প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ইস্যুতে পাঁচটি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা আহ্ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ব্যাখ্যার ওপর।
গত শনিবার এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠার পর বুধবার গোয়েন্দা পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে জানায়, তারা এই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করেছেন।
এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক আহ্ছানউল্লার কাছে ব্যাখ্যা তলব করে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র এবং নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান।
তিনি বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা পাওয়ার পরই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি আমরা গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে প্রশ্ন ফাঁস বা এ বিষয়ে আমরা আহ্ছানউল্লা ইউনিভার্সিটির কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছি। তাদের মতামত জানতে চেয়েছি।’
প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রথমে অভিযোগ স্বীকার করা হয়নি। পরে বলা হয়, প্রমাণ পেলে পরীক্ষা বাতিল হবে।
১ হাজার ৫১১টি পদের বিপরীতে এ পরীক্ষায় অংশ নেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন চাকরিপ্রত্যাশী।
এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক ১৮৩টি, জনতা ব্যাংক ৫১৬, অগ্রণী ব্যাংক ৫০০, রূপালী ব্যাংক ৫ এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ৭টি পদ রয়েছে।
চার দিনের মাথায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার পাঁচজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য গণমাধ্যমকে জানায়। আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করে বাহিনীটি জানায়, কয়েকটি সরকারি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পরীক্ষার্থীদের কাছে ৫-১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। আগেভাগে যাদের প্রশ্নপত্র দেয়ার জন্য চুক্তিভুক্ত করা হয়, তাদের ‘গোপন বুথে’ নিয়ে প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করানো হয়। টাকা নিয়ে প্রশ্নপত্র পেয়েছে এমন ২ শতাধিক পরীক্ষার্থীর তালিকা পাওয়া গেছে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম আহ্ছানউল্লা ইউনিভার্সিটির আইসিটি টেকনিশিয়ান মুক্তারুজ্জামান রয়েল। এ ছাড়া তার সঙ্গে থেকে কাজ করেছেন জনতা ব্যাংকের গুলশান শাখার অফিসার শামসুল হক শ্যামল, রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলন, পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান মিলন ও রাইসুল ইসলাম স্বপন।
চক্রটি কয়েকটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে অন্তত ৬০ কোটি টাকা লেনদেন করেছে বলে জানতে পেরেছে ডিবি।
এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল আহ্ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি।
ডিবি জানিয়েছে, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে মুক্তারুজ্জামান আহ্ছানউল্লার আইসিটি টেকনিশিয়ান (হ্যার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার) হিসেবে কর্মরত।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, মুক্তারুজ্জামান আহ্ছানউল্লায় কর্মরত অন্য সহযোগীদের সহায়তায় পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে তাদের কাছে স্বীকার করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতামতও নিতে হবে। এসব কৈফিয়ত পাওয়ার পরই বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’