বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেয়ার দর বাড়লেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ছেই বেক্সিমকোতে

  •    
  • ১০ নভেম্বর, ২০২১ ০৯:২০

গত দেড় বছরে পুঁজিবাজারে উত্থানে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এই কোম্পানির। এ সময় শেয়ার দর বেড়ে প্রায় ১৪ গুণ হয়ে গেছে। এখনও তা ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যেও চার মাসে ১১ কোটি ৬৮ লাখ ১৩ হাজার ৩০৬টি শেয়ার কিনেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

গত দেড় বছরে পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি হারে দর বৃদ্ধি পাওয়া বেক্সিমকো লিমিটেডের আরও সোয়া কোটির মতো শেয়ার অক্টোবরে কিনেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। আগের মাসে তারা ৪৪ লাখ শেয়ার বিক্রি করলেও চার মাসে কিনেছে সাড়ে ১১ কোটির বেশি শেয়ার।

গত বছরের জুলাইয়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১৩ টাকা। সেটি এখন ছাড়িয়ে গেছে ১৭০ টাকা। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পুঁজিবাজারে দর সংশোধনে বেশির ভাগ কোম্পানি ব্যাপক হারে দর হারালেও এই সময়েও বেড়েছে শেয়ার দর।

২০২০ সালের জুনে অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের ২২ দশমিক ৪১ শতাংশ ধারণ করেছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। আর ওই বছরের জুলাই থেকে শেয়ার দরের উত্থান শুরু হয়। আর দাম একপর্যায়ে সেপ্টেম্বরে ৩০ টাকা, ডিসেম্বরের শুরুতে ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। সেখানে কয়েকটির ঘুরপাক খাওয়ার পর জানুয়ারিতে আবার ৭০ আর ফেব্রুয়ারিতে ৯০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

এরপর সেখান থেকে এপ্রিল নাগাদ নেমে আসে ৭০ টাকার নিচে। আর মে মাসের মধ্যে আবার তা ৯০ টাকার ঘরে ওঠে।

চলতি বছরের জুন ও জুলাই মাসে দাম ৯০ টাকার ঘরে ঘুরপাক খেয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ লেনদেন হচ্ছিল।

উত্থানের এই সময়ে বেক্সিমকোর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিপুলসংখ্যক শেয়ার বিক্রি করেছে।

গত বছরের জুন শেষে মোট শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হিস্যার চেয়ে চলতি বছরের জুন শেষে তা কমে যায় প্রায় ৯ শতাংশ। গত ৩০ জুন মোট শেয়ারের ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ ধারণ করে থাকে তারা।

অর্থাৎ এক বছরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সব মিলিয়ে শেয়ার সংখ্যা ৭ কোটি ৭০ লাখ ২৮ হাজার ৪২৯টি।

এরপর চলতি বছরের জুলাই থেকে চিত্র ঘুরে যায়। শেয়ার দরও বাড়তে থাকে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বেক্সিমকোর শেয়ারে হিস্যাও বাড়াতে থাকে।

প্রথম এক মাস শেয়ার দর সেভাবে না বাড়লেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মালিকানা বাড়ে ব্যাপক হারে। গত ৩০ জুন শেয়ার দর ছিল ৮৯ টাকা ৫০ পয়সা, সেখান থেকে এক মাস পর ২৯ জুলাই তা গিয়ে দাঁড়ায় ৯১ টাকা ৩০ পয়সায়।

ওই মাস শেষে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হিস্যা বেড়ে হয় ১৮ দশমিক ২২ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসেই বাড়ে ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।

পুঁজিবাজারে অনুমোদন পাওয়া প্রথম সুকুক বন্ডে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ২০০ মেগাওয়াটের আর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৩০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎ করছে বেক্সিমকো লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সি পাওয়ার।

অর্থাৎ এই মাসে কোম্পানিটির ৪ কোটি ৩ লাখ ১০ হাজার ৬৬৮টি শেয়ার কেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

পরের মাস আগস্টে দাম আরও বাড়ে, আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনাও বাড়িয়ে দেয়। এই মাস শেষে শেয়ার দর বেড়ে হয় ১০৭ টাকা ২০ পয়সা।

শেয়ার দর ১৫ টাকা ৯০ পয়সা বাড়ার মাসে বেক্সিমকোর মোট শেয়ারের ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ বা ৬ কোটি ৮৯ লাখ ৬৬ হাজার ২৯৫টি কেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

এরপর সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর এক মাসে শেয়ার দর আরও বাড়ে। তবে এই মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার না কিনে বিক্রি করেছে।

সেপ্টেম্বর শেষে শেয়ার দর আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৭ টাকা ২০ পয়সা। এই মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হিস্যা কমে শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ। মোট শেয়ারের ২৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ মালিকানা থাকে তাদের হাতে।

অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের এই সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার ৪৯০টি শেয়ার বিক্রি করেছে।

অক্টোবরে বেক্সিমকোর শেয়ার দর দেয় আরেক লাফ। এই মাস শেষে দর বেড়ে হয় ১৬৩ টাকা ১০ পয়সা। আগের মাসে শেয়ার বিক্রি করলেও দাম বাড়িয়ে আবার শেয়ার কেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

এই মাস শেষে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হিস্যা বেড়ে হয়েছে ২৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ এই এক মাসে মোট শেয়ারের ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ, অর্থাৎ এক কোটি ২১ লাখ ৮০ হাজার ৮৩২টি শেয়ার কিনেছে তারা।

গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসেই বেক্সিমকোর ১১ কোটি ৬৮ লাখ ১৩ হাজার ৩০৬টি শেয়ার কিনেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এই সময়ে শেয়ার দর বেড়েছে ৭৩ টাকা ৬০ পয়সা।

আগ্রহ কেন

এক যুগ আগে পুঁজিবাজারে মহাধসের আগেও অন্যান্য কোম্পানির মতো বেক্সিমকোর শেয়ার দরেও ব্যাপক উত্থান হয়েছিল।

সেই ধসের আগে বেক্সিমকোর শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৪৫ টাকার বেশি। সেটি এক দশক ধরেই ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। এর মধ্যে ২০২০ সালে এই সময়ের সর্বনিম্ন আয় করে কোম্পানিটি। ওই বছর শেয়ারপ্রতি আয় হয় ৫১ পয়সা।

২০২০ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিকেও আয় আহামরি কিছু হয়নি। এই তিন মাসে শেয়ারপ্রতি আয় হয় ১৪ পয়সা। কিন্তু এরপর করোনার মধ্যে পরিস্থিতি ঘুরে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ আয় করে কোম্পানিটি। আর এই সুরক্ষাসামগ্রী তৈরির জন্য প্রায় ৯০০ কোটি টাকায় পিপিই পার্ক তৈরি করে বেক্সিমকো।

রপ্তানি শুরু করার পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার আনুষ্ঠানিকভাবে এই পার্ক উদ্বোধন করেন। সেদিন জানানো হয়, এই পার্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্র বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পিপিই ও অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রী কিনবে।

এই বিষয়টি ছাড়াও বেক্সিমকোর দুটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পাওয়াও শেয়ার দর উত্থানে ভূমিকা রেখেছে।

এসব পণ্য রপ্তানিতে ভর করে পাশাপাশি অন্য আয় যোগ হওয়ায় গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৭৮ পয়সা, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তৃতীয় প্রান্তিকে ১ টাকা ৯২ পয়সা এবং এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি ৪ টাকা ৩০ পয়সা আয় করে কোম্পানিটি।

অর্থাৎ প্রতি প্রান্তিকেই কোম্পানিটির আয় আগের তুলনায় বাড়ছে। আর গত জুন সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৭ টাকা ৫৩ পয়সা আয় গত অন্তত আট বছরের সর্বোচ্চ।

বেক্সি পাওয়ার নামে বেক্সিমকোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান দুটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কাজ পেয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নে একটি ২৮০ মেগাওয়াট ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় নির্মিত হচ্ছে ৫৫ মেগাওয়াটের আরও একটি কেন্দ্র।

এর মধ্যে গাইবান্ধার কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে তিস্তা সোলার লিমিটেড আর পঞ্চগড়েরটি নির্মাণ করছে করতোয়া সোলার লিমিটেড নামে কোম্পানি। এই দুটি কোম্পানির ৭৫ শতাংশের মালিক বেক্সিমকোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সি পাওয়ার। বেক্সি পাওয়ারের ৭৫ শতাংশের মালিক আবার বেক্সিমকো লিমিটেড।

এই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে উৎপাদনে আসবে।

গত পাঁচ মাসে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের মালিকানার হিস্যার হিসাবনিকাশ।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থায়নের জন্য বেক্সিমকো ৩ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড ছেড়েছে। শুরুতে বিনিয়োগকারীরা এই বন্ড কিনতে চাননি সেভাবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক পরে জানায়, তারা বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবে এবং এরপর বন্ডের সাবস্ক্রিপশন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে বলে বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কারা

পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। পুঁজিবাজারে তাদের সবচেয়ে দক্ষ বিনিয়োগকারী হিসেবে দেখা হয়।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হচ্ছে মূলত অনুমোদিত স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য বা ব্রোকারেজ হাউস।

ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, কাস্টডিয়ান, ট্রাস্টি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোও পুঁজিবাজারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত।

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক বা তফসিলি ব্যাংক পুঁজিবাজারে যে বিনিয়োগ করে থাকে তাদেরও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বেক্সিমকোর শেয়ারে এই ব্যাপক আগ্রহের বিষয়ে ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে সবচেয়ে দক্ষ বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বেক্সিমকোর ক্ষেত্রেও হয়তো তাদের কোনো হিসাব-নিকাশ আছে, ফলে এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ছে।’

তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ছে বলেই কোম্পানির শেয়ারে লাভ হবে- এই ধারণা না করতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতি পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, ‘তাদের যে লোকসান হয় না সেটি কিন্তু নয়।’

দেবব্রত বলেন, ‘বেক্সিমকোর ব্যবসার যে অগ্রগতি সেটি পুরোটাই দৃশ্যমান। এ ছাড়া করোনার সময় যেসব সেক্টর সবচেয়ে ভালো ব্যবসা করছে, তার মধ্যে আছে এরা।

‘বিশেষ করে বেক্সিমকো লিমিটেডের পুঁজিবাজারে যে দাপট তার মূল কারণ হচ্ছে সুকুক। সুকুকের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা যেভাবে লাভবান হবেন, সেটির আরও প্রচারণার প্রয়োজন ছিল। সুকুক নতুন প্রোডাক্ট হওয়ায় প্রথম দিকে ধাক্কা লেগেছিল। কিন্ত এখন বিনিয়োগাকরীরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হচ্ছেন। ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর