জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর বাসের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে কিছু গণমাধ্যম বিরূপ ও অপমানজনক সমালোচনা করেছে বলে খেদ ঝেড়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার মতে কিছু কিছু গণমাধ্যম বিরূপ সমালোচনা করেছে, যা কাম্য নয়।
মঙ্গলবার রাজধানীতে সরকারি বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখছিলেন ওবায়দুল কাদের।
গত বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় রোববার বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায় সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ।
তবে কার্যক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে হারে বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে ভাড়া আগে থেকেই নিত পরিবহন মালিকরা। এখন নিচ্ছে আরও বেশি।
নিউজবাংলা একটি প্রতিবেদনে দেখিয়েছে ঢাকায় ডিজেলের বাসে সর্বোচ্চ বাস ভাড়া কিলোমিটারে ২ টাকা ১৫ পয়সা হলেও আদায় করা হচ্ছে ৪ টাকা ৭৬ পয়সা পর্যন্ত। আবার বর্ধিত বাস ভাড়া কেবল তেলচালিত গাড়ির হলেও সিএনজির বাসেও আদায় করা হচ্ছে এই বাড়তি ভাড়া। কোনো বাস সিএনজিতে চলে-এই বিষয়টি শ্রমিকরা স্বীকারই করতে চাইছেন না।
সরকার নির্ধারিত বাসভাড়া কিলোমিটারে ২ টাকা হলেও রাজধানীর কিছু রুটে এই হারে ভাড়া আদায় হচ্ছেওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে বলেন, ‘কিছু কিছু গণমাধ্যম দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলেও দু-একটি গণমাধ্যম বিরূপ ও অপমানজনক সমালোচনা করছে, যা প্রত্যাশিত নয়।’
সোমবার ব্রিফিংয়ে এসে ওবায়দুল কাদের বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই ধরনের হুঁশিয়ারি তার নতুন নয়। আর পরপর দ্বিতীয় দিন একই কথা বলেছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ পুনর্নির্ধারিত হারে ভাড়া আদায়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও গতকাল বিভিন্ন পরিবহনে অধিক হারে ভাড়া আদায়ের অভিযোগ এসেছে। আমি মালিক ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দকে পুনর্নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় এবং যাত্রী ভোগান্তি থেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছি। তা না হলে দায়ী পরিবহনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করবেন না।’
মন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারির মধ্যেও কোনো বাসেই ভাড়া কমিয়েছে- এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানিয়েছেন, তাদের ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নিচ্ছে।
কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে এই ধরনের ব্যবস্থা এর আগেও নেয়া হয়েছে। বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকানো যায়নি।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশব্যাপী অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
‘যাত্রীকল্যাণ সমিতি ভুয়া সংগঠন’
বাস ভাড়া বাড়ানোর পর সিএনজিচালিত বাসেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, কিলোমিটারের বদলে ওয়েবিলের নামে বর্ধিত ভাড়ার দ্বিগুণের বেশি আদায়সহ নানা বিষয়ে সমালোচনা করা যাত্রী অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমালোচনাও করেন মন্ত্রী।।
তিনি বলেন, ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতি নামে একটি ভুয়া সংগঠনও বিষয়টি না জেনে, না বুঝে, যা নয় তা সমালোচনা করছে।’
তিনি বলেন, ‘তাহলে পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে সেটা কি জনগণের জন্য কল্যাণকর হতো?’
‘যাত্রী ভোগান্তি কমাতে অতীতের ধারাবাহিকতায় গণমাধ্যমের মূল্যবান পরামর্শ আমাদের কাছে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ’-বলেন সড়কমন্ত্রী।
পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়া এবং পাচার রোধে সরকার মূল্য সমন্বয় করেছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বৃদ্ধির চার দিন পর তারা লোক দেখানো কর্মসূচি দিয়েছে। তারা এই ইস্যু নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের উসকানি দিয়েছিল। আরেকটি পরনির্ভর আন্দোলনের খোয়াব দেখেছিল। তারা চেয়েছিল পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে। এবারও তারা ব্যর্থ হয়েছে।’
বিএনপির আমলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোকে ‘নৈমিত্তিক ঘটনা’ উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘সেটা বিএনপি ভুলে গেলেও জনগণ ভোলেনি। বিএনপির ৫ বছরে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছিল ৮ বার। তারা মূল্য কমাতে পারেনি।’
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম থাকলেও দেশে বিএনপি জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন কাদের।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গত ১৩ বছরে ৫ বার মূল্য বৃদ্ধি করলেও ৫ বার মূল্য হ্রাসও করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের ৭ দিনের মধ্যে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস করেছিলেন।’
বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের বক্তব্য শুনলে মনে হয় দেশ যেন যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, কিংবা দুর্ভিক্ষ চলছে। যেন এখানে সবকিছু স্থবির; কোনো উন্নয়ন, কোনো আশা, কোনো স্বপ্ন নেই। জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।’
এসব নেতিবাচক বক্তব্য একটি দায়িত্বহীন রাজনৈতিক দলে হতাশার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয় বলেও মনে করেন তিনি।