বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছেলের শখ পূরণে কিশোর বয়সে বাইক, কেড়ে নিল ৩ প্রাণ

  •    
  • ৯ নভেম্বর, ২০২১ ১৪:২৮

সায়েমের মা বলেন, ‘ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য সব কাগজপাতি জমা দিয়েছি। গাড়ি চালানোও শিখিয়েছি কিন্তু সেই বিদেশ যাওয়া আর হলো না। স্কুলে গেল পড়তে, বাড়ি ফিরল লাশ হয়ে।’

বাবা-মা ছেলের কোনো শখ অপূর্ণ রাখতেন না। এমনকি নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় কিশোর ছেলের দাবি অনুযায়ী মোটরসাইকেলও কিনে দিয়েছিলেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্সহীন ছেলে সেই মোটরসাইকেলেই বন্ধুদের নিয়ে ঘুরত। অতিরিক্ত গতিতে চালানোর সময় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে তার। সঙ্গে দুই বন্ধুরও।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া সরিষাআটা মোড়ে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলের তিন আরোহী নিহত হন। তারা তিনজনই ধলাপাড়া এস ইউ পি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

নিহত আবু বক্করের বাবা মো. শাহজালাল নিউজবাংলাকে জানান, গত বছর তিনি ছেলেকে মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। সোমবার টিফিনের সময় বক্কর তার দুই বন্ধু শরীফ ও সায়েমের সঙ্গে ঘুরতে বের হলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে।

তিনি বলেন, ‘ছেলে কোনো কিছু চাওয়ার আগেই দিয়ে দিতাম। গত বছর ছেলেটা একটা অ্যাপাচি আরটিআর বাইক চায়। কিনেও দিয়েছিলাম। সেই বাইকেই ছেলেটা অ্যাক্সিডেন্ট করে চলে গেল।’

আবু বক্করের মা বলেন, ‘ছেলের কখনও কোনো কিছুর অভাব রাখিনি। তাই শখ মেটাতে হোন্ডা কিনে দিয়েছিলাম। সেই হোন্ডাই আমার এক মাত্র সোনার ছেলেকে কেড়ে নিল। আর মা ডাক শুনতে পারব না আমি।’

ওই দুর্ঘটনায় নিহত নবম শ্রেণির ছাত্র শরীফ উদ্দিনের মা মারা গেছেন দুই বছর আগে আর বাবা মারা গেছেন এক বছর আগে। বড় দুই বোনের বিয়ে হওয়ার পর থেকে তাদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই।

শরীফ থাকতেন চাচার বাড়িতে। প্রবাসী বড় ভাই তার পড়ালেখার খরচ পাঠাতেন। চাচার স্বপ্ন ছিল, ভাতিজা বড় হয়ে পুলিশ হবে। শরীফেরও একই ইচ্ছা ছিল।

দুর্ঘটনায় নিহত স্কুলছাত্রদের স্বজনের আহাজারি

চাচা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাবা-মা মারা যাওয়ার পর থেকে শরীফ আমার কাছেই বড় হচ্ছিল। আমার নিজের ছেলের মতো থাকত। চাচিকে বলে সকালে স্কুল গেছে। আর ওর জীবিত ফেরা হলো না। লাশ হয়ে আমার ভাতিজাটা বাড়ি ফিরল।’

শরীফ ও বক্করের বন্ধু সায়েম ছিল দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট। পাঁচ বছর আগে তার বাবার মৃত্যু হয়। মায়ের ইচ্ছা ছিল ছোট ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর।

সায়েমের মা বলেন, ‘ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য সব কাগজপাতি জমা দিয়েছি। গাড়ি চালানোও শিখিয়েছি কিন্তু সেই বিদেশ যাওয়া আর হলো না। স্কুলে গেল পড়তে, বাড়ি ফিরল লাশ হয়ে।’

ধলাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এজাহারুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, মোটরসাইকেলটি অতিরিক্ত গতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে।

ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘তিনজনের পরিবারই ময়নাতদন্তের বিষয়ে আপত্তি করে। তাই তাদের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানোর জন্যই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছি। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় বক্করের লাইসেন্স ছিল না। দুর্ঘটনার সময় কেউ হেলমেটও পরে ছিল না।’

এ বিভাগের আরো খবর