করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতির উত্তরণের জন্য আগামী এক বছর জ্বালানি তেলের দাম না বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এই এক বছর জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বুধবার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে জ্বালানি তেলের দাম ও পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, লাগামহীন দ্রব্যমূল্য এবং জনদুর্ভোগের প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ এসব কথা বলেন।
ভাসানী অনুসারী পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সরকারকে উদ্দেশ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ডিজেলের দাম এক পয়সাও বাড়াতে পারবেন না। দাম বাড়ানোর প্রয়োজনও নেই। বাংলাদেশের তহবিলে ৪৮ হাজার বিলিয়ন ডলার জমা আছে। এগুলো কি কবরে নিয়ে যাওয়ার জন্য? আগামী এক বছর দাম বাড়ানোর দরকার নেই। এই বছরটা ভর্তুকি দেবেন। অনেক কিছুতেই আপনারা ভর্তুকি দিচ্ছেন।
গণপরিবহনে ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, বাস-ট্রাক, স্কুটার ও কৃষকের ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের জন্য ভ্যাট-শুল্ক প্রত্যাহার করুন। সাহেবদের গাড়ির জন্য ট্যাক্স বাড়িয়ে দিন। পাবলিকের জন্য ট্যাক্স প্রত্যাহার করলে আপনাদের জন্য ভালো হবে। দেশ উন্নত হবে।
শহীদ নূর হোসেনের প্রসঙ্গ টেনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘আজ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেন দিবস। সে কবরে শুয়ে ভাবছে শেখ হাসিনাকেও তো এখানে আসতে হবে। উনি কীভাবে আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন। আমি এত অল্প বয়সে জীবনটা দিয়ে গেলাম, আমি তাকে বলতে শেখালাম- স্বৈরাচার নিপাত যাক গণতন্ত্র মুক্তি পাক। সে কথা বিক্রি করে তিনি এখনো ক্ষমতায় আছেন। মাফ চাওয়ারও একটি পদ্ধতি আছে- গণতন্ত্রের জন্য আমি জীবন দিয়েছি, সেই গণতন্ত্র জনগণের কাছে ফেরত দেয়া। গণতন্ত্র ফেরত দিতে তাকে পদত্যাগ করে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।’
তিনি বলেন, দেশে দুই কোটি পরিবারকে খুব কম টাকায় রেশনিং দেয়া দরকার। ২৫ টাকা কেজি চাল, ১৫ টাকা কেজি আটা, ৫০ টাকা কেজি দরে ডাল দিতে সরকারকে পরামর্শ দেন তিনি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকারের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক মনে করি, অসময়োচিত মনে করি। বিশেষ করে করোনা-পরবর্তী এই সময়ে দাম বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে অথবা আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম স্থিতিশীল থাকলে এই বাজেট এবং পরবর্তী বাজেট পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে বলব।’
গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, সরকার গত সাত বছরে জ্বালানি তেল থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। এখন তারা বলছে যে আগের দামে বিক্রি করলে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। সে হিসাবে এক বছরে ছয় হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হবে। সরকার ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে আগামী সাত বছর ভর্তুকি দিতে পারে। প্রতি লিটার ডিজেলে সরকার ১১ টাকা ভ্যাট ও অন্যান্য শুল্কসহ ১৭ টাকা নিচ্ছে। এই ১৭ টাকা মাফ করে দিলে তো তেলের দাম বাড়াতে হয় না।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য রাখাল রাহা, ঊনসত্তর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আসাদের ছোট ভাই ডা. নূরুজ্জামান নূর প্রমুখ।