বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এক রাতেই ঢাকার সিএনজির বাস হয়ে গেল ‘ডিজেলচালিত’

  •    
  • ৮ নভেম্বর, ২০২১ ২৩:১৫

‘২০১৫ সালে সিএনজির মূল্য যখন বাড়ল, তখন বাসমালিকরা বলল, তাদের মাত্র ২ শতাংশ বাস তেলে চলে। এ কথা বলে তারা ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে বাস ভাড়া বাড়িয়ে নিল। এখন যখন ২০২১ সালে এসে তেলের দাম বাড়ল, তখন তারা আবার বলে, তাদের মাত্র ২ শতাংশ গাড়ি সিএনজিতে চলে। এই ইস্যুটি এখন সুরাহার দাবি রাখে। তাই ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে এই বর্ধিত ভাড়া স্থগিত রেখে একটা সার্ভে হওয়া প্রয়োজন। তারপর এই ভাড়া কার্যকর করা যেতে পারে।’

ভিক্টর পরিবহনে রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে বাড্ডা পর্যন্ত বাস ভাড়া নেয়া হতো ১০ টাকা। বাসটি চলে সিএনজিতে। ফলে ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে বাস ভাড়া বাড়লে এই বাসটিতে ভাড়া বাড়ার কোনো কারণ ছিল না।

কিন্তু চালকের সহকারী গন্তব্য প্রতি ৫ টাকা বা ১০ টাকা বেশি চাইছিলেন।

একজন যাত্রী প্রসঙ্গটা তুললেন। বলেন, ‘তোমার বাস তো মিয়া সিএনজিতে চলে। বেশি ভাড়া চাইছ কেন।’

অন্য এক যাত্রী বলেন, ‘তাই তো, সিএনজির বাসে তো ভাড়া বাড়েনি। কেন বাড়তি ভাড়া দেব।’

যে কিশোর ভাড়া কাটছিল, সে বলে, ‘আমার বাস যদি তেলে না চলে, তাইলে জুতা দিয়া বাড়ি দিবেন।’

বাসগুলো এমনিতে ডিজেলচালিতই। কিন্তু সিএনজিতে চালানোর জন্য কনভার্ট করা হয়। আর এই ধরনের গাড়িতে স্টিয়ারিংয়ের পাশে একটি আলাদা বাটন থাকে। সেগুলোতে সিএনজির পরিমাণ কত আছে, তার নির্দেশ থাকে।

ওই বাসেও সেই বাটনটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। চালকের সহকারীকে সেটি দেখালে সে মানতেই চাইছিল না। আবার বলে, ‘এইডা যে তেলের গাড়ি, সেইটা গাড়ির শব্দ শুইন্যা বোঝেন না? গ্যাসের গাড়িতে এই শব্দ হয়?’

মিরপুর থেকে সদরঘাটে চলা বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসেও দেখা গেল একই চিত্র। বাসের ভাড়া ছিল ৩০ টাকা। সকালে ভাড়া দাবি করা হয় ৪৫ টাকা।

এক যাত্রী প্রশ্ন তোলেন, এই বাস তো সিএনজিচালিত।

চালক বলেন, ‘ট্যাংকি খুইল্যা দেহেন, আমাগো বাস সিএনজিতে চলে, নাকি ডিজেলে চলে।’

ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী ফারুক আহমেদ চিৎকার করে কন্ডাক্টরকে বলেন, ‘এক টাকাও ভাড়া বেশি দেব না।’

অনেক তর্কাতর্কির পর ৫ টাকা কম দিয়ে ৪০ টাকা ভাড়া দেন তিনি।

গত বুধবার রাতে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শুক্রবার থেকে ধর্মঘটে যান বাসমালিকরা।

তিন দিনের দুর্ভোগের পর রোববার সন্ধ্যায় যখন বাস ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা আসে, তার পর থেকেই যাত্রী পরিবহন শুরু হয়।

সড়ক পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সঙ্গে মালিকদের বৈঠক শেষে বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে স্পষ্টতই জানানো হয়, এই বর্ধিত ভাড়া সিএনজিচালিত বাসের জন্য নয়।

তবে বাস মালিকদের নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে করে বসেন অদ্ভুত দাবি। তিনি বলেন, অল্প কিছু বাস সিএনজিতে চলে। সেগুলোতেও বর্ধিত হারে ভাড়া কার্যকর না করা উচিত হবে না।

তবে এত দিন জানা যাচ্ছিল, ঢাকায় অল্প কিছু বাসই ডিজেলে চলে। আর ২০১৫ সালে যখন সিএনজির দাম বাড়ানোর কারণে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়, তখন সব বাস সিএনজিতে চলে এমন কথা বলেই বাসমালিকরা ভাড়া বাড়ান।

এবার ঘটল উল্টো ঘটনা। সকাল থেকেই সব বাস বাড়তি ভাড়া আদায় করা শুরু করে। যাত্রীরা প্রশ্ন তুলতেই চালক ও সহকারী দাবি করতে থাকেন, তাদের বাস চলে ডিজেলে।

মিরপুর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত বাসে ১৫ টাকার জায়গায় ২০ টাকা ভাড়া দিতে বাধ্য হওয়া নাহিয়ান আরেফীন জানতেন, সেই বাস সিএনজিতেই চলে। তিনি চালকের সহকারীকে সে কথা বললেনও। কিন্তু মানাতে পারলেন না।

নিউজবাংলাকে নাহিয়ান বলেন, ‘কী বলব ভাই, যখন সিএনজির দাম বাড়ল তখন দেখলাম সব বাসই সিএনজিচালিত হয়ে গেল। এখন আবার ডিজেলের দাম বাড়ল, কী একটা অবস্থা! নগদের ওপর সব বাস ডিজেলের হয়ে গেল! এও সম্ভব!’

তিনি বলেন, ‘এমন কোনো বাস দেখলাম না আজকে যে সিএনজিতে চলে। এতগুলা বাসের ইঞ্জিন কীভাবে এক রাতে চেঞ্জ হয়ে গেল ভাই মাথাতেই ঢুকছে না। এটা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ সরকারের এটা দেখা উচিত৷’

লাব্বাইক বাসের যাত্রী আরমান আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো বাস সিএনজিচালিত না ডিজেলচালিত এটা বোঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, এটা সরকারের মনিটর করা উচিত যে, কোন বাস সিএনজিচালিত আর কোন বাস ডিজেলচালিত। তাহলে যাত্রীদের এমন দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।’

যাত্রীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১৫ সালে সিএনজির মূল্য যখন বাড়ল, তখন বাসমালিকরা বলল, তাদের মাত্র ২ শতাংশ বাস তেলে চলে। এ কথা বলে তারা ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে বাস ভাড়া বাড়িয়ে নিল। এখন যখন ২০২১ সালে এসে তেলের দাম বাড়ল, তখন তারা আবার বলে, তাদের মাত্র ২ শতাংশ গাড়ি সিএনজিতে চলে।’

তিনি বলেন, ‘এই ইস্যুটি এখন সুরাহার দাবি রাখে। তাই ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে এই বর্ধিত ভাড়া স্থগিত রেখে একটা সার্ভে হওয়া প্রয়োজন। তারপরে এই ভাড়া কার্যকর করা যেতে পারে।’

উপায় কী?

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলাম, ডিজেলচালিত ও সিএনজিচালিত বাসের সামনে স্টিকার সাঁটানো প্রয়োজন। আজকে যখন ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পর পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হলো, সারা দেশে সিএনজিচালিত, অকটেনচালিত সব ধরনের যানবাহনের ভাড়া বেড়ে গেছে। সুযোগসন্ধানী পরিবহন মালিকরা এই সুযোগটা নিয়েছে।’

তবে বিআরটিএর এই ধরনের কোনো উদ্যোগ বা চিন্তা নেই। উল্টো সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বিষয়টি ছেড়ে দিলেন যাত্রীদের ওপর।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিএনজির সিলিন্ডার তো গাড়িতেই থাকে। যাত্রীরা একটু কষ্ট করে দেখে নিয়ে তারপর ভাড়া দিলেই হয়।’

যাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যখন ভাড়া দেবেন, অবশ্যই একটু দেখে নিয়েন, বাসটি সিএনজিচালিত না ডিজেলচালিত। এরপর ভাড়া দেবেন।’

এটা যাত্রীদের দায়িত্ব কি না, এমন প্রশ্নে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাজধানীতে অসংখ্য পরিবহন রয়েছে। চাইলে বিআরটিএর একার পক্ষে বাড়তি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। আমরা মাঠে আছি। এই কাজে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’

এ বিভাগের আরো খবর