সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এ বছর থেকে দুবলার চরে রাসমেলা স্থায়ীভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখার যুগ্ম সচিব মো. শাফায়াত মাহবুব চৌধুরীর সই করা এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
আদেশে বলা হয়, ‘সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে রাসমেলা ২০২১ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করা এবং উক্ত সময়ে পুণ্যার্থী বা তীর্থযাত্রী সনাতন ধর্মাবলম্বী ব্যতীত অন্যদের সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি বন্ধ রাখার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।’
আদেশে জানানো হয়, ধর্মীয়ভাবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা ও পুণ্যস্নান চালু রাখা যাবে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে মাঠ প্রশাসনকে।
প্রতিবছর রাসমেলা উপলক্ষে সব সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ দুবলার চরে সমবেত হয়। অবশ্য গত দুই বছর ধরে রাসমেলা হয়নি।
বন বিভাগ বলছে, সুন্দরবনের যে স্থানে রাসমেলা হয় সেটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। মেলায় অংশ নিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতির কারণে একদিকে যেমন বন্য প্রাণীর ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে ওই স্থানে মানুষের ফেলে দেয়া আবর্জনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বন। এতে ঝুঁকিতে পড়ছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য।
বাগেরহাটের মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে সমুদ্রের কোল ঘেঁষে অবস্থান দুবলার চরের। এখানে মূলত সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণ ও প্রক্রিয়াজাত করে থাকেন স্থানীয় মৎসজীবীরা। চরটির আয়তন প্রায় ৮১ বর্গমাইল।
প্রতিবছর কার্তিক মাসের শেষ বা অগ্রহায়ণের শুরুতে শুক্লপক্ষের পূর্ণিমায় সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোর কোলে তিন দিনব্যাপী রাসমেলা হয়। এটি মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুণ্যোৎসব।
পুরাণ অনুযায়ী, রাস হচ্ছে রাধা-কৃষ্ণের মিলন। অবশ্য এখানে আসা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মূলত দেবতা নীল কমল ও গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে পূজা দেন।
স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রায় ২০০ বছর আগে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ওড়াকান্দি গ্রামে জন্ম নেয়া মতুয়া সাধক হরি ঠাকুর স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে দুবলার চরে পূজা-পার্বণাদি শুরু করেন। পরে তার অনুসারীদের এ পথ অনুসরণের নির্দেশ দেন।
এর পর থেকেই প্রতিবছর বাংলা কার্তিক মাসের রাস পূর্ণিমা তিথিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এ চরে আসেন। পাপমোচন ও পার্থিব জীবনের কামনা-বাসনা পূরণের জন্য পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে এ উৎসব পালন করা হয়।