বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফাঁসি দেয়ার আগে অন্তত ১০ বার চিন্তা করি: প্রধান বিচারপতি

  •    
  • ১০ নভেম্বর, ২০২১ ১৪:৫৫

মোকিম ও ঝড়ুকে নিয়ে বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কোর্টের উপর এমন একটি ব্লেইম (অভিযোগ) বিরাট বিব্রতকর। আমরা প্রত্যেকটি ফাঁসি দেয়ার আগে ভালো করে দেখি। ফাঁসি দেয়ার আগে আমরা কম করে হলেও ১০ বার চিন্তা করি।’

জেল আপিল নিষ্পত্তির পর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার আব্দুল মোকিম ও গোলাম রসুল ঝড়ুর করা নিয়মিত আপিল অকার্যকর ঘোষণা করে নিষ্পত্তি করেছে আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, কোনো আসামিকে ফাঁসির দণ্ড দেয়ার ক্ষেত্রে বিচারক সর্বোচ্চ সতর্ক থাকেন। ফাঁসি দেয়ার আগে তারা কম করে হলেও ১০ বার চিন্তা করেন।

শুনানিতে মোকিম, ঝড়ু ছাড়াও সুজন নামে আরেকজন আসামির একটি আপিলও অকার্যকর ঘোষণা করে আদালত।

চার বছর আগে মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি যশোর কারাগারে কার্যকর হয়। তাদের নিয়মিত আপিলটি শুনানির জন্য সম্প্রতি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে। এতে ‘আপিল নিষ্পত্তির আগেই’ দুজনের ফাঁসি বার্যকর হয়েছে কিনা, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. হুমায়ন কবির বুধবার সংবাদমাধ্যমকে জানান, হাইকোর্ট ফাঁসির আদেশ দিলে এর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে আপিল করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর সেটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এসেছে। তবে এর চার বছর আগে দুজনের ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেছে।

তবে পরে বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই বন্দি মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকর হয় সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে। তাদের জেল আপিল সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হওয়ার পরেই জারি হয় মৃত্যু পরোয়ানা। ওই পরোয়ানা কারাগারে গেলে দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চান। তবে সেটিও নাকচ হয়।

নিয়মিত আপিলটির ওপর শুনানির সময় বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘একটি মামলায় কোনো আসামিকে ফাঁসি দেয়ার আগে আমরা ১০ বার চিন্তা করি। আমরা ফাইল ভালো করে দেখে তারপর রায় দেই।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এখানে প্রধান বিচারপতির একার কোনো কথা নেই। এখানে (আপিল) প্রত্যেক বিচারকের পৃথক পৃথক বক্তব্য রয়েছে। রায়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেক জাজের মতামত নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে অন্যদের মতো প্রধান বিচারপতিরও এক ভোট। জুডিশিয়াল পাওয়ারের ক্ষেত্রে অন্য বিচারকের মতোই প্রধান বিচারপতিরও এক ভোট।’

ঝড়ু ও মোকিমের আপিল বুধবারের শুনানির তালিকার তিন নম্বরে ছিল।

শুনানি শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আদালতে বলেন, ‘তিন নম্বরের সঙ্গে তালিকায় থাকা সাত নম্বর আইটেমের একসঙ্গে শুনানি করতে চাই। সাত নম্বর আইটেমে সুজন নামে একজনের রেগুলার (নিয়মিত) আপিল আছে। কিন্তু তারও একটি জেল পিটিশন ছিল। যেখানে তার কোনো আইনজীবীও ছিল না, কিন্তু শুনানি করে আপিল বিভাগ তাকে খালাস দিয়েছেন।’

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ওই মামলায় তিন আসামির মধ্যে দুই জনের আপিল ছিল। আর সুজনের ছিল জেল পিটিশন। অথচ নিয়মিত আপিল যাদের, তাদের ফাঁসি হয়েছে আর জেল পিটিশন শুনানি করে আমরা ওই (সুজন) আসামিকে খালাস দিয়েছি।

‘আমরা কোর্টে যতক্ষণ কাজ করি, তার থেকে দ্বিগুণ কাজ করতে হয় বাসায়।‘

বিচারকদের নিষ্ঠা ও কাজের চাপ তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘গত কিছুদিন ধরে ব্যাক পেইনের জন্য ১০/১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারি না। আমাদের এখানে (আপিলে) যারা আছেন তারা ১৪/১৫ ঘণ্টা করে কাজ করেন। কারণ আমাদের মেইন কাজ হচ্ছে বাসায়।’

অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি দেখেন এই লোকের (সুজন) পক্ষে আইনজীবী একটা কথাও বলেনি। শুধু তার উপস্থিতি আছে। কারণ আমরা বাসায় ফাইল নিয়ে ভালো করে দেখে তারপর রায় দেই।

মোকিম ও ঝড়ুকে নিয়ে বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই কোর্টের উপর এমন একটি ব্লেইম (অভিযোগ) আসলে সেটি কোর্টের জন্য বিরাট বিব্রতকর। তখন অবশ্য আমি প্রধান বিচারপতি ছিলাম না। তারপরেও আমাদের প্রত্যেকের জন্য বিব্রতকর। আমরা প্রত্যেকটি ফাঁসি দেয়ার আগে ভালো করে দেখি। ফাঁসি দেয়ার আগে আমরা কম করে হলেও ১০ বার চিন্তা করি।’

আদালত ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে তো এখনও ডিজিটাল সিস্টেম হয়নি। ডিজিটাল করতে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ডিজিটাল হলে সঙ্গে সঙ্গে ডিটেক্ট (শনাক্ত) হয়ে যাবে, কোন মামলার কোনটি থেকে কোনটি আসছে। এখন এটাই বড় সমস্যা। ডিজিটাল না হলে ডিটেক্ট করা সম্ভব নয়। কারণ এখন আর কেউ কনভার্সনের দরখাস্ত দেয় না। এই যে দেখেন, সুজনের রেগুলার আপিল রয়ে গেছে, কিন্তু জেল আপিলে সে খালাস হয়ে গেছে।’

বর্তমান প্রধান বিচারপতির সময়ে কতগুলো ফাঁসির মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ফাঁসির মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১০২টি। এর মধ্যে অর্ধেক আসামির ফাঁসি থেকে যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। সমস্ত মামলা পড়েছিল। আমি এগুলো খুঁটিয়ে বের করেছি। ২০০৯ সালের ফাঁসির মামলা পড়েছিল, সেগুলো আমার আমলে শেষ হয়েছে। অথচ এই মামলাগুলো সবার আগে গুরুত্ব পাবে। এটি নিয়ে কোনো আইনজীবী মেনশনও করেন না। এসব মামলায় তো একদিনও সময় চাওয়া উচিত না, অথচ তালিকায় আসার পর আইনজীবীরা সময় চান।’

মোকিম ও ঝড়ুর ২০১৩ সালের আপিল পড়ে থাকলেও তাদের আইনজীবী কেন আদালতে মেনশন (উপস্থাপন) করলেন না, সেই প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি।

তিনি বলেন, ‘আমি সেকশনে নির্দেশ দিয়ে বলেছি, সব ফাঁসির মামলা পৃথক করো। বিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে আমি এটা করেছি, যাতে মানুষের কষ্ট না হয়। তারপর সব বাছাই করা হয়েছে, আপিলে শুনানি হয়েছে।’

প্রধান বিচিারপতি বলেন, ‘গরিব মানুষের মামলায় তারা এসে ধরাধরি না করলে আইনজীবীরা কোনো আবেদন দেন না। মামলা পড়ে থাকলে নোটিশও করেন না।’

এ সময় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা যেহেতু অন মেরিটে আপিলটি ডিসমিস করেছি। আমার কাছে মনে হয়, রেগুলার আপিলটি নট মেইনটেনেবল বলে ডিসমিস করে দিতে পারেন বা অকার্যকর করে দিতে পারেন।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী আসিফ হাসান এ সময় বলেন, ‘আমরা কিন্তু কোর্টের উপর কোনো ব্লেইম দেইনি, হয় তো কিছু প্রভাব পড়ে গেছে। আমাদের এ ক্ষেত্রে ছোট একটু চাওয়া হলো, আমাদের হয়ত আরও সতর্ক হতে হবে। তবে সেকশনের আরও সমন্বয় করা উচিত। পাশাপাশি কারা কর্তৃপক্ষের জন্য একটা গাইডলাইন দিলে ভালো হয়।’

বিচারপতি ইমান আলী বলেন, উচিত ছিল যখন ক্রিমিনাল আপিল দায়ের করে, তখন বলে দেয়া যে, অলরেডি একটি জেল আপিল ফাইল হয়ে গেছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, তালিকায় আসার আগ পর্যন্ত আমরা কিছুই জানি না। ফাঁসি হয়ে গেছে তাও কিছু জানায়নি। এখন আমাদের আর কিছু চাওয়ার নেই। একটু চাওয়া সকলের স্বার্থে একটি গাইড লাইন দিয়ে দেন।

বিচারপতি ইমান আলী বলেন, এগুলো সব কম্পিউটারাইজড হয়ে গেলে এ সমস্যা হতো না। এটা আপনারা আইনজীবীরা হতে দেবেন না। কারণ আপনার আপনাদের পছন্দ অনুযায়ী কোর্টে গিয়ে শুনানি করবেন।

সবশেষে আদালত ঝড়ু, মোকিম ও সুজনের ক্রিমিনাল আপিল অকার‌্যকর ঘোষণা করে খারিজ করে দেয়। এ বিষয়ে গাইড লাইন থাকবে বলে জানিয়ে দেয় আদালত।

এ বিভাগের আরো খবর