৩৪ বছর আগে ১৯৮৭ সালের এই দিনে বুকে-পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নীপাত যাক’ স্লোগান লিখে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিলেন নূর হোসেন। গুলিতে শহীন হন তিনি।
রক্তদানের মধ্য দিয়ে তৎকালীন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং অব্যাহত লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসকের পতন ঘটে।
শহীদ নূর হোসেনের ভাই আলী হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, বর্তমানে নূর হোসেনের মা বেঁচে আছেন। বাবা ২০০৫ সালে মারা গেছেন।
আলী হোসেন তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলেন, ‘আমার ভাই নূর হোসেনের মতো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা মারা গেছেন, তাদের সবার পরিবারের খোঁজ যেন রাখা হয়। কারণ দেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে, তা তাদের রক্তের অবদানে। সেই পরিবারগুলো কোথায়, তাদের উন্নয়ন হচ্ছে কী না সেটা দেখা সরকারের দায়িত্ব। এটা শহীদ নূর হোসেন দিবসে আমাদের দাবি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো আছি। সরকার আমাদের খোঁজ নিচ্ছে। আমাদের এক ভাইকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি অন্য শহীদ পরিবারগুলোর কথা বলছি।’
নূর হোসেন যে কারণে জীবন দিয়ে গেছেন, তা বর্তমান সময়ে এসে কতটুকু স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করেন জানতে চাইলে আলী হোসেন বলেন, ‘৯০ সালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দলই গণতান্ত্রিক আন্দোলন করেছে। পরে দুটো দলই ক্ষমতায় আসছে। পরে তারা তাদের মতো চেষ্টা চালালেও তারা সেইভাবে গণতন্ত্র দাঁড় করাতে পারেনি। শহীদরা গণতন্ত্রের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন, কিন্তু পুরোপুরি গণতন্ত্র আসেনি।’
শহীদ নূর হোসেন পরিবারের এই সদস্য বলেন, ‘আমি প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলকেই বলব, তারা যেন কাঁদা ছোড়াছুড়ি না করে, তারা যেন দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে। তা হলে নূর হোসেনের মতো যারা গণতন্ত্রের জন্য শহীদ হয়েছে, তাদের আত্মা শান্তি পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে খুনোখুনির রাজনীতি চাই না।’
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর দেশের দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একত্র হয়ে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের লক্ষ্যে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করে। এর আগে ১৯৮২ সালে একটি সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন এরশাদ এবং ১৯৮৭ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন। কিন্তু বিরোধী দলগুলো তার এই নির্বাচনকে জালিয়াতি বলে অভিযুক্ত করে। তাদের একমাত্র দাবি ছিল, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা।
অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় একটি মিছিলে নূর হোসেন অংশ নেন এবং প্রতিবাদ হিসেবে বুকে পিঠে সাদা রঙে লিখিয়ে নেন: ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক।’
মিছিলটি ঢাকা জিপিওর সামনে জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি এলে পুলিশের গুলিতে নূর হোসেনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে জায়গাটি শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার হিসেবে পরিচিত।