শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকায় একদিকে যেমন হাতির আতঙ্কে মানুষ, তেমনি হাতিও আছে মানুষের আতঙ্কে। হাতির আশ্রয়স্থলে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতবাড়ি। আশ্রয় ও খাদ্যের সন্ধানে তাই ফসলের ক্ষেত এবং বাড়িঘরে হাতি ঢুকে পড়লে শুরু হচ্ছে হাতি-মানুষে লড়াই।
দেশের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় একসময় বিরাট এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল। ধীরে ধীরে তা সংকুচিত হয়ে এসেছে। পাহাড়ে আদিবাসীদের বসবাস থাকলেও নানা জায়গা থেকে মানুষ পাহাড় কেটে বসতবাড়ি গড়ে তুলছেন। বর্তমানে বন বিভাগের শত শত একর জমি দখলের কবলে।
একসময় এ পাহাড়ে হাতিসহ নানা জীবজন্তুর অভয়ারণ্য থাকলেও মানুষ বন দখল করে বসবাস শুরু করায় হারিয়ে যাচ্ছে প্রাণীর আবাসস্থল। বেশির ভাগ বন্য প্রাণী এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট আছে শুধু হাতি।
একাধিক প্রজাতির হাতির দল বাংলাদেশ ও ভারতের পাহাড়ি এলাকায় বিচরণ করে। কিন্তু বাংলাদেশ অংশে হাতির আবাসস্থল মানুষের দখলে থাকায় নিরাপদে থাকতে পারছে না হাতি। স্থানীয় লোকজন হাতিকে নানাভাবে বিরক্ত করছেন। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে হাতি।
পাহাড়ে হাতির খাদ্যসংকট থাকায় তারা নেমে আসছে লোকালয়ে। ক্ষতি করছে ধান, শাকসবজিসহ নানা কৃষি আবাদ। এতে কৃষকেরা আছেন হাতির আতঙ্কে।
আর এ সময় হাতি তাড়াতে নানা উপায় গ্রহণ করছেন স্থানীয় কৃষক। ফসল ও বাড়িঘর বাঁচাতে দেয়া হচ্ছে বিদ্যুতায়িত তারের বেড়া। ফলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রতি বছর মারা পড়ছে হাতি। তবে বন বিভাগ সব সময় তা অস্বীকার করে আসছে।
এদিকে হাতি তাড়াতে গিয়ে প্রতিবছরই মানুষ মারা পড়ছেন হাতির আক্রমণে।
অন্যদিকে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে প্রশাসন কাজ করছে বলে জানালেন ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আল মাসুদ। তিনি বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসনের নির্দেশে কাজ করে যাচ্ছি। সমস্যাটি জটিল। এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। স্থানীয়ভাবে তা সমাধান করা সম্ভব নয়।’
জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশিদ জানান, ‘আমরা হাতির নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তোলার উপায় খুঁজছি।’
চট্টগ্রাম থেকে আসা বাংলাদেশ এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের প্রশিক্ষক ও হাতি বিশেষজ্ঞ আদনান আজাদ বলেন, বিশাল এলাকায় বিস্তৃত ছিল সীমান্তবর্তী এ গারো পাহাড়, ছিল ঘন জঙ্গল। এখানেই হাতির অভয়ারণ্য ছিল। কিন্তু মানুষ বন কেটে বসতি স্থাপন ও ফসল আবাদ শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, হাতিরা ভাবছে, এখনও এটিই তাদের আবাসস্থল। এখানে হাতি নয়, মানুষই অনুপ্রবেশ করেছে। আর হাতি যখন তার আবাসস্থলে ফিরে আসছে, তখন মানুষ তাদের নানাভাবে অত্যাচার করছে। হাতি নিজেদের রক্ষা করতেই মানুষের ওপর হামলা করছে। এতেই শুরু হয়েছে হাতি-মানুষে লড়াই। এ থেকে বাঁচতে হলে এখানে করলা, মরিচ, লেবু, তামাকসহ এমন ফসলের চাষ করতে হবে, যা হাতি পছন্দ করে না। আর গড়ে তুলতে হবে হাতির অভয়ারণ্য।
গত দুই দশকে হাতির আক্রমণে নিহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন শতাধিক মানুষ। বাড়িঘর, ফসল, গাছপালার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কয়েক কোটি টাকার ওপরে। অপর দিকে একই সময়ে নানা কারণে মারা গেছে ১৮টি হাতি। তাই পাহাড়ে হাতির সমস্যা সমাধানে কাঁটাযুক্ত গাছ রোপণ, এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম গঠন, বৈদ্যুতিক ফেঞ্চিংসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণের দাবি স্থানীয়দের।