দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে ততই উদ্বেগ-আতঙ্ক বাড়ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে।
ফরিদপুরের নগরকান্দার ৯টি ইউনিয়নে ভোট হবে আগামী বৃহস্পতিবার।
সম্প্রতি উপজেলার তালমা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রনজিত কুমার মণ্ডলের সমর্থকদের হামলায় স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল হোসেনের নির্বাচনি কার্যালয় ভাঙচুর ও কর্মীদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
রামনগর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী কাইমুদ্দিন মন্ডলের নির্বাচনি কার্যালয় ভাঙচুর ও সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা।
কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়নের নৌকার সমর্থকরা নৌকার স্লোগান দিয়ে হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইমাম-উল ইসলামের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।
কাইচাইল ইউনিয়নের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান কবির হোসেন ঠান্ডু প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ছাড়া আরও কয়েকটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তার কর্মীদের প্রচারকাজে বাধা দেয়া, বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
তালমা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী কামাল হোসেন মিয়া বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা আমাকে ও আমার কর্মীদের নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা করতে বাধা দিচ্ছেন। যেখানে-সেখানে হামলা করছে। তা ছাড়া বহিরাগত মানুষের উপস্থিতি দিন দিন বাড়ছেই। নৌকার সমর্থকরা বিভিন্ন সময়ে এলাকায় কিছু গুজব রটাচ্ছে। এতে করে নতুন কোনো কৌশলে ভোট ডাকাতির আশঙ্কায় আছি।’
ডাঙ্গী ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী মুরাদ হোসেন বলেন, ‘একটি চক্র ভোট কেটে নেয়ার পাঁয়তারা করছে। নৌকার সমর্থকরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।’
ডাঙ্গী ইউনিয়নের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী সরদার সাইফুজ্জামান বুলবুল বলেন, ‘নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা এলাকায় লাঠি মিছিল করছে। ইউনিয়নের রাস্তার মোড়ে মোড়ে এরা লাঠি নিয়ে বসে থাকে। আমি ও আমার কর্মীরা প্রচার চালাতে গেলে তারা হামলা চালাচ্ছে। আমি সাধারণ ভোটারদের কাছে যেতে পারছি না।’
চরযোশরদী ইউনিয়নের প্রবীণ ভোটার আলতাব মাতুব্বর বলেন, ‘অনেক ভোট দিয়েছি। এবার ভোট দিতে পারব কি না জানি না। বাতাস ভালো মনে হচ্ছে না।’
তালমা ইউনিয়নের নবীন ভোটার মহিবুল্লাহ বলেন, ‘আমার খুব আনন্দ লাগছে, আমি এবার প্রথম ভোট দেব। কিন্তু ভোটের মাঠে যে উচ্ছৃঙ্খলা দেখছি, তাতে ভোট দিতে যেতে ভয় পাচ্ছি।’
এখন পর্যন্ত প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করায় কিছুটা আশার আলো দেখছেন স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থী এবং ভোটাররা।
নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে এরই মধ্যে তালমা, ডাঙ্গী, লস্করদিয়া, চরযশোরদী, কোদালিয়া শহীদনগর ও ফুলসুতী ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থীদের শোকজ করেছেন দায়িত্বরত রিটার্নিং অফিসার।
তার পরও নির্ভয়ে নির্বাচনি প্রচার করতে পারছেন না স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বিভিন্ন ইউনিয়নে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায় সুষ্ঠু ভোট ও নির্ভয়ে ভোট দেয়ার পরিবেশ থাকবে কি না- এ ব্যাপারে ভোটাররা রয়েছেন শঙ্কা-উৎকণ্ঠায়।
জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নগরকান্দায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চায়। তার পরও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ভোটাররা শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না। নির্বাচনি এলাকায় বহিরাগত মানুষের উপস্থিতি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিভিন্ন সময়ে এলাকায় কিছু গুজব রটায়, নতুন কোনো কৌশলে ভোট ডাকাতির আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
নগরকান্দা উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নেই রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন শক্ত অবস্থানে থাকা বিদ্রোহী প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এরই মধ্যে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান, জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ হাবিবুর রহমান প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন।
মতবিনিময় সভায় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করবেন না।
প্রার্থীদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলবেন। ব্যত্যয় ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নগরকান্দা উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন সাধারণ ভোটাররা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, নির্বাচনি পরিবেশ আরও নিরাপদ করে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবেন বলে দাবি এলাকার মানুষের।