বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাকায় সিএনজিচালিত বাস আসলে কত?

  •    
  • ৯ নভেম্বর, ২০২১ ১৯:৪০

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিআরটিএ থেকে শুরু করে পরিবহন খাত নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন পক্ষ, এমনকি বাস মালিক সমিতি কারও কাছেই এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান নেই। রাজধানীর যেসব পেট্রল পাম্প বা সিএনজি স্টেশন থেকে বাসের জ্বালানি সরবরাহ করা হয়, সেখান থেকেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অনেকটা ধারণার ভিত্তিতে প্রচার হচ্ছে সিএনজিতে ৯৫ শতাংশ বাস চলার তথ্য।    

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরই বাসের ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নামেন মালিকেরা। তাদের আকস্মিক ধর্মঘটের মুখে সরকার বাস ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।

সরকারের সঙ্গে মালিকপক্ষের সমঝোতা অনুযায়ী, দূরপাল্লার বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ এবং মহানগরে ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এই বাড়তি ভাড়া কার্যকর হয়েছে শুধু ডিজেলচালিত বাসের ক্ষেত্রে, সিএনজিচালিত পরিবহনের ভাড়া আছে আগের মতোই। তবে সিএনজিচালিত বাসেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে প্রথম দিনেই।

সিএনজিচালিত বাসেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, রাজধানীসহ সারা দেশে চলা বাসের কত শতাংশ ডিজেল ও সিএনজিচালিত? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ঢাকায় বর্তমানে যত বাস চলাচল করে তার ৯৫ শতাংশই জ্বালানি হিসেবে সিএনজি ব্যবহার করে। ডিজেলে চলে মাত্র পাঁচ শতাংশ বাস। সারা দেশেও শতাংশের এই হারটি প্রায় একই।

তবে এই তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিউজবাংলার অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি। দেখা গেছে, বিআরটিএ থেকে শুরু করে পরিবহন খাত নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন পক্ষ, এমনকি মালিক সমিতি কারও কাছেই এ সংক্রান্ত কোনো পরিসংখ্যান নেই। রাজধানীর যেসব পেট্রল পাম্প বা সিএনজি স্টেশন থেকে বাসের জ্বালানি সরবরাহ করা হয় সেখান থেকেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এসব পেট্রল পাম্প বা সিএনজি স্টেশনসংশ্লিষ্টদের ধারণা, ঢাকায় অর্ধেকের বেশি বাস এখন ডিজেলচালিত। কোনো কোনো বাসে ব্যবহার করা হচ্ছে দুই ধরনের জ্বালানি।

জার্মানভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমের বাংলা সংস্করণের প্রতিবেদনে বিআরটিএর বরাত দিয়ে দাবি করা হয়েছে, ঢাকায় ৯৫ শতাংশ বাসই এখন সিএনজিচালিত৷ এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী, ঢাকার ভেতরে মোট বাস ১২ হাজার ৫২৬টি৷ তার মধ্যে গ্যাসে চলে ১১ হজার ৯০০টি৷ ডিজেলে চলে ৬২৬টি৷ ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস মোট ১৬ হাজার৷ তার মধ্যে গ্যাসে চলে ১১ হাজার ২০০৷ ডিজেলে চলে চার হাজার ৮০০৷ সারা দেশে মোট বাস ৭৮ হাজার৷ তার মধ্যে গ্যাসে চলে ৪৬ হাজার ৮০০টি৷ ডিজেলে চলে ৩১ হাজার ২০০টি৷’

তবে বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকাসহ সারা দেশে এখন ডিজেল ও সিএনজিতে কত বাস চলছে, সে বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। ২০০৮ সালে এ বিষয়ে পরিসংখ্যান তৈরির একটি উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি বাস্তবায়ন করা যায়নি।

বিআরটিএ-এর পরিচালক (সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি) মাহবুব ই রাব্বানী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ডেটাবেজে এ তথ্যগুলো নেই। কোন কোন কোম্পানির বাস গ্যাসে চলে সেই ডেটাবেজও নেই। ফুয়েলের ওপর নির্ভর করে আমাদের কোনো ডেটাবেজ এখন পর্যন্ত তৈরি করা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘২০০৮-২০০৯ সালের দিকে যখন ডেটাবেজ তৈরির কাজ শুরু হয়, তখন বেশির ভাগ বাস সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছিল। পরে রূপান্তরিত গাড়ির সমস্যার কারণে অনেকে আবার তেলে ফিরে আসে। এর পরে আর গ্যাসের বাস নামেনি।’

বিআরটিএর বরাতে ঢাকার ৯৫ শতাংশ গাড়ি গ্যাসে চলার তথ্য নাকচ করে মাহবুব ই রাব্বানী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্যাসের বাস পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশের বেশি আছে বলে আমার মনে হয় না। এখন সিএনজিচালিত বাস কেউ নামায় না, বেশির ভাগই ডিজেলচালিত।’

ডিজেলে বাস বেশি চলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে যখন গ্যাসের দাম কম ছিল তখন গাড়ি গ্যাসে চলে গিয়েছিল। পরে গ্যাসের দাম বাড়া এবং ইঞ্জিন না টেকার কারণে গাড়িগুলো তেলে চলতে শুরু করে। আর এখন তো গ্যাসের দাম অনেক বেশি। গ্যাসে আগের সুবিধা পায় না বলেই মালিকেরা তেলে ফিরেছে।’

ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকে, ‘৯৫ শতাংশ বাস সিএনজিতে চলার’ তথ্য দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর বরাতে। এই তথ্যের উৎস জানতে চাইলে মোজাম্মেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এই তথ্য বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট ও গণমাধ্যমের কাছ থেকে পেয়েছি।’

তবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনাকে (মোজাম্মেল হক চৌধুরী) এমন কোনো তথ্য দেয়া হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝির কয়েকটি কারণ আছে। আমি মনে করি, ২০১৫ সালের দিকে সিএনজির দাম যখন বাড়ানো হয়, তখন বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বা শ্রমিক ফেডারেশন অনেকটা জোর গলায় বলেছিল, তাদের অধিকাংশ বাস সিএনজিতে চলে। সিএনজির দাম বেড়েছে, ফলে ভাড়া বাড়াতে হবে। আমার মনে হয়, ওটা ধরেই তিনি (মোজাম্মেল) কথাটা বলেছেন।’

ঢাকা শহরে মাত্র ৫ শতাংশ গাড়ি সিএনজিতে চলে, এমন দাবিকে একেবারেই ভিত্তিহীন বলে মনে করছেন অধ্যাপক হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এটা আমার কাছে একেবারেই অসম্ভব মনে হয়।’

বুয়েটের এআরআই ২০১৯ সালে খুব স্বল্প পরিসরে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের জন্য একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল বলে জানান অধ্যাপক হাদিউজ্জামান। ওই প্রকল্পকেন্দ্রিক গণপরিবহনের মাত্র ২৫ মালিকের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষাটি করা হয়। এতে দেখা যায়, সুনির্দিষ্টভাবে ওই রুটের ২৫ জন মালিকের ৮০ ভাগ গাড়ি চলে সিএনজিতে, আর ২০ ভাগ গাড়ি চলে ডিজেলে।

হাদিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সে সময় কিন্তু একটি ছোট স্যাম্পল নিয়ে কাজ করেছি। এতে বাসমালিকদের বাসের সংখ্যা বিবেচনা করা হয়নি। এই স্যাম্পল থেকে আমরা দেখতে পেয়েছি, ৮০ ভাগ মালিক বলছেন তারা সিএনজি দিয়ে গাড়ি চালান।

‘পুরো ঢাকা শহরের যত বাস চলে সবগুলোর ওপর জরিপ করা হলে যেটা আমি বলছি ৮০ ভাগ, সেটা ৫০ ভাগেও নামতে পারে।’

এর আগে ২০১০ সালে বুয়েট আরেকটি গবেষণা করেছিল, সেখানে দেখা গেছে ৭০ শতাংশ গাড়ি সিএনজিতে চলে। অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ‘২০১০ সালে ঢাকা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সার্ভে করা দেখা হয়েছিল। তখন ৭০ শতাংশ গাড়ি সিএনজিচালিত তথ্য পাওয়া গেছে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের যে গবেষণা, সেখানে আমরা অল্প স্যাম্পল নিয়েছিলাম। সেটাকেই অনেকে ভুল করে ৮০ ভাগ মনে করছে। প্রাইভেট গাড়ির ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে। ২০১০ সালে দেখেছি ৮২ ভাগ, ২০১৬ সালে এসে সেটা ৯০ ভাগে উন্নীত হয়েছে। তার মানে সবকিছুই বাড়তির দিকে। সেই হিসাবে তারা অনুমান করে নিচ্ছে এটাও (সিএনজিচালিত গণপরিবহন) ৯০ ভাগের বেশি।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে এখন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। সাড়ে ১২ হাজারের মতো অনুমোদিত বাস আছে, যা ঢাকা শহরে চলতে পারবে। এর মধ্যে সাড়ে ৫ হাজার চলছে।’

পেট্রল পাম্প ও সিএনজি স্টেশনের চিত্র কী

ঢাকায় সিএনজি ও ডিজেলচালিত বাসের সংখ্যা কেমন, সে বিষয়ে ধারণা পেতে নগরীর মিরপুর ও গাবতলী এলাকার ১৯টি পেট্রল পাম্প ও সিএনজি স্টেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।

এর মধ্যে গাবতলী এলাকায় গ্যাস ও তেলের পাম্প ছিল আটটি ও মিরপুর এলাকার ১১টি।

গাবতলী এলাকার মোহনা ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার ইউনুস আলী নিউজবাংলাকে জানান, তাদের পাম্প থেকে প্রতিদিন গড়ে ঢাকা সিটির ১২০টি বাস তেল নেয়। একই পাম্প থেকে কোনো বাস গ্যাস নেয় না।

শাহানাজ ফিলিং স্টেশনের হেড অফ অ্যাকাউন্টস সুমন খন্দকার জানান, তাদের পাম্প থেকে প্রতিদিন আনুমানিক ১৫০ বাস তেল নেয়। এসপি ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার মাধব কর্মকার জানান, তারা প্রতিদিন আনুমানিক ১০০ বাসে তেল সরবরাহ করেন। এই ফিলিং স্টেশন থেকেও কোনো বাস গ্যাস নয় না।

যমুনা ফিলিং স্টেশন শুধু জ্বালানি তেল বিক্রি করে। এখানকার কর্মী সহিদুল জানান, তারা কোনো বাসে তেল বিক্রি করেন না। অন্যদিকে নাভানা সিএনজি স্টেশনের শিফট ইনচার্জ ইমাম হোসেন জানান, তারা সাধারণত বাসে গ্যাস সরবরাহ করেন না।

ডেনসো সিএনজি পাম্প থেকে দিশারি পরিবহনের একটি বাস গ্যাস নেয় বলে জানান ক্যাশিয়ার আকবর হোসেন। আর পূর্বাচল গ্যাস ফিলিং স্টেশনের ইঞ্জেক্টর বশির আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, তারা আশীর্বাদ পরিবহনের দুটি বাসে গ্যাসের জোগান দেন।

মিরপুর-১২ থেকে তালতলা পর্যন্ত আটটি গ্যাস স্টেশন ও তিনটি পেট্রল পাম্প রয়েছে।

এই এলাকার রিফুয়েলিং অ্যান্ড কনভার্সন সেন্টার থেকে শিকড়, বিহঙ্গ, আশীর্বাদ ও বিআরটিসি পরিবহনের ৫০ বাস প্রতিদিন গ্যাস নেয় বলে জানান স্টাফ মো. রুবেল। ইন্ট্রাকো সিএনজি অ্যান্ড এলপিজি থেকে সেফটি, মিরপুর লিংক, আশীর্বাদ ও বিহঙ্গ পরিবহনের ৪০টি বাস গড়ে প্রতিদিন গ্যাস নেয় বলে জানান ম্যানেজার মাসুদ।

স্ক্যামকো সিএনজি স্টেশনের সুপারভাইজার আলাউদ্দিন জানান, সেফটি, বিকল্প ও মিরপুর লিংকের তিনটি বাসে তারা গ্যাস দেন। মিনারভা সিএনজি স্টেশনের আপারেটর নজরুল ইসলাম জানান, তাদের পাম্প থেকে কোনো বাস গ্যাস নেয় না। আর ঢাকা সিএনজি লিমিটেডের ইঞ্জিনিয়ার মোক্তার হোসেন জানান, বিহঙ্গ পরিবহনের পাঁচটি বাসে তারা গ্যাস সরবরাহ করেন।

শাহজালাল সিএনজি স্টেশনের ম্যানেজার সারোয়ার হোসেন জানান, তারা পাঁচটি বাসে গ্যাস দেন। নাম প্রকাশ না করে মনি সিএনজি স্টেশনের এক কর্মী জানান, তিনটি বাস গ্যাস নেয় তাদের স্টেশন থেকে।

অন্যদিকে, সোবহান ফিলিং অ্যান্ড সারভিসিং স্টেশন থেকে প্রতিদিন ১৫টি বাসে তেল নেয় বলে জানান সুপারভাইজার মাসুদ ইসলাম। এনার্জি প্লাসের ইঞ্জিনিয়ার তাপস রায় জানান, তাদের কাছ থেকে কোনো বাস গ্যাস নেয় না। এএস ফিলিং স্টেশনের কর্মী লুৎফর রহমান জানান, তারা প্রতিদিন গড়ে চারটি বাসে তেল সরবরাহ করেন। আর তালতলা এলাকার ফাসান ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার সুজন মিয়ার হিসাবে, তাদের কাছ থেকে তেল নেয় প্রতিদিন গড়ে ১৩০টি বাস।

নিউজবাংলা যে ১৯টি পেট্রল পাম্প ও সিএনজি স্টেশনের তথ্য পেয়েছে, সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুই এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ৬২৮টি গাড়ি তেল ও গ্যাস নিচ্ছে। এর মধ্যে ৫১৯টি গাড়ি তেল নিচ্ছে, আর ১০৯টি নিচ্ছে সিএনজি। এই হিসাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ডিজেলচালিত গাড়ি ৮২.৬৪ শতাংশ এবং গ্যাসে চলছে ১৭.৩৬ শতাংশ বাস। তবে অনেক বাস মিশ্র জ্বালানি ব্যবহার করায় শতাংশের প্রকৃত হিসাব বের করা কঠিন।

কী বলছেন বাসমালিক-শ্রমিকেরা

ঢাকা শহরে ‘৯৫ শতাংশ বাস গ্যাসচালিত’ এমন তথ্য মানছেন না ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি একটা কাল্পনিক নিউজ। কিসের ভিত্তিতে এই নিউজ করেছে জানি না। ঢাকা শহরে গ্যাসচালিত ম্যাক্সিমাম ৫০০ গাড়ি থাকতে পারে। ঢাকায় ৯৫ শতাংশ গাড়ি ডিজেলে চলে।’

তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ৮-১০ বছর আগে বিআরটিএর কাছে গ্যাসের গাড়ির তথ্য ছিল, পরে বেশির ভাগ বাস ডিজেলে চলে আসে। এর পরে তাদের কাছে আর তথ্য নেই। যারা ৯৫ শতাংশের কথা বলছে তারা পুরোনো রেকর্ড নিয়ে কথা বলছে।’

বাস কেন সিএনজি থেকে ডিজেলে আসে-যায়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আট থেকে ১০ বছর আগে মানুষ গ্যাসের গাড়ির ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তখন তেলের থেকে গ্যাস বেশি সাশ্রয়ী ছিল। পরে দেখা গেল, গ্যাসের গাড়ি ছয় মাসও টেকে না, ছয় মাস পরে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। তখন অনেকেই গ্যাসের গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছে, অনেকে গ্যাস থেকে তেলে চলে এসেছে।’

ডিজেল ও সিএনজিচালিত বাসের সংখ্যার তথ্য মালিক সমিতির কাছে আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে চেক করা শুরু করেছি। এ বিষয়ে গতকালও (সোমবার) মিটিং ডাকা হয়েছিল। ঢাকা শহর এবং শহরতলিত ছয় হাজার বাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫০০ বাস গ্যাসে থাকতে পারে। এর বেশ কিছু ঢাকা হয়ে ঢাকার আশপাশে যায়।

‘শুধু ঢাকার ভেতরে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার বাস হতে পারে। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও নাই। এই কাজ চলছে। ৯০ শতাংশ কাজ এগিয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার পরে সঠিক সংখ্যা জানা যাবে।’

তেলের ও গ্যাসের গাড়ির সুবিধা-অসুবিধা জানতে চাইলে শিকড় পরিবহনের চালক আফির উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্যাসে বাস চালালে ছয় মাস পরপর ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। গ্যাস তো শুকনা জিনিস, তাই ইঞ্জিন ডাউন হয়। গ্যাসের গাড়ি বন্ধ হয়ে গেলে সহজে স্টার্ট করা যায় না। তেলের গাড়ি সহজে স্টার্ট করা যায়। এ ছাড়া হঠাৎ করে গ্যাস ফুরিয়ে গেলে ওই গাড়ি গ্যারেজে আনা যায় না। সব জায়গায় গ্যাসও পাওয়া যায় না, ফলে গাড়ি টেনে আনতে হয়।’

প্রজাপতি পরিবহনের চালক, মো. আজিজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গাড়ির জন্মই তেলে চলার জন্য। আমরা তারে মডিফাই করে গ্যাসের গাড়ি বানাই। ১৫ সালের পরের মডেলের বাস সব তেলের। এর আগে গ্যাসের কম দাম ছিল তাই মানুষ গ্যাসে গাড়ি চালাইছে। গ্যাস শুকনা বলে গাড়ির ক্ষতি হয়। যখন মানুষ বুঝতে পারছে গ্যাসে চালালে গাড়ির ইঞ্জিন দুই দিন পরপর নষ্ট হয়, তখন আবার তেলে চলে আসছে। এখন ঢাকার প্রায় সব গাড়ি তেলে চলে। ঢাকার বাইরে কিছু গাড়ি গ্যাসে চলে।’

রজনীগন্ধা বাসের চালক বাকের মিয়া বলেন, ‘ইঞ্জিন ভালো থাকে তেলে। তা ছাড়া মাইলের হিসাব করলে তেল আর গ্যাসের দামে আহামরি তেমন পার্থক্য হয় না। তাই সেধে কেউ আর গাড়ির ইঞ্জিন নষ্ট করে না।’

এ বিভাগের আরো খবর