ করার আদেশ দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ আদেশ দেন।
তিনি নির্দেশনা দেন, রোববার আসামি মুজাহিদুর রহমানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মধ্যে দিয়ে আলোচিত এই মামলার যুক্তিতর্ক শেষ করতে হবে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঁঞা।
আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর রাষ্ট্রপক্ষকে মামলার সার্বিক ঘটনার ওপর ফের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় দেয়া হবে। আসামিপক্ষ চাইলে তাদের বাদপড়া যুক্তি উপস্থাপনের জন্য সংক্ষিপ্ত সময় পাবে। উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ঠিক করবে আদালত।
এই মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ২৫ আসামির মধ্যে ২৪ জনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। কারাগারে আটক থাকা ২২ আসামির উপস্থিতিতে যুক্তি উপস্থাপন চলছে।
বৃহস্পতিবার আদালতে ২২ আসামির উপস্থিতিতে অনিক সরকারের পক্ষে তার আইনজীবী মাহবুব হোসেন যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন।
২৪ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় পলাতক তিন আসামিসহ ২৫ জনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন। এর পরদিন ২৫ অক্টোবর থেকে এই মামলার আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়।
এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও ৪৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার অংশ পড়ে শোনান।
এ সময় বিচারক তাদের প্রশ্ন করেন, আপনারা দোষী না নির্দোষ?
উত্তরে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান। পরে আদালত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের তারিখ ঠিক করেন।
৮ সেপ্টেম্বর আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য তারিখ ঠিক ছিল। তবে রাষ্ট্রপক্ষ ফের অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আবেদন করেন। এরপর আদালত আবেদন অনুমোদন করে আসামিদের বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ গঠনের শুনানি করতে সুযোগ দেয়।
৫ অক্টোবর এ মামলার বাদী ও আবরার ফাহাদের পিতা বরকত উল্লাহ আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ফেসবুকে দেয়া একটি স্ট্যাটাসের দেওয়ার জেরে আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। ওইদিনই রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে চকবাজার থানার পুলিশ।
৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।
ওই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান।
অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন ও তদন্তে প্রাপ্ত আরও ছয়জন রয়েছেন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জন এবং এজাহারবহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন।
গ্রেপ্তাররা হলেন মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু।
মামলার তিন আসামি এখনও পলাতক।
এরা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এদের মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত ও শেষের জন এজাহারবহির্ভূত আসামি।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলায় মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।