কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলায় একটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে হঠাৎ জাতীয় গণমাধ্যমের দৃষ্টি স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্যে।
হুমাইপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ধনু মিয়ার পক্ষে জনসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনের বক্তব্য তুমুল আলোচনা তৈরি করেছে।
সেদিন তিনি বলে বসেন, তাদের প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে জোরালো অবস্থান নেবেন। ভোটের দিন প্রয়োজনে একে-৪৭-এর চেয়ে বড় কিছু নিয়ে আসবেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতার কাছে একে-৪৭ আছে কি না বা এর চেয়ে বড় কিছু তার সংগ্রহে আছে কি না, এই প্রশ্নের জবাব পেতে গত কয়েক দিন ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছে নিউজবাংলা।
কিন্তু সেই নেতাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার স্বজন, রাজনৈতিক সহকর্মীরা কিছু বলতে চাইছেন না।
গত ৫ নভেম্বর হুমাইপুর ইউনিয়নের টান গোসাইপুর ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার মাঠে জনসভায় দেয়া বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আর ওই এলাকায় যাননি আওয়ামী লীগ নেতা আল মামুন।
তার মোবাইল ফোন নম্বরটি চালু আছে। তবে পরিচিত নম্বর না হলে তিনি কল ধরছেন না।
আল মামুনের বাসা বাজিতপুর পৌর এলাকার বসন্তপুরে। তার ঘনিষ্ঠ ওই এলাকার এক বাসিন্দা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোন কথা থেকে কোন কথা জিজ্ঞেস করে ফেলে, পরে আবার কোনভাবে প্রচার করে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।’
ফেসবুক পোস্টে সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যা
প্রকাশ্যে না এলেও বা ফোন না ধরলেও গত ৯ নভেম্বর রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে সেই জনসভায় বলা কথা নিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ নেতা।
তিনি দাবি করেন, নির্বাচনী পথসভায় তার বক্তব্যটি ছিল ২৫ মিনিটের। সে বক্তব্যের কিছু কিছু অংশ তুলে ধরে কথা বিকৃত করা হয়েছে।
তিনি লেখেন, এই পথসভার আগের দিন ‘স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি’ ও কিছু দুষ্কৃতকারী আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা পুড়িয়ে ফেলে এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অস্ত্রের ভয় দেখায়।
তিনি লেখেন, এই ইউনিয়নের একজন বিশেষ ব্যক্তির কাছ থেকে একটি একে-৪৭ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে একে-৪৭ নামক শব্দটি উচ্চারণ করা হয় এবং বলা হয় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের এসব ভয়ভীতি দেখিয়ে লাভ নেই।
আল মামুন লেখেন, ‘আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নেতা-কর্মীদের মানসিক শক্তিসহ নৌকার পক্ষে করার জন্য অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য প্রদান করি। আমি তাদের সর্বশক্তি দিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিই।
‘প্রসঙ্গক্রমে আমি তাও বলি, সরকার আমাদের, প্রশাসন আমাদের, আমাদের দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখুন।’
অভিযোগ নেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপি নেতার
হুমাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মানিক মিয়া গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে অংশ নেন। তার দল ভোট বর্জন করায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি সেই বক্তব্যের পরও ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ জানিয়েছেন।
নিউজবাংলাকে বিএনপি নেতা বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ এখন খুবই শান্ত ও সুন্দর। কোনো প্রকার বাধাবিপত্তি ছাড়াই প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি।
আপনি কিছুদিন আগে পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছিলেন। এখন পরিবেশ শান্ত ও সুন্দর বলছেন। কারণ কী- এমন প্রশ্নে মানিক বলেন, ‘সেই বক্তব্যের ভিডিও বিভিন্ন মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই এমপি সাহেব আর প্রশাসনের ঠেলায় মামুনও ঠান্ডা, এলাকার পরিবেশও ঠান্ডা।
‘এই বক্তব্যের পর নির্বাচনি প্রচারণার কাজে বিভিন্ন নেতা-কর্মী হুমাইপুর ইউনিয়নে গেলেও আবদুল্লাহ আল মামুনকে আর দেখা যায়নি। এই বক্তব্যের আগে মামুন সব সময়ই এমপি আফজাল হোসেনের সাথে থাকতেন। নৌকায় ভোট নিতে নির্বাচনের দিন একে-৪৭-এর চেয়ে বড়কিছু নিয়ে আসার হুমকি দেওয়ার পর থেকে তাকে আর এমপি সাহেবের সঙ্গেও দেখা যায়নি৷’
বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, ‘মামুনের এই বক্তব্যে আমার জন্য ভালো হইছে৷ সাধারণ জনগণের মধ্যে কিছু লোক আমার উল্টা ছিল, কিন্তু এখন আমার পক্ষে কাজ করছে। এমনকি ভোটও দেবে।’
গত ইউপি নির্বাচনেও মানিক মিয়া ও আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ধনুর মধ্যে লড়াই হয়েছে।
মানিক মিয়া বলেন, ‘তিনি গত নির্বাচনেও নৌকা প্রতীক নিয়েই আমার কাছে ২০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।’
আরেক প্রার্থীর লিখিত অভিযোগ
বিএনপি নেতার অভিযোগ না থাকলেও একই ইউনিয়নে আনারস প্রতীক নিয়ে লড়াই করা আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল আবেদীন খান ৮ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে তিনি আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করেন।
ইউএনও মোরশেদা খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পেয়ে এলাকায় নজরজারি বাড়ানো হয়েছে। কেউ যেন ভোটের পরিবেশ নষ্ট না করতে পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে।
‘তা ছাড়া ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রিটার্নিং কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগের অনুলিপি দেয়া হয়েছে।’