বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মূল্যস্ফীতির অনেক নিচে আমানতের সুদ হার

  •    
  • ৯ নভেম্বর, ২০২১ ১০:১৭

সুদ হার নিয়ে গেল আগস্ট মাসে একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বলা হয়, মেয়াদি আমানতে সুদ তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির কম দেয়া যাবে না। তার পরও মূল্যস্ফীতির অনেক নিচে রয়েছে আমানতের গড় সুদ হার।

‘একটা সময়ে ব্যাংকে টাকা রেখে লাভ ছিল। এখন আর লাভ নেই। চাকরির পাশাপাশি জমানো অর্থ থেকে কিছুটা মুনাফা এলে সংসার চালাতে বেগ পেতে হতো না। যত দিন যাচ্ছে আমানতে মুনাফা কমছে। ব্যাংকে টাকা রাখলে আমানতও কমতে থাকবে সেদিন বেশি দূরে নয়।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে আমিনুল ইসলাম হতাশার সুরে নিউজবাংলাকে কথাগুলো বলছিলেন। জানালেন, বেসরকারি একটি ব্যাংকে ২০ লাখ টাকা আমানত রেখেছেন তিনি। এক বছর মেয়াদি আমানতে আগে জমা অর্থের ওপর ৯ শতাংশ সুদ পেতেন, কিন্তু সুদ হার নির্দিষ্ট করে দেয়ায় এখন আর কাঙ্ক্ষিত হারে মুনাফা মিলছে না।

২০২০ সালের এপ্রিল মাসে আমানত-ঋণের সুদ হার নির্দিষ্ট করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতের সুদ হার ওই বছরের জুলাই মাসেই নবায়ন হয় ৬ শতাংশ হারে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন মাশুল কেটে নেয়ার পর ৪ শতাংশ হারে সুদও দেয় না ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুদ হার নির্দিষ্ট করে দেয়ার পরও ক্ষুদ্র আমানতকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দরিদ্র, মধ্যবিত্তরা সঞ্চিত যৎসামান্য টাকা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ব্যাংকে রাখে। কিন্তু সুদ এত কম যে তাদের টাকা কমে যাচ্ছে। ফলে সাধারণের সঞ্চয়ের অভ্যাস কমে যাবে।’

সুদ হার নিয়ে গেল আগস্ট মাসে একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বলা হয়, মেয়াদি আমানতে সুদ তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির কম দেয়া যাবে না। তার পরও মূল্যস্ফীতির অনেক নিচে রয়েছে আমানতের গড় সুদ হার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোর আমানতের গড় সুদহার সামান্য বেড়ে ৪ দশমিক ০৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গত আগস্টে আমানতের গড় সুদ হার ছিল এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন ৪ দশমিক ০৫ শতাংশ। ফলে ব্যাংক খাতে আমানতের সুদ হার নিয়ে হতাশা ক্রমেই বাড়ছে।

বর্তমানে ব্যাংকের সুদ হার দিয়ে মূল্যস্ফীতির ঘাটতিই মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। কোনো নির্দিষ্ট মাসে সুদ বা মুনাফার হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ওই মাসের তিন মাস আগের মূল্যস্ফীতির হারকে বিবেচনায় নিতে হবে।

সার্কুলার জারির পর থেকেই ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশনা কার্যকর করতে বলা হলেও আগস্ট মাস শেষে ব্যাংক খাতের আমানতের গড় সুদ হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, গত জুলাই মাসে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্টে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

সেপ্টেম্বরে আমানতের সুদ হার জুনের মূল্যস্ফীতির ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করার কথা। গত জুনে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অন্যদিকে সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোর সংগৃহীত আমানতের গড় সুদ হার ছিল ৪ দশমিক ০৮ শতাংশ। অথচ পাঁচ বছর আগেও সুদ হার ছিল ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। অবশ্য ব্যাংকভেদে এর চেয়ে সামান্য বেশি সুদ পাওয়া যায়।

এবি ব্যাংক লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর তারিক আফজাল বলেন, ‘ব্যাংক শুধু ঋণ দিয়ে সুদ গ্রহণ করবে, সেটা নয়। প্রত্যেকেই কিছু আশায় ব্যাংকে সঞ্চয় করে থাকে। কিন্তু সেই আমানতের টাকায় আশানুরূপ রোজগার না হলে সেটা আমানতকারীদের প্রতি অন্যায়।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক আমানতকারীকে নিম্ন হারে সুদ দিয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় অর্থ বিনিয়োগ করছে নিজেদের মুনাফার জন্য। এতে আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ভারসাম্য থাকছে না। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়ন জরুরি।’

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকের প্রতি আস্থা মানুষের সব সময়ই বেশি। সর্বশেষ সঞ্চয়পত্রে সুদ হার কমে যাওয়ায় মানুষ আরো ব্যাংকমুখী হবে। আমানতের একটি অংশ আসবে ব্যাংকে আর একটি অংশ যাবে ক্যাপিটাল মার্কেটে। মূল্যস্ফীতির সমান সুদ দিতে ব্যাংকগুলো চেষ্টা করে যাচ্ছে।’

কোন ব্যাংকে কত সুদ

সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের গড় সুদ হার ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম সুদ হার সোনালী ব্যাংকে, ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

বিশেষায়িত কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের গড় সুদ হার ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর গড় সুদ হার ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে কম সুদ হার ছিল ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকে, ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। গত আগস্টে এই ব্যাংকটির গড় সুদ হার ছিল ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

আগস্টে ব্র্যাক ব্যাংকের আমানতের গড় সুদ হার ছিল ২ দশমিক ১১ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির গড় সুদ হার সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ২ দশমিক ২০ শতাংশ।

প্রাইম ব্যাংকে আগস্টে আমানতের গড় সুদ হার ছিল ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয় ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে গত আগস্টে আমানতের গড় সুদ হার ছিল ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে সুদ হার বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশে।

ইস্টার্ন ব্যাংকে গত আগস্টে আমানতের গড় সুদ ছিল ২ দশমিক ৬১ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ হয়।

এ ছাড়া সিটি ব্যাংকের গড় সুদ ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

তবে এত কিছুর পরও ব্যাংকে আমানত বাড়ছে। আগস্টে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়ে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। এর আগের বছরের আগস্টে ব্যাংক খাতে আমানত ছিল ১২ লাখ ২০ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। এক বছরে ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে

ব্যাংকের সুদ হারের সঙ্গে বড় ধরনের তফাৎ থাকায় গত কয়েক বছরে সাধারণ মানুষের টাকা জমা রাখার নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হয়ে উঠেছিল সঞ্চয়পত্র। তবে এখানে বিনিয়োগে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে কেউ সঞ্চয়পত্র কেনার পর এক বছরের মধ্যে ভাঙালে কোনো সুদ পায় না। তার পরও সুদ হার বেশি হওয়ার কারণে গত কয়েকটি অর্থবছরে এর বিক্রি সরকারের বাজেটে ধরা লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যেতে থাকে। তাতে করে বাড়তে থাকে সরকারের সুদ ব্যয়।

সঞ্চয়পত্র বিক্রির লাগাম টানতে সেপ্টেম্বরে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমানোর ঘোষণা দেয় সরকার। ফলে এক মাসের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে ২২ দশমিক ১৫ শতাংশ। আগস্টে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। যদিও অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে নিট বিক্রির পরিমাণ বেড়েছিল ৭২ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম তিন মাসে বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

এ বিভাগের আরো খবর