বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খালাস পেয়ে আসামিরা বললেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’

  •    
  • ১১ নভেম্বর, ২০২১ ১৯:৪২

আসামিরা বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মামলা সাজানো হয়েছিল।’ বিচারক বলেন, সাফাতের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী পিয়াসার প্ররোচনায় বাদী ঘটনার ৩৮ দিন পর মামলাটি করেন। ‘ঘটনার মূল দুই সাক্ষী নাজিয়া, পিয়াসা সাক্ষী দিতে আসেন নাই। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাক্তার সোহেল মাহমুদ সাক্ষী দিতে এসে বলেছেন যে, তারা রেগুলার শারীরিক সম্পর্ক পারফর্ম করেন। এ ছাড়া তাদের দেহের গঠন, অবয়ব দেখলে মনে হয় তারা শারীরিক সম্পর্কে অভ্যস্ত,’ যোগ করেন বিচারক।

খালাসের রায় শোনার পর আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা আসামিরা বিচারককে সালাম দিয়ে বলেন আলহামদুলিল্লাহ।

আসামিরা বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মামলা সাজানো হয়েছিল।’

‘মামলায় ২০-২২ বছরের দুই তরুণী ২২ ধারার জবানবন্দিতে স্বীকার করেছিলেন যে, ঘটনার দিন রাত পৌনে তিনটা থেকে তারা দুই আসামির সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন। এতে করে প্রমাণ হয় যে, তারা কোনো ধর্ষণের শিকার হন নাই।’

বিচারক জানান, দুই তরুণী জবানবন্দিতে স্বীকার করেছিলেন যে, তারা ঘটনার দিন রাত পৌনে তিনটা থেকে দুই আসামির সঙ্গে রেইনট্রি হোটেল কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। এতে করে প্রমাণ হয় যে, তারা কোনো ধর্ষণের শিকার হন নাই। ফাইল ছবি

বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার প্রকাশ্য আদালতে বেলা ১টার দিকে রেইনট্রি হোটেলে ছাত্রী ধর্ষণ মামলার নথিপত্রের আলোকে রায়ের সূচিমুখে পর্যবেক্ষণ করার সময় এসব কথা বলেন।

বিচারক বলেন, ‘সাফাতের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী পিয়াসার প্ররোচনায় বাদী ঘটনার ৩৮ দিন পর মামলাটি করেন।’

বিচারক আরও বলেন, ‘এই মামলাকে আপনারা আলোচিত মামলা বললেও আমি একজন বিচারক হিসেবে সব মামলা আমার কাছে সমান। তাই আমি একজন বিচারক হিসেবে এই মামলার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে, ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি।

বিচারক বলেন, ‘সাফাতের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী পিয়াসার প্ররোচনায় বাদী ঘটনার ৩৮ দিন পর মামলাটি করেন।’ ফাইল ছবি

‘ঘটনার মূল দুই সাক্ষী নাজিয়া, পিয়াসা সাক্ষী দিতে আসেন নাই। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাক্তার সোহেল মাহমুদ সাক্ষী দিতে এসে বলেছেন যে, তারা রেগুলার শারীরিক সম্পর্ক পারফর্ম করেন। এ ছাড়া তাদের দেহের গঠন, অবয়ব দেখলে মনে হয় তারা শারীরিক সম্পর্কে অভ্যস্ত,’ যোগ করেন বিচারক।

‘ওই দুই তরুণী তাদের অন্য ব্যক্তির সঙ্গে রিলেশনের কথা ডাক্তার সোহেল মাহমুদের কাছে স্বীকার করেন। যদিও তারা প্রথমে নিজেদের ভার্জিন দাবি করেন, কিন্তু পরে তারা বলেন যেহেতু আমরা অবিবাহিত তাই এ কথা বলেছি। তবে আমাদের প্রেমিকের সঙ্গে আমরা চার-পাঁচবার শারীরিক সম্পর্ক করেছি।

আবার তারা ঘটনার ৩৮ দিন পর মামলা করতে এসে বলেন যে, তারা ভয়ে মামলা করতে আসেননি। মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ৩৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন একটি লংকামিজ আলামত হিসেবে জব্দ করেছেন যাতে বীর্যের দাগ পাওয়া গেছে।

‘১ নম্বর ভিকটিমের সঙ্গে একজন ইংরেজের (ব্রিটিশ) শারীরিক সম্পর্ক ও প্রেম রয়েছে। যেসব কথা মামলার ২২ ধারার জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন।’

রেইনট্রি হোটেলের দুজন কর্মচারী তাদের সাক্ষীতে বলেছেন যে ওইদিন তারা ডিউটিতে ছিলেন কিন্তু এই ধর্ষণের ঘটনার কথা পুলিশ আসায় তারা ওই সময় জেনেছেন।

সাফাতসহ চার আসামি তাদের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে বলেছেন যে, তারা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মদ খেয়ে সবাই মিলে নাচগান করছিল, তবে জোর করে কাউকে ধর্ষণ করা হয়নি। সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী তার জবানবন্দিতে বলেন যে, হোটেল কক্ষে দুই তরুণীকে সাফাত-নাইমের সঙ্গে শুয়ে থাকতে দেখেন।

বিচারক বলেন, ‘একসঙ্গে মদ খেলেন নাচ-গান করলেন আবার স্বেচ্ছায় শয্যাসঙ্গী হলেন, উত্তেজনাবশত শারীরিক সম্পর্ক করলেন, তাহলে জোর করে ধর্ষণ কীভাবে হলো?’

বিচারক আরও বলেন, ‘আসামিদের নির্যাতন করে জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। ক্রসফায়ার দেয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আসামিরা ৩৪২ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার সময় বলেছেন যে তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে, পুরুষাঙ্গে ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে স্বীকারোক্তি নেয়ার কথা আমি বিবেচনায় এনেছি।

'কারণ আসামিদের বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার আবেদন করাসহ ১৬৪ ধারার জবানবন্দি বাতিলের আবেদন করা হয়েছিল। যদিও তা আদালতে নাকচ আদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সকল প্রকার সাক্ষ্য, আলামত ঘটনার ধারাবাহিকতায় আমার কাছে পুরো ঘটনাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারার আওতায় পড়ে না। তাই এই ঘটনার সুযোগ নিয়ে সাফাতের সাবেক স্ত্রী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে মামলাটি করা হয়েছে যা ঘটনার ক্রমে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।’

‘মামলার ভিকটিমদের সমন পাঠিয়ে, মেসেজ দিয়ে, ওয়ারেন্ট পাঠিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় নাই। তারা সাক্ষী দিতে আসেন নাই, অযথা মামলার ৯৩টি কার্যদিবস ও আজকের তারিখসহ ৯৪টি কার্যদিবস ব্যয় করে অন্য মামলার বিচারের ক্ষেত্রে মূল্যবান সময় নষ্ট করেছেন, যা পাবলিক টাইম।’

এর আগে দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে আসামিদের আদালতে তোলা হয়। বিচারক সাড়ে ১২টার দিকে রায়ের খসড়া প্রস্তুত করা শুরু করেন এবং তা ১টা ১০ মিনিটে লেখা শুরু করেন। এরপর তিনি ২টা ৪১ মিনিট পর্যন্ত মামলার নথির বিভিন্ন অংশ পড়ে আদালতে শোনান এরপর রায় ঘোষণা করেন।

আসামিদেরকে ধর্ষণের দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ার রায় জানিয়ে দেন।

এ বিভাগের আরো খবর