রাজধানীর বাসগুলোতে সিটিং ও গেটলক সার্ভিস থাকছে না বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির প্রধান কার্যালয়ে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।
এতে পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘যত গেইটলক ও সিটিং সার্ভিস নামে বাস আছে, সব বন্ধ করে দেয়া হবে। আমরা আজকে মালিকদের বলে দেব যেসব বাসের গায়ে গেটলক, সিটিং সার্ভিস লেখা আছে, তা মুছে ফেলতে হবে।
‘আমরা তাদের তিন দিন সময় দেব। এরপর কোনো অনিয়ম দেখা গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সিটিং সার্ভিস বন্ধের উদ্যোগ নিয়ে এনায়েত বলেন, ‘২০১৭ সালে আমরা মালিক সমিতি দায়িত্ব নিয়ে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু এরপর আলাদা নীতিমালা করে সিটিং সার্ভিস চালুর একটা সুপারিশ ছিল, যেন যাত্রীরা ভালো বাস, ভালো সিটে বসে আরামে জার্নি করতে পারেন।
‘সে জন্য বিআরটিএ থেকে আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছিল, কিন্তু সেটি আর কার্যকর হয়নি। তখন কিছু কিছু কোম্পানি তাদের বাস সিটিং সার্ভিস হিসেবেই চালানো শুরু করল, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সিটিং সার্ভিস থাকলে বেশি ভাড়া নেবার একটা সুযোগ তৈরি হয়। তাই এটা একেবারেই উঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।’
‘৩ দিনের মধ্যে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা’
সংবাদ সম্মেলনে মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘আগামী তিন দিনের মধ্যে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে। যেকোনো মূল্যে নতুন ভাড়া তালিকা কার্যকর করা হবে। এ নিয়ে কোনো অনিয়ম ছাড় দেয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালের পর এখন পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস ভাড়া সমন্বয় করা হয়নি। শুধু গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২০১৫ সালে মহানগরীর বাস ভাড়ায় কিছুটা সমন্বয় করা হয়েছিল।
‘২০০৮ সালে কস্টিং কমিটির বিশ্লেষণের মাধ্যমে দূরপাল্লার বাসের জন্য ১ টাকা ৯৪ পয়সা ও মহানগরীর বাসের জন্য ২ টাকা ৩৩ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু সেটা আর বাস্তবায়ন হয়নি। ডিজেলের দাম বাড়ার পরও সে সময়ের চেয়ে কম ভাড়া আমরা মেনে নিয়েছি।’
এনায়েত আরও বলেন, ‘এখন ডিজেলের দাম বাড়ার পর একটা নতুন ভাড়ার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই ভাড়া আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়, তবু সাধারণের কথা চিন্তা করে আমরা এই ভাড়া মেনে নিয়েছি।’
সিএনজিচালিত বাসের সংখ্যা
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিএনজিচালিত বাস নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালিয়ে রাজধানীতে ১২০ কোম্পানির ৬ হাজার বাসের মধ্যে ১৯৬টি সিএনজিচালিত পাওয়া গেছে। শতাংশ হিসাব করলে তা দাঁড়ায় ৩.২৭। দূরপাল্লায় সিএনজিচালিত বাস নেই বললেই চলে।
এনায়েত উল্যাহ জানান, রাজধানীতে গ্রেট তুরাগ ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের ৪০টি, অনাবিল সুপার লিমিটেডের ৫টি, প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের ১২টি, শ্রাবণ ট্রান্সপোর্টের ৩০টি, আসিয়ান ট্রান্সপোর্টের ২০টি, মেঘালয় ট্রান্সপোর্টের ৫টি, হিমালয় ট্রান্সপোর্টের ১৪টি, ভিআইপি অটোমোবাইলসের ২টি, মেঘলা ট্রান্সপোর্টের ২৭টি, শিকড় পরিবহনের ৮টি, বিকল্প অটো সার্ভিসের ১টি, গাবতলী লিংক মিনিবাস সার্ভিসের ১১টি ও ৬ নং মতিঝিল বনানী কোচ লিমিটেডের ২১টি সিএনজিচালিত বাস চলাচল করে।
তিনি বলেন, ‘১০ থেকে ১২ বছর আগে গ্যাসের গাড়ি অনেক ছিল। তখন গ্যাসের দাম কম থাকায় কম খরচের কথা চিন্তা করে অনেক মালিক তার বাসকে সিএনজিতে রূপান্তর করে, কিন্তু তাদের পরের অভিজ্ঞতা খারাপ। কারণ সিএনজিতে বাস চালালে ইঞ্জিনের ক্ষতি বেশি হয়।
‘ছয়-সাত মাসের মধ্যে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। তা ছাড়া গ্যাসের দম বাড়ায় ও সবসময় গ্যাস না পাওয়ায় পরে মালিকরা আবার সিএনজি থেকে ডিজেলে ফেরত আসে। সে জন্য এখন সিএনজিচালিত বাসের সংখ্যা অনেক কম।’
পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘সমিতির পক্ষ থেকে সকল মালিক-শ্রমিক নেতাদের সাথে কথা বলে তাদের কঠোর নির্দেশনা দেব। আমরা সিএনজিচালিত বাস ও ডিজেলচালিত বাস চিহ্নিত করার জন্য স্টিকার লাগিয়ে দিব।
‘বিআরটিএ ও ডিএমপির ১১টি মোবাইল কোর্ট আগামীকাল থেকে কাজ শুরু করবে। তাদের সাথে আমাদের মালিক সমিতির টিম থাকবে। কোনো বাসে বাড়তি ভাড়া ও কোনো অনিয়ম দেখা গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া নেয়া যাবে না
এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘ওয়েবিল হলো মালিকপক্ষ তাদের গাড়ির ট্রিপের হিসাবের সুবিধার জন্য একটা সিস্টেম ডেভলপ করেছে। এটা স্ব স্ব কোম্পানি তাদের মতো করে চালু করেছে। এখানে বিআরটিএর বৈধ-অবৈধ বলার কিছু নাই।
‘ওয়েবিল আলাদা বিষয়; এটা মালিকদের একটা সিস্টেম। এর সঙ্গে বাড়তি ভাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। ওয়েবিল দেখিয়ে কেউ বাড়তি ভাড়া নিতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘দেখতে হবে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে কি না। আমরা সে জন্য ভাড়া তালিকা কার্যকর করছি। ওয়েবিলের মাধ্যমে মালিকরা তার ট্রিপের হিসাব রাখুক। তাতে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু নির্দিষ্ট গন্তব্যে তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নিতে হবে।
‘ওয়েবিলের মাধ্যমে বাড়তি ভাড়া নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাই সবকিছুর মূল হলো ভাড়া তালিকা কঠোরভাবে কার্যকর করা। আর তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা সেটা নিয়েই কাজ করছি। আমরা যেকোনো মূল্যে নতুন ভাড়া তালিকা কার্যকর করতে চাই।’
মালিক সমিতির নেতা বলেন, ‘তালিকার বাইরে কেউ ভাড়া নিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেখানে মালিক-শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিবাদ করা হবে না।
‘আমরা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সব দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি জনগণ যেন কোনো ধরনের ভোগান্তিতে না পড়েন।’