বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভোটের মাঠে আরিফের অন্য রকম লড়াই

  •    
  • ৯ নভেম্বর, ২০২১ ১৬:১৩

‘একোন (এখন) সবাই আরিফের কথা কয়। পাইবে কী পাইবে না সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু ভোটোত দাঁড়াইছে এট্যাতই (এতে) আশ্চর্য হওচে (হচ্ছে) মানুষ।’

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার (সদস্য) পদে লড়ছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী আরিফ হোসেন। তিনি নির্বাচিত হলে দেশের সবচেয়ে খর্বকাই জনপ্রতিনিধি হবেন বলে জানান নির্বাচন কর্মকর্তারা।

চার ভাইয়ের মধ্যে তিন নম্বর আরিফ। ২৬ বছর বয়সে তার উচ্চতা মাত্র ৩২ ইঞ্চি। আর ওজন ১৭ কেজি। ২০১৪ সালে উপজেলার চতরা ইকলিমপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করেন তিনি। এরপর চতরা বিজ্ঞান ও কারিগরি কলেজে ভর্তি হলেও পরীক্ষায় অংশ নেয়া হয়নি আরিফের।

দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনের বাকি আর একদিন। শেষ সময়ে অন্য প্রার্থীদের মতো আরিফেরও দম ফেলার সময় নেই। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিনি ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন।

আরিফ কাবিলপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্যপদে বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এই ওয়ার্ডে তার বিপরীতে লড়ছেন আরও পাঁচ প্রার্থী।

আরিফের সাহস আর অদম্য ইচ্ছে দেখে বিস্মিত উপজেলার মানুষ। স্থানীয় ভোটারা জানান, আর্থিক সংকট থাকায় ভোটাররাই ব্যানার, পোস্টার করে তার পক্ষে গণসংযোগ করছেন। তাদের আশা ভোট যুদ্ধে বিজয়ী হবেন আরিফ।

স্থানীয় চা বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একোন (এখন) সবাই আরিফের কথা কয়। পাইবে কী পাইবে না সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু ভোটোত দাঁড়াইছে এট্যাতই (এতে) আশ্চর্য হওচে (হচ্ছে) মানুষ।’

কাবিলপুর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার আতিকুর রহমান বলেন, ‘আরিফ ছোট মানুষ। খুব সরল। ওকে ভোটোত দাঁড়ানো দেখি আমরাই অবাক হইচি। এইছোট ছেলেটা রিক্সা, সাইকেলে করে সবার বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। আমরা ভোট দেবো তাকে।’

একই এলাকার আজম আলী জানান, ‘শরীরে সমস্যা আছে কিন্তু যে কোনো কাজে খুব চেষ্টা করে। আমরা চাই আরিফই হোক।’

আরেক বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন, ‘ছোট থাকই খুব ইচ্চে মানসের উপকার করার। সোগ (সব) কাজ পায়, যাইতে (চলাচল) একটু সমস্যা হয়। মুই (আমি) চাং (চাই) আরিফ ভোটোট জিতুক।’

আরিফের স্কুল শিক্ষক মনতাজুর রহমান বলেন, ‘আরিফের ভোটে জয়ী হওয়া দরকার। মানুষের ধারণা বদলান দরকার। মনের ইচ্ছাই বড় ইচ্ছা, সেটা সে ভোটের মাঠে দেখাচ্ছে।’

আরিফের বাবা আব্দুল হালিম মন্ডল বলেন, ‘আমি কৃষক মানুষ। কৃষি কাজ করি খাই। ছৈলডা (ছেলেটা) অসুস্থ, তাও ভোট করোছে (করছে)। ওক তমার (তোমরা) ভোটটা দেন।’

আরিফ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জনগণ আমার সরলতা এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমার টাকা নেই, ভোটারই টাকা খরচ করে নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি আমি বিজয়ী হব। আর নির্বাচিত হলে জনতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করব।’

উপজেলা নির্বাচন অফিসার ইমদাদুল হক জানান, কাবিলপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডটি পদ্মহার, ইসলামপুর, রাঙ্গামাটি, ছোটকুয়া ও চক রাঙ্গামাটি মৌজা নিয়ে গঠিত। এই ওয়ার্ডে ২ হাজার ৮০০ ভোটার রয়েছেন। সুষ্ঠুভাবে ভোট নেয়ার জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আরিফের শারীরিক সমস্যা থাকায় নির্বাচনের মাঠে আমরা তার নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’

এ বিভাগের আরো খবর