বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভোট নিয়ে সংঘাতে আ.লীগ কর্মীরা, নিশ্চুপ কেন্দ্র

  •    
  • ১০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:৩৯

ইউপি নির্বাচন নিয়ে দলে অন্তর্কোন্দল আর হানাহানির ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিশ্চুপ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। বিদ্রোহ ঠেকাতে হুঙ্কার আর বহিষ্কারেই সীমাবদ্ধ তাদের কার্যক্রম। জেলা উপজেলা পর্যায়ের নেতাদেরও এ ব্যাপারে কোনো তৎপরতা নেই, বরং অনেক নেতার বিরুদ্ধে এসব সংঘাতে মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নামছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা।

দেশজুড়ে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নানা স্থানেই ঘটছে সংঘাত-সহিংসতা। প্রাণহানি, বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। মাগুরা, মেহেরপুর, নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘর্ষে ঝরেছে প্রাণ।

এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। অন্য বিরোধী দলগুলোরও তেমন একটা তোড়জোর নেই। তবু কেন এত সংঘাত আর প্রাণহানি?

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভোটে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ। বেশিরভাগ ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। নিজেদের অনুসারীদের নিয়ে নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। বেশিরভাগ সংঘাতের ঘটনা ঘটছে দলের প্রার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক প্রার্থীর অনুসারীদের। সংঘাত যারা মারা যাচ্ছেন তারাও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাব বিস্তার নিয়েও সংঘর্ষ বাঁধছে।

দলে অন্তর্কোন্দল আর হানাহানির ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিশ্চুপ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। বিদ্রোহ ঠেকাতে হুঙ্কার আর বহিষ্কারেই সীমাবদ্ধ তাদের কার্যক্রম। জেলা উপজেলা পর্যায়ের নেতাদেরও এ ব্যাপারে কোনো তৎপরতা নেই, বরং অনেক নেতার বিরুদ্ধে এসব সংঘাতে মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নামছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা।

গত সোমবার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ইলিয়াস রহমানের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার চালান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আমজাদ। এতে স্থানীয় পর্যায়ে দলে বিরোধ আরও বাড়ছে। এই বিরোধ রূপ নিচ্ছে সংঘাতে।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সহিংসতার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলো দলীয় প্রতীকের বাইরে হতো। এ কারণে এটা সেটেল-ডাউন করতে কিছুটা সময় লাগছে। দ্বিতীয় কারণ একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক প্রার্থী থাকে। নৌকা মার্কা ছাড়াও অনেক প্রার্থী থাকে। এরপর ওয়ার্ডের প্রার্থী আছে। সব মিলিয়ে একটি ইউনিয়নে প্রায় ৭০ জন নির্বাচন করছে। সুতরাং একে অপরের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি, মিছিলে-মিছিলে মুখোমুখির কারণে দ্বন্দ্বগুলো সৃষ্টি হয়, যাতে কখনও কখনও মানুষ মারা যাচ্ছে, যা কখনও কাম্য নয়।’

আগের চেয়ে সহিংসতার বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সহিংসতা আগেও হতো। তবে আমি মনে করি, কখনও বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধনে আবার কোনো কোনো জায়গা দলীয় কিছু নেতাদের ইন্ধনে এই গোলমালগুলো হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে কঠোর ব্যবস্থার ঘোষণা হয়েছে। যারা বিদ্রোহী হচ্ছেন, তারা কখনও আর দলের মনোনয়ন পাবেন না।’

ইউপি নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বড় সংঘাতের ঘটনাটি ঘটেছে মাগুরায়। জেলার সদর উপজেলার জগদল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই ভাইসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২০ জন।

মাগুরায় নিহত সবুর মোল্যার বাড়িতে স্বজনরা

গত ১৫ অক্টোবর দক্ষিণ জগদল গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। এতে নিহতরা হলেন সবুর মোল্যা, রহমান মোল্যা, কবির হোসেন এবং ইমরান।

এই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য (মেম্বার) নজরুল হোসেন ও আরেক সদস্য প্রার্থী সৈয়দ হাসান আলীর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

মাগুরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, দুই দিন আগে থেকেই পরিকল্পনা করে এই হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

গত ৪ নভেম্বর নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউপি নির্বাচন নিয়ে সংঘর্ষে নিহত হন তিনজন। এতে কমপক্ষে ৫০ জন গুলিবিদ্ধ ও টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।

ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেন এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আসাদুল্লাহ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন।

নিহত তিনজন হলেন আশরাফুল, আমির হোসেন ও খুশি বেগম। তারা সবাই দেলোয়ার হোসেনের সমর্থক।

এর আগে গত ২৬ অক্টোবর এ ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধ হন।

দলীয় দুই নেতার মধ্যে বারবার সংঘাত ও প্রাণহানি প্রসঙ্গে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, ‘আমাদের একজন নেতা আসাদউল্লাহ আসাদ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে তিনি তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, দুজন মেম্বার সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্বে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে কারও ইন্ধন থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের দলীয় কোনো প্রভাব নেই।’

তিনি বলেন, ‘হত্যার ঘটনায় একটা মামলা হয়েছে। এটা প্রশাসনিক বিষয়। পুলিশ তদন্ত করে যা পাবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে আমাদের বলার কিছু নেই। তবে দলীয়ভাবে আমরা প্রার্থীদের অনুনয় বিনয় করছি, সংঘাত এড়িয়ে এক সাথে এক জোট হয়ে কাজ করার জন্য। এরপরও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যারা নির্বাচনে অংশ নেবে, তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’

নির্বাচনি সংঘাতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে মেহেরপুরেও। গত ৮ নভেম্বর সকালে মেগেরপুরের গাংনীতে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই ভাই নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।

নিহত দুজন হলেন লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের জাহারুল ইসলাম ও তার ভাই সাহাদুল ইসলাম।

কাথুলী ইউপি নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুই সদস্য প্রার্থী আজমাইন হোসেন ও আতিয়ার রহমানের কর্মীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।

এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ খালেক নিউজবাংলাকে জানান, হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এটি পুলিশ দেখবে। এসব ঘটনা এড়ানোর দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আর যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এ ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।

খোদ রাজধানীতেও ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনা। গত ৩১ অক্টোবর যাদবপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী আবদুল মজিদের কর্মীদের ওপর বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজুর কর্মীরা হামলা চালায়। এতে আহত হয়ে পরদিন মারা যান শিহান নামে এক যুবক। আলমগীর হোসেন নামে আওয়ামী লীগের আরেক কর্মী গুরুতর আহন হন।

এ ছাড়া বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়ন, পঞ্চগড় উপজেলার ভজনপুর, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মাহমুদপুরে, পটুয়াখালীর বাউফলের নওমালা ইউনিয়নে, ফরিদুপুরের ভাঙ্গায়, কুমিল্লার তিতাস, সিলেটের সদর উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সংঘাত, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

দলীয় নেতা-কর্মীদের এমন সংঘাতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ‘আমরা তো চাই নির্বাচনে কোনো সহিংসতা না হোক। এ জন্য আমাদের সাধারণ সম্পাদক কড়া বিবৃতি দিয়েছেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা বিদ্রোহী তারা যাতে বসে যায়। আশা করি, আগামী নির্বাচনগুলোতে সহিংসতা কমে আসবে। তার আগে আমাদের সবাইকে মনোযোগী হতে হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মনোযোগী হতে হবে। আমরাও বিদ্রোহীদের পরামর্শ দিয়ে নিবৃত করার চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে কঠোর হবে বলেছে। আমি মনে করি দুই একটা নির্বাচন গেলে আমরা সেটেল-ডাউন করব।’

দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের মধ্যে কিছু কিছু লোক বিদ্রোহী হচ্ছে। এই বিদ্রোহী হওয়ার পেছনে আমরা কারণ হিসেবে দেখেছি আমাদের দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীরা একটি ইউনিয়নে অনেকজন আছে। আমি মনে করি প্রতিটি ইউনিয়নে প্রায় ১০ জন নেতা-কর্মী আছে, যারা চেয়ারম্যান হওয়ার উপযুক্ত, কিন্তু ১০ জনকে তো মনোনয়ন দেওয়া যাবে না।

‘একজনকে দিলে বাকি ৯ জন মনে করে, আমি আমার মূল্যায়ন পেলাম না। এতে অনেক নেতা আবেগের কারণে বিদ্রোহী হয়েছে। আমরা তাদের বোঝাচ্ছি, কেন্দ্রীয়ভাবে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দল থেকে বোঝানো হচ্ছে। কেউ কেউ বসে যাচ্ছে, কেউ কেউ না বসে দাঁড়িয়ে থাকছে। অনেক ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত ইচ্ছা করে সহিংসতা সৃষ্টি করছে, জাতীয় নির্বাচনের যা তারা করার চেষ্টা করেছিল।’

এ বিভাগের আরো খবর