আলোচিত ব্যাংকার পি কে হালদারের বিরুদ্ধে কানাডায় অর্থপাচারের প্রমাণ পেয়ে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তবে তার বিরুদ্ধে যত টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছিল, দুদক পাচারের প্রমাণ পেয়েছে অনেক কম।
বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার আত্মসাতের অভিযোগ মাথায় নিয়ে কানাডায় চলে যাওয়া এই ব্যাংকার দেশটিতে এক কোটি ১৭ লাখ ডলার পাচার করেছেন বলে জানাচ্ছে দুদক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি বর্তমান হারে এক শ কোটি টাকার কিছু বেশি।
সংস্থাটি জানিয়েছে, তদন্তে নেমে পি কের ৪২৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, বিভিন্ন ব্যাংকে ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বুধবার দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, চার্জশিটে পি কে হালদারসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন: পিকের মা লিলাবতী হালদার, তার কথিত বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল। অন্যরা হলেন: শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধা, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি।
সচিব বলেন, এর আগে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। চার্জশিটে এবার আসামির সংখ্যা বৃদ্ধি পেল।
চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় দুদকের করা মামলায় বলা হয়, রিলায়েন্স ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকার সময়ে আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন পি কে হালদার।
এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে থাকা ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কৌশলে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি ও তার সহযোগীরা।
গত বছরের শুরুতে পি কে হালদারের কানাডা পালিয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। এরপর তার পাসপোর্ট, সম্পত্তি জব্দ করা হয়। আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে অপসারণও করা হয়।
আদালতের নির্দেশে গত জানুয়ারিতে পি কে হালদারের সব ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করে রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পাচার টাকা উদ্ধারে ‘সহযোগিতার জন্য’২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর নিরাপদে দেশে ফেরার নির্দেশনা পেতে হাইকোর্টে আবেদন করেন পি কে হালদার।
আদালত তাকে দেশে আসার অনুমতি দিলেও ফেরার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। এরপর দেশে না আসার কথা জানিয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল খালেক খানকে চিঠি দেন তিনি।
চিঠিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণ দেখা গেছে জানিয়ে, এই সময়ে দেশে ফেরা যুক্তিসংগত হবে না বলে উল্লেখ করেন পি কে। তিনি দেশে না ফেরায় টাকা উদ্ধার নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।