সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে মানুষের ফেলে যাওয়া কাগজ ময়লার ঝুড়িতে না রেখে যত্নে সেগুলো সংগ্রহ করেন প্রতিষ্ঠানটির ঝাড়ুদার। পরে বাছাই শেষে কাগজগুলো তুলে দেন দুই ব্যক্তির হাতে। তারা এবার কাগজে থাকা ফোন নম্বর ধরে কল করেন সেবা প্রত্যাশীকে।
এভাবে ফোনকল পেয়েই সেবাপ্রত্যাশীরা কল দেয়া ব্যক্তির মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে পাঠিয়ে দেন ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস ঘিরে এভাবে সেবা দেয়ার নামে টাকা নেয়ার অভিযোগে দুই প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃত রাসেল হোসেন ইমন ও জুয়েল আহমেদ পাসপোর্ট করতে চাওয়া মানুষের কাছে নিজেদের স্পেশাল ব্রাঞ্জের উপ-পরিদর্শক পরিচয় দিতেন।
এই চক্রে যুক্ত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে মাস্টার রোলে চাকরি করা ঝাড়ুদার মফিজুল হক টুটুলকেও। গত ৮ নভেম্বর প্রতারক চক্রটিকে শেরেবাংলা নগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি জানতে পেরেছে, কুড়িয়ে পাওয়া কাগজে থাকা ফোন নম্বরে কল করেই প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি।
পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা ব্যক্তিদের ভেরিফিকেশন করে দেয়ার নামে এই চক্রটি ইতোমধ্যেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে ডিবির সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের এডিসি জোনায়েদ আলম সরকার নিউজবাংলাকে জানান, মফিজুল হক টুটুল আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে মাস্টার রোলে ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ করেন। অফিস পরিষ্কার করার সময় তিনি পাসপোর্ট আবেদকারীদের টুকিটাকি কাগজ সংগ্রহ করেন। এসব কাগজে সাধারণত আবদেনকারীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা, মোবাইল নম্বর সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ থাকে।
এসব কাগজ সংগ্রহ করে ইমন ও জুয়েলের কাছে সরবরাহ করেন টুটুল। পরে ইমন ও জুয়েল প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন থেকে আবেদনকারীদের নম্বরে কল দিয়ে নিজেদের স্পেশাল ব্রাঞ্চের উপ-পরিদর্শক হিসেবে পরিচয় দিতেন। আর পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন করে দেয়ার নামে সেবাপ্রত্যাশীদের কাছে তারা ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা চাইতেন। বেশিরভাগ আবেদনকারীই এই ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারকদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিতেন।
ভুক্তভোগীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, নির্ধারিত সেবাটি পেতে সরকারি অফিসেই ৫০০ থেকে ১৫০০ পর্যন্ত টাকা গুণতে হয় তাদের। যে কারণে কল পেয়ে তারা ধরেই নেন, সরকারি অফিস থেকেই টাকা চাওয়া হচ্ছে। ফলে কোনো যাচাই বাছাই না করেই চাহিদামতো টাকা দিয়ে দেন তারা।
তাই আসল কিংবা ভূয়া এসবি কেউই যেন ভেরিফিকেশনের নামে টাকা চাইতে না পারে সে ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন সেবাগ্রহীতারা।
প্রতারকদের টাকা ভাগাভাগি
ঝাড়ুদার টুটুলের কাছ থেকে আবেদনকারীদের নাম ফোন নম্বর পেয়ে ভাগাভাগি করে পুলিশ পরিচয়ে ফোন দিতেন ইমন ও জুয়েল। পরে আবেদনকারীদের কাছ থেকে পাওয়া টাকা তিনজনে ভাগাভাগি করে নিতেন।
প্রতিটি সফল প্রতারণার জন্য কাগজ সরবরাহ বাবদ মফিজুল হক টুটুল পেতেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। বাকি টাকা যার ফোনে কাজ হতো তিনিই একটু বেশি নিতেন বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদের দুটি একাউন্ট ব্যবহার করতেন ইমন ও জুয়েল। জুয়েলের নগদ একাউন্ট চেক করে দেখা গেছে, গত ৫ মাসে ৩ লক্ষাধিক টাকা লেনদেন করেছেন তিনি। এই অর্থের পুরোটাই প্রতারণার মাধ্যমে এসেছে। ইমনের নগদ একাউন্টে গত এক মাসে ২৬ হাজার টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। মফিজুল হক টুটুল এ পর্যন্ত কত টাকা নিয়েছেন তা বিস্তারিত তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলেও জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ভেরিফিকেশনের কাজটি পুলিশ কোনো অর্থ ছাড়াই করে দেয়। কেউ যদি পুলিশের নাম করে টাকা চায় তাহলে যেন পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিটকে অবহিত করা হয়। তাহলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।