রাজধানীতে বাসের ভাড়া ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে শুধু ডিজেলচালিত বাসের ক্ষেত্রে, সিএনজিচালিত বাসে নয়। অথচ রাজধানীর সিএনজিচালিত বাসগুলোও বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।
রাজধানীর গাবতলীর একটি সিএনজি পাম্পে সোমবার সকালে গিয়ে জানা যায়, তাদের সিএনজি পাম্প থেকে ‘শুকতারা’, ‘নিউ ভিলেজ পরিবহন’ ও ‘এসবি লিংক’-এর মোট ১১টি বাস ইতিমধ্যে তাদের সিএনজি পাম্প থেকে গ্যাস নিয়ে গেছে। বাসগুলো গাবতলী থেকে হরিরামপুর যায়।
গাবতলী বাস টার্মিনালে এসব পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সিএনজিচালিত এসব বাসে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ‘শুকতারা’ পরিবহনের কাউন্টারের ভেতরে হাতে লেখা একটি কাগজে নতুন ভাড়ার তালিকা দেখা যায়। বাড়তি ভাড়ার এই তালিকা দেখিয়েই গ্যাসচালিত বাসে নেয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
বেশি ভাড়া কেন নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সুপারভাইজার জাকির হোসেন বলেন, ‘মালিক সমিতিরে জিগান। কোম্পানি এই রেট করে দিছে। মালিক যা বলে, আমরা তা-ই মেনে চলি। এখানে আমাদের কিছু করার নাই। আমরা তাদের নির্দেশেই কাজ করে যাচ্ছি।’
কথা হয় ‘শুকতারা’ পরিবহনের কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে। তাদের প্রশ্ন করা হয়, গ্যাসচালিত গাড়ি হওয়া সত্ত্বেও তারা বাড়তি ভাড়া দিচ্ছেন কি না। উত্তরে সুমন মিয়া নামের এক যাত্রী বলেন, ‘সকালে মানিকগঞ্জ থেকে আসলাম ৮০ টাকা দিয়ে আগের ভাড়ায়। এখন নিচ্ছে ১০০ টাকা। আমরা যাত্রীরা তো অসহায়। তারা যা বলবে, তা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নাই আমাদের। কারণ আমাদের তো রাস্তায় চলতে হবে।’
কেন বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে ‘শুকতারা’ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান গনি বলেন, ‘গ্যাসের গাড়িতে গ্যাসের ভাড়া, তেলের গাড়িতে তেলের ভাড়া নেয়া হচ্ছে।’
যখন ওসমান গনিকে বলা হয় তারা গ্যাসচালিত গাড়িতেও তেলের গাড়ির ভাড়া নিচ্ছেন, তিনি বলেন, ‘আমাদের অফিসের আইটিতে যিনি আছেন, তাকে আগেই বলা হয়েছে। আমরা আগামীকাল বিআরটিএ থেকে সিল-ছাপ্পড় দেয়া কাগজ পাব। সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, ওই অনুযায়ী চার্ট করা হবে। যদি এমন অনৈতিক কিছু হয়, তাহলে আমরা গাড়ির স্টাফদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। আমি এখনই ফোন দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলছি। গাড়ি লাইনের লোক তো ওরা, স্টাফগুলো একেবারের ভালো না।’
তাকে বলা হয়, স্টাফরা দাবি করছেন, মালিকপক্ষের কথায় তারা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন। উত্তরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান গনি বলেন, ‘যে এই কথা বলেছে, ভুল বলেছে। কে বলেছে, আমি সেটা বের করছি।’
গাবতলীর ‘নিউ ভিলেজ’ পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে একই চিত্র দেখা যায়। সেখানেও গ্যাসচালিত বাসে নেয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
এ বিষয়ে কাউন্টারে জিজ্ঞাসা করা হলে সেখান থেকে হুমায়ুন নামের এক কর্মী জানান, তারা কোনো বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন না।
তবে পাশে থাকা বাসের স্টাফ শরীফ বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘আগের ভাড়া থেকে ১০ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে।’
এ বাসের যাত্রীদের একজন শাওন বললেন, ‘আগের ভাড়া থেকে ২০ টাকা বেশি নিয়েছে। আগে ঘিওর ভাড়া নিত ১০০ টাকা। আজ ১২০ টাকা নিয়েছে।’
এসবি লিংকের কাউন্টারে দাবি করা হয়, সিএনজিচালিত হওয়ায় তারা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন না। তবে এক যাত্রীর ৭৫ টাকার ভাড়া ৮০ টাকা রাখা হয়। কেন ৫ টাকা বেশি রাখা হয়েছে জানতে চাইলে কাউন্টারে থাকা আলমগীর জানান, তারা আগের ভাড়াই রাখছেন। ৫ টাকা বেশি রাখার কারণ তার কাছে পাঁচ টাকা ভাঙতি ছিল না।