বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমদানির জোয়ারে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে তিন গুণ

  •    
  • ৯ নভেম্বর, ২০২১ ১৯:১৭

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। রেমিট্যান্স কমলেও রপ্তানির গতি বেশ ভালো। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখনও সন্তোষজনক অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় আমদানি বাড়লেও কোনো সমস্যা নেই। আর আমদানি বাড়া মানে বিনিয়োগ বাড়া। বিনিয়োগ বাড়া মানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হওয়া।

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমদানিতে জোয়ার বইতে শুরু করেছে। আর এতে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ব্যবধান চূড়ায় উঠছে।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫০ কোটি ৩০ লাখ (৬.৫ বিলিয়ন) ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে তিন গুণেরও বেশি।

২০২০-২১ অর্থবছরের এই তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২০৪ কোটি (২.০৪ বিলিয়ন) ডলার।

আমদানি বাড়াতে মোটেই চিন্তিত নন অর্থনীতির গবেষক, ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, করোনার পর অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। সব কিছু আগের মতোই চলছে। উৎপাদন কর্মকাণ্ড চলছে পুরোদমে। সে কারণেই আমদানি বাড়ছে। এটা অর্থনীতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ১ হাজার ৭৩২ কোটি ১০ লাখ (১৭.৩২ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই তিন মাসে ১ হাজার ১৭৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।

অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ১ হাজার ৮১ কোটি ৮০ লাখ (১০.৮১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।

এ হিসাবেই অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।

এই ধারা অব্যাহত থাকলে গত অর্থবছরের চেয়ে অনেক বেশি বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর শেষ হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ও রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। রেমিট্যান্স কমলেও রপ্তানির গতি বেশ ভালো। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখনও সন্তোষজনক অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় আমদানি বাড়লেও কোনো সমস্যা নেই। আর আমদানি বাড়া মানে বিনিয়োগ বাড়া। বিনিয়োগ বাড়া মানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হওয়া।’

করোনা মহামারির কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু রপ্তানির প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় দ্বিতীয়ার্ধে এসে আমদানি বাড়তে শুরু করে।

শেষ পর্যন্ত অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে পণ্য বাণিজ্যে প্রায় ২৩ বিলিয়ন (২ হাজার ৩০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হয়। ওই অর্থবছরের শেষের কয়েক মাসে আমদানিতে উল্লম্ফনের কারণে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান দুই সূচক আমদানি ও রপ্তানির ব্যবধান চূড়ায় ওঠে।

জায়েদ বখত বলেন, ‘গত দেড় বছরের বেশি সময় কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। প্রথম দিকে আমদানি কমলেও পরে বেড়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তাই আমদানি বাড়ছে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো।

‘পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেলসহ বড় বড় প্রকল্পের কাজ মহামারির মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানিতে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে।’

এসব কারণেই আমদানি খাতে খরচ বেশি হচ্ছে বলে মনে করছেন জায়েদ বখত।

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা স্বস্তির জায়গা হচ্ছে, আমদানির সঙ্গে রপ্তানিও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রপ্তানির এই ইতিবাচক ধারা বেশ কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। তাই, আমদানি যেটা বাড়ছে, তা যদি ঠিকঠাকমতো বিনিয়োগে আসে, তাহলে অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।

‘আশার কথা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে আগামী বছর থেকেই যান চলাচল করবে। মেট্রোরেলও পুরোদমে চালু হবে। কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজও শেষ হবে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শেষ হয়েছে। আরও কয়েকটির কাজ চলছে। এসব বড় প্রকল্প বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ভিন্নমাত্রা যোগ করবে।

‘আর এসব উন্নয়নযজ্ঞকে কেন্দ্র করেই বিনিয়োগের ছক কষছেন উদ্যোক্তারা। সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পণ্য সরঞ্জাম আমদানি করছেন তারা। তাতেই বাড়ছে আমদানি।’

রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প খাতের তরুণ উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইয়ুথ লিডারস অ্যাসোসিয়েশনের (বায়লা) সভাপতি আবরার হোসেন সায়েম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের রপ্তানির প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। মানুষ আগের মতো পোশাক কিনছে। সে কারণে প্রচুর চাহিদা পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের এখানেও করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতে রপ্তানিসহ অন্যান্য খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিসহ অন্যান্য পণ্যের আমদানি বাড়ছে। তার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক আমদানিতে।’

সেবা বাণিজ্যে ঘাটতিও বাড়ছে

জুলাই-সেপ্টেম্বরে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ৫৩ কোটি ২০ লাখ ডলার।

মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি ২.৩১ বিলিয়ন ডলার

আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) বড় ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৩১ কোটি ৪০ লাখ (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার।

অথচ গত বছরের একই সময়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৩৪৮ কোটি ১০ লাখ (৩.৪৮ বিলিয়ন) ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২০-২১ অর্থবছর। নয় মাস পর্যন্তও (জুলাই-মার্চ) এই সূচক উদ্বৃত্ত ছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দেয়।

নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

রেমিট্যান্স কমেছে ২০ শতাংশ

মহামারির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৮০ লাখ (২৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলারের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৬ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল এই সূচক।

কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে সেই জোয়ার আর নেই। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৫৮০ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। গত বছরের এই তিন মাসে এসেছিল ৬৭৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।

সামগ্রিক লেনদেনেও ঘাটতি

সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যেও ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮১ কোটি ডলার। অথচ গত বছরের এই তিন মাসে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১০ কোটি (৩.১০ বিলিয়ন) ডলারের মতো।

৯২৭ কোটি ৪০ লাখ (৯.২৭ বিলিয়ন) ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের বছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত

আর্থিক হিসাবে এখনও উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। জুলাই-সেপ্টেম্বরে এই উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১৯২ কোটি ৫০ লাখ (১.৯২ বিলিয়ন) ডলার। গত বছরের এই সময়ে ৫১ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল।

করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ অন্য দাতাদেশ ও সংস্থার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ঋণসহায়তা পাওয়ায় আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে বলে জানান আহসান মনসুর।

এ বিভাগের আরো খবর