মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গুরুতর আহত কিশোরকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। জরুরি বিভাগ থেকে মাথায় ব্যান্ডেজ এবং অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে তাকে ট্রলিতে করে নেয়া হয় হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে।
সেখানে কিশোরকে নামিয়ে দেয়ার পর ট্রলি বহনকারী ওয়ার্ডবয় ২০০ টাকা বকশিশ চান। কিশোরের বাবা তাকে ১৫০ টাকা দিলেও ওয়ার্ডবয় বাকি টাকার জন্য চাপাচাপি করতে থাকেন। টাকা না পেয়ে একপর্যায়ে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পর কিশোরের মৃত্যু হয়।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে মৃত কিশোরের স্বজনদের অভিযোগ। ঘটনা খতিয়ে দেখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে।
মৃত কিশোরের নাম বিকাশ চন্দ্র কর্মকার। ওয়ার্ডবয় আসাদুজ্জামান দুলু হাসপাতালের খণ্ডকালীন কর্মচারী। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।
তদন্ত কমিটি গঠনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ।
বিকাশের বাবা বিশু চন্দ্র কর্মকার জানান, তাদের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায়। ছেলে বিকাশ মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গুরুতর আহত হলে তাকে মঙ্গলবার রাতে বগুড়া মেডিক্যালে নেয়া হয়। জরুরি বিভাগ থেকে মাথায় ব্যান্ডেজ এবং অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে তাকে ট্রলিতে করে নেয়া হয় হাসপাতালের তৃতীয় তলায় সার্জারি বিভাগে।
সেখানে মেঝেতে বিকাশকে নামিয়ে দেয়ার পর ট্রলি বহনকারী ওয়ার্ডবয় দুলু তার কাছে ২০০ টাকা বকশিশ চান। আর্থিক অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করে তিনি তাকে ১৫০ টাকা দেন। তবে দুলু বাকি ৫০ টাকার জন্য চাপাচাপি করতে থাকেন। বাকি টাকা না পেয়ে একপর্যায়ে বিকাশকে রেখে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেন তিনি। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই মুখে ফেনা উঠে প্রাণ যায় বিকাশের।
হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ জানান, দুলু হাসপাতালের নিয়মিত কর্মচারী নন। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কিছু লোক নেয়া হয় মাঝে মাঝে, দুলু সেভাবেই কাজ করে থাকে হাসপাতালে। ঘটনার পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে ঘটনা তদন্তে চিকিৎসক মনির আলী আকন্দকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা জানান, তারা হাসপাতালে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। বিকাশের পরিবার কোনো অভিযোগ না করায় এখনও মামলা হয়নি। তবে তদন্তের জন্য মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে।
বিকাশ গাইবান্ধার একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ত। লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি ওয়ার্কশপে কাজ করত ছেলেটি। কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় বিকাশ। তাকে প্রথমে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে নেয়া হয় বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার দুপুরে বিকাশের মরদেহ নিয়ে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় ফিরেছেন স্বজনরা।