বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দূরত্ব যত বেশি, ভাড়া তত কম ভারতে, দেশে কেন নয়

  •    
  • ১০ নভেম্বর, ২০২১ ০৯:৩২

পশ্চিমবঙ্গে বাস ভাড়া নির্ধারণে দূরত্বের বিষয়টি হিসাব করা হয়। স্বল্প দূরত্বে ভাড়া বেশি, বেশি দূরত্বে কম। নগরে চার কিলোমিটার পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ১ টাকা ৭৫ রুপি। ২৪ কিলোমিটারের পর প্রতি কিলোমিটারে ২৫ পয়সা। আন্তজেলায় ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত এক হারে ভাড়া, এরপর প্রতি কিলোমিটারে ৭৫ পয়সা। কিন্তু বিআরটিএ ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি কখনও আমলে নেয় না। ফলে চার কিলোমিটার দূরত্বে যাত্রী যে হারে ভাড়া দেবেন, ৪০০ কিলোমিটার দূরত্বেও তাকে একই হারে ভাড়া দিতে হয়।

বাংলাদেশে দূরত্বভেদে বাস ভাড়ার হার একই থাকলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তা উল্টো। যাত্রী যত দূরের গন্তব্যে যাবে, বাস ভাড়ার হার তত কমে আসবে।

তবে বাংলাদেশে লঞ্চ ভাড়ার ক্ষেত্রে দূরত্বের হিসাবে ভাড়ার হার দুটি হলেও বাস ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি কখনও বিবেচনায় আনা হয় না।

ফলে কেউ ১০ কিলোমিটার দূরত্বে গেলে যে হারে ভাড়া দিতে হয়, ৪০০ কিলোমিটার গেলেও একই হারে ভাড়া দিতে হয়। অথচ বাংলাদেশের তুলনায় ডিজেলের দাম লিটারে অন্তত ২৪ টাকা বেশি হলেও কলকাতায় স্বল্প দূরত্বের তুলনায় দূরপাল্লায় বাস ভাড়া ঢাকার চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবেই চার ভাগের এক ভাগেরও কম।

কলকাতায় নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হলেও ঢাকায় নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ আদায় করায় এই পার্থক্য আরও বেশি গিয়ে ঠেকে।

বাংলাদেশে ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর গত রোববার বাস ভাড়া বাড়িয়ে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, তাতে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সা, মহানগরে বড় বাসে কিলোমিটারে ২ টাকা ১৫ পয়সা আর মিনিবাসে ২ টাকা ৫ পয়সা বলে জানানো হয়েছে।

কোনো যাত্রী যদি ১০ কিলোমিটার যান, তাহলেও একই হার, আবার যদি ৪০০ কিলোমিটার যান, তাহলেও একই হারে ভাড়া দিতে হয়।

একই দিন লঞ্চের ভাড়া বাড়িয়ে যে আদেশ দেয়া হয়েছে, সেখানেও বিষয়টি এত সরল নয়। সেখানে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত লঞ্চের ভাড়া কিলোমিটারে ২ টাকা ৩০ পয়সা এবং ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে কিলোমিটারে ২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

লঞ্চের ভাড়া নির্ধারণ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠন বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা লঞ্চ যখন দূরপাল্লায় যায়, যখন সেটি ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে যায়, তখন তার খরচ কমে আসে। তাই বড় দূরত্বে ভাড়া কম রাখা হয়। দূরপাল্লায় যাত্রীদের যদি একই হারে ভাড়া দিতে হয়, তাহলে সেটি তাদের জন্য চাপ হয়ে যায়। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের যাত্রীদের ভাড়ার হার কম নির্ধারণ করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দূরত্ব যত বেশি হয়, ভাড়ার হার ক্রমান্বয়ে কমে আসা উচিত। ভারত বা পাকিস্তানে যদি দূরপাল্লায় আপনি যান, তাহলে ভাড়া অর্ধেক কম।’

ভাড়ার হারে স্ল্যাব না থাকা বা বেশি হারে ভাড়া নির্ধারণের পেছনে পরিবহনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বাস নির্ভরতাকে দায়ী করেছেন এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ। তিনি ভারতের ট্রেন নেটওয়ার্কের বিষয়টি তুলে ধরে বলেছেন, সেখানে সড়কপথের তুলনায় বেশি যাত্রী পরিবহন করা হয় রেলে, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে তাই। কিন্তু বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ যাত্রী আর ৮৫ শতাংশ পণ্য পরিবহন সড়কনির্ভর। ফলে সড়ক পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের একাধিপত্য এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভোক্তা তথা যাত্রীদের রাখা উচিত। নইলে তাদের পক্ষ থেকে এসব কথা আসলে কেউ বলে না। কিন্তু আমাদের যে ভাড়া নির্ধারণের ১২ সদস্যের কমিটি, সেখানে কেবল মালিক এবং শ্রমিক পক্ষ আর সরকারের লোকজন।’

বাসের ক্ষেত্রে দূরত্ব যা-ই হোক না কেন, একই হারে ভাড়া কেন- এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর বক্তব্য পাওয়া যায়নি সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার ফোন না ধরায়।

ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে অংশ নেয়া ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কম ভাড়ার ব্যবস্থা করা তো আমাদের দাবি। দূরে গেলে ভাড়া কমবে, এটা যুক্তিসংগত।’

তাহলে দূরের যাত্রীদের ভাড়ার হার কম রাখার বিষয়টি বিআরটিএ বিবেচনায় আনেনি কেন, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যারা ভাড়া নির্ধারণ করে, এই প্রশ্নের উত্তর শুধু সেসব কর্তৃপক্ষই দিতে পারবে।’

বৈঠকে প্রসঙ্গটি তোলা হয়েছিল কি না, এমন প্রশ্নে সংস্থাটির সভাপতি বলেন, তিনি সেখানে ছিলেন না। তাদের প্রতিনিধি বিষয়টি বলেছিলেন কি না, সেটি জানা নেই।

পশ্চিমবঙ্গে যে পদ্ধতিতে বাস ভাড়া

সম্প্রতি কলকাতায় ডিজেলের দাম লিটারে ৫ রুপির মতো কমানো হলেও গত কয়েক মাসে ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

এখন প্রতি লিটারে দাম পড়ছে ৮৯ দশমিক ৭৮ রুপি। প্রতি রুপি বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ টাকা ১৬ পয়সা হারে দাম দাঁড়ায় ১০৪ টাকা ১৪ পয়সা। অর্থাৎ বাংলার দুই অংশে লিটারে দামে পার্থক্য ২৪ টাকা ১৪ পয়সা।

পশ্চিমবঙ্গে তেলের দাম বাড়ানোর কারণে বেসরকারি বাসমালিকরা ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন। প্রাদেশিক সরকার এখনও সাড়া না দিলেও বাসমালিকরা নিজেদের মতো বিভিন্ন স্ল্যাবে ৫ থেকে ১০ টাকা ভাড়া বাড়িয়েছেন।

সেখানে সরকারি যে পরিবহন সেবা, তা চলছে পুরোনো ভাড়াতেই। পশ্চিমবঙ্গ পরিবহন নিগম নামে বাস সংস্থাটি কলকাতা ও শহরের উপকণ্ঠে সেবা দেয়।

দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমের জেলাগুলোর জন্য দক্ষিণবঙ্গ পরিবহন (এসবিএসটিসি)। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর জন্য উত্তরবঙ্গ পরিবহন নিগম (এনবিএসটিসি) রাজ্যব্যাপী পরিবহন পরিষেবা দেয়।

পাশাপাশি বেসরকারি বাস পরিষেবা চালু রয়েছে রাজ্যজুড়ে।

পশ্চিমবঙ্গ পরিবহন দপ্তরের বাস ভাড়া নিয়ে সবশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ জুন। কলকাতা ও শহরতলির সাধারণ বাসের ভাড়ার চার্টে উল্লেখ করা হয়েছে, চার কিলোমিটার পর্যন্ত ৭ রুপি। চার কিলোমিটার থেকে আট কিলোমিটার পর্যন্ত ৯ রুপি।

অর্থাৎ যাত্রী চার কিলোমিটার পর্যন্ত বাসে গেলে কিলোমিটারে ১ দশমিক ৭৫ রুপি ভাড়া দিতে হয়। অন্যদিকে কেউ চার কিলোমিটারের বেশি, অথচ আট কিলোমিটারের কম যান, তাহলে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়ার হার ১ টাকা সাড়ে ১২ পয়সা পর্যন্ত নেমে আসে।

আবার কেউ যদি ১২ কিলোমিটার থেকে ১৬ কিলোমিটার যান, তাহলে তাকে দিতে হয় ১০ রুপি। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে ভাড়ার হার কমে কিলোমিটারে ৬৩ থেকে ৮৩ পয়সা পর্যন্ত পড়ে।

আবার কেউ যদি ১৬ কিলোমিটার থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত যান, তাহলে এই বাড়তি গন্তব্যের জন্য দিতে হয় বাড়তি ১ টাকা। অর্থাৎ তখন কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া হয় ৫৫ থেকে ৬৯ পয়সা।

আবার কোনো যাত্রী যদি ২০ থেকে ২৪ কিলোমিটার যান, তাহলে তাকে ভাড়া দিতে হয় ১২ রুপি। সে ক্ষেত্রে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া হয় ৫০ থেকে ৬০ পয়সা।

২৪ কিলোমিটারের পর থেকে প্রতি চার কিলোমিটারে ভাড়া ১ রুপি করে পড়ে। অর্থাৎ ২৪ কিলোমিটারের বেশি যাত্রায় কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া বাড়ে ২৫ পয়সা করে।

মিনিবাসের ক্ষেত্রে ভাড়ার হার কিছুটা বেশি। তবে সেখানেও দূরত্ব বাড়লে ভাড়ার হার কমে আসে।

সেখানে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া ৮ রুপি। তিন থেকে ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া ৯ রুপি। ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া ১০ রুপি।

১০ থেকে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ১১ রুপি আর ১৬ কিলোমিটারের পর থেকে প্রতি তিন কিলোমিটার অন্তর ভাড়া ১ রুপি করে বাড়বে।

দূরপাল্লার এক্সপ্রেস সার্ভিসের ক্ষেত্রে ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া সাড়ে ৮ রুপি। ছয় কিলোমিটারের পরে অতিরিক্ত কিলোমিটারপ্রতি ৭৫ পয়সা বাড়বে।

আন্তরাজ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে প্রথম ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত ১২ রুপি। ছয় কিলোমিটারের পর অতিরিক্ত প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৭৫ পয়সা বাড়বে।

পশ্চিমবঙ্গে সরকারি বাসের তুলনায় বেসরকারি বাসে ভাড়া কিছুটা বেশি। যেমন কলকাতার ধর্মতলা বাস টার্মিনাল থেকে সরকারি বাসে মালদা যেতে গেলে ২৫৬ রুপি, কিন্তু বেসরকারি বাসে ভাড়া পড়ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ রুপি।

রাজ্যের বেসরকারি কোনো বাসে ফেয়ার চার্ট নেই। দূরপাল্লার বেসরকারি বাসের ভাড়া বাসের সিট আর দূরত্বের ওপর নির্ধারণ হয়। সেখানেও দূরত্ব যত বেশি হয়, ভাড়ার হার তত কম।

এ বিভাগের আরো খবর