তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অবারিত সুযোগ তৈরি হলেও এর অপব্যবহার ও জালিয়াতির কারণে অনেক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে চার দিনের ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন ইনফরমেশন টেকনোলজির (ডব্লিওসিআইটি ২০২১) উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি একদিকে যেমন আমাদের জন্য অবারিত সুযোগের দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এর অপব্যবহার ও জালিয়াতির কারণে অনেক চ্যালেঞ্জেরও জন্ম দিয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে দেশের সামনে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি। তাই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। এই বিশাল যুব সম্প্রদায়কে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে।’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা, পেশাজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
তথ্যপ্রযুক্তির বিনিময় ও হস্তান্তর বিশ্বজুড়ে উন্নয়নে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভাবন বা আমদানিই যথেষ্ট নয়; বরং এর টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
‘সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা স্থানীয় টেকসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন, প্রসার এবং ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে একটি উন্নয়নশীল দেশের মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব।’
বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিশ্ব সম্মেলনের ২৫তম আসর আয়োজন করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপ্রধান।
তিনি বলেন, সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘আইসিটি দ্য গ্রেট ইকুয়ালাইজার’ বর্তমান প্রেক্ষাপটে যথার্থ হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘২০০৯ সালে দেশের মাত্র ৮ লাখ মানুষ ইন্টারনেট সেবা পেত। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১২ কোটির বেশি। এ সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে চার গুণের বেশি।’
ডিজিটাল বাংলাদেশের চার স্তম্ভ: কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্মেন্ট এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশনকে ঘিরে নেয়া সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, করোনা মহামারিতে তার প্রমাণ মিলিছে বলেও মনে করেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি মোকাবিলায় সবচেয়ে নির্ভরশীল মাধ্যম হয়ে ওঠে তথ্যপ্রযুক্তি। দেশের শিক্ষা কার্যক্রম, বিচারিক কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং সেবা ইত্যাদি হয়ে পড়ে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর। কোভিড-১৯ মহামারিকালে তথ্যপ্রযুক্তির স্থানীয় বাজার অকল্পনীয় প্রসার লাভ করেছে। এই মহামারিকালে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেই দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছে।’
দেশে ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে উঠছে বলেও মনে করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার ও আইটি সেবা সরবরাহ করা হচ্ছে। আইটি খাতে রপ্তানি ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এ আয় ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে এবং জিডিপিতে সফটওয়্যার ও আইসিটি সেবা খাতের অবদান ৫ শতাংশে উন্নীত হবে।’
ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যার দিক থেকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশে সাড়ে ৬ লক্ষ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। ফ্রিল্যান্সারদের পেশাগত উন্নয়নে আইডি কার্ড প্রদান করা হচ্ছে।’