দেশে বর্তমানে এক কোটির বেশি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অথচ আক্রান্তদের অর্ধেকই বিষয়টি জানে না।
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দৈনিক সমকাল কার্যালয়ে ‘ডায়াবেটিস চিকিৎসা: বর্তমান ও আগামীর ভাবনা’ শীর্ষক এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'দেশে নিবন্ধিতদের বাইরেও বহু ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে। এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দুঃখের বিষয়, সচেতনতার অভাবে ৫০ শতাংশই চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে।'
জাহিদ মালেক একটি জরিপের উল্লেখ করে বলেন, ‘আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ১২ ভাগের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অনেকে আবার অর্থাভাবে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে যান না। একটি বিষয় সবার জানা থাকা দরকার, শহর বা গ্রামের প্রতিটি হাসপাতাল থেকেই এখন বিনামূল্যে ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা সেবা ও প্রায় সব ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। ইনসুলিনও বিনামূল্যে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের কারণে দেশের অন্তত ৬১ ভাগ মানুষ কোনও না কোনওভাবে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। এর মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের পাশাপাশি শহরেও অনেকেই ডায়াবেটিস নিয়ে তেমন একটা সচেতন নয়।’
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক রোবেদ আমিন। তিনি বলেন, দেশে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৩৫টি উপজেলায় বিনামূল্যে এই দুটি রোগের ওষুধ সরবরাহ শুরু করছে। এখন থেকে এসব উপজেলায় এই রোগের ওষুধ পাওয়া যাবে। এটা আমরা আরও বাড়াবো।
রোবেদ আমিন বলেন, একটা সময়ে মানুষের মধ্যে খাবার নিয়ে সচেতনতা ছিল না। ভালো খাবার পেলে পেটভরে খেতো। শারীরিক ব্যায়াম, হাঁটাচলা কিছুই করতো না। এ জন্য অনেকে অকালে মারা যেতো। বর্তমান সময়ে দেশে মোট মৃত্যুর ৬০ শতাংশই ডায়াবেটিসসহ অসংক্রামক নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।
এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এক-তৃতীয়াংশ মৃত্যু কমিয়ে আনতে হবে। এ জন্য দরকার নন-কমিউনিকেবল ডিজিজে মৃত্যু কমিয়ে আনা। সে ক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন করতে হবে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম বাড়াতে হবে।
দৈনিক কমপক্ষে আধ ঘণ্টা হাঁটতে হবে। খাদ্যতালিকা থেকে মিষ্টিজাতীয় খাবার পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। শর্করা ও মাংসজাতীয় খাবার পরিমিত খেতে হবে। শাক-সবজিসহ আঁশযুক্ত খাবার খাদ্য তালিকায় বেশি রাখতে হবে।
সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস শতকরা ৭০ ভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ জন্য সুষম খাবার গ্রহণ, অতিমাত্রায় কোমল পানীয় ও ফাস্টফুড পরিহার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান।
আরও বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন, সমকাল পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আহমেদুল কবীর, বাডাস মহাসচিব সায়েফ উদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর ফয়েজ উদ্দিনসহ অন্যান্য চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।