বরগুনার দুটি নৌরুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও কমে যাত্রী পরিবহন করছে লঞ্চ। তবে তা আগের তুলনায় ১০০ টাকা বেশি। অন্যদিকে, বরগুনার দূরপাল্লার রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় বাস চলাচল করলেও আন্তজেলা সড়ক পরিবহনে বেশি আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে যাত্রীদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। সেবার মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরগুনা ও আমতলী থেকে ঢাকাগামী দুটি রুটে প্রতিদিন কয়েকটি লঞ্চ চলাচল করে। এর মধ্যে এমকে শিপিং লাইন্সের একটি লঞ্চ বরগুনা-ঢাকা রুটে নিয়মিত চলাচল করে। আর আমতলী থেকে ঢাকা রুটে ইয়াদ, সুন্দরবন ও তরঙ্গ নামে তিনটি লঞ্চ চলাচল করছে।
এমকে শিপিং লাইন্সের বরগুনা ঘাটের ব্যবস্থাপক এনায়েত হোসেন জানান, বরগুনা-ঢাকা রুটের দূরত্ব ২৭৮ কিলোমিটার। সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুসারে ডেকের যাত্রীদের জন্য ভাড়া বাড়িয়ে প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা করা হয়েছে। এ হিসাবে এই রুটে ভাড়া আসে ৫৫৬ টাকা। কিন্তু রোববার রাত ১০টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া এমকে শিপিং লাইন্সের এমভি শাহরুখ লঞ্চে ৫০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়েছে।
এই রুটে এর আগে ৩৫০ টাকা আদায় করা হতো। পরে করোনার সময় তা বাড়িয়ে ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ডিজেলের দাম বাড়ার পর সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে বর্তমানে ৫০০ টাকা হারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
এনায়েত বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম আদায় করতাম। এখনও তাই করছি। যাত্রীদের সহনশীলতার কথা ভেবে আমরা এই রুটে ভাড়া আদায় করে আসছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ডেকের চার গুণ ভাড়া কেবিনের। আমরা সিঙ্গেল কেবিনে এর আগে ১০০০ টাকা নিতাম। করোনার সময় তা বাড়িয়ে ১৩০০ টাকা এবং এখন ১৫০০ টাকা নিচ্ছি। একইভাবে ডাবল কেবিনে আগে ২৫০০ টাকা নিলেও এখন ৩০০০ টাকা নির্ধারণ করেছি।
আমতলী-ঢাকা রুটের দূরত্ব ২৮৫ কিলোমিটার হলেও বরগুনার চেয়ে সব সময়ই ৫০ টাকা কম হারে ভাড়া আদায় করা হতো। ওই রুটে চলা এমভি তরঙ্গ লঞ্চের ভাড়া আদায়কারী বলেন, সরকার নির্ধারিত হারে আমাদের রুটে ভাড়া আসে ৫৭০ টাকা। কিন্তু আমরা এখন আগের ভাড়ার চেয়ে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৪৫০ টাকা করেছি। এর আগে এই রুটে ৩০০ টাকা এবং করোনার সময় ৩৫০ টাকা আদায় করা হতো।
আন্তজেলা বাসে বেশি
নৌপথের ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে সড়কে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চলাচলকারী বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত রেটের চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করছে।
রুট সুপারভাইজার বাহাদুর মিয়ার তথ্যমতে, বরগুনা থেকে বরিশাল রুটের ভাড়া এখন ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়ার হিসাবে এই রুটের ৭৭ কিলোমিটারে ভাড়া আসে ১৩৮ টাকা।
বাহাদুর জানান, আগে থেকেই এসব বাস ১৫০ টাকা ভাড়া আদায় করত এখন আরও ২০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
এ ছাড়া বরগুনা-বেতাগী রুটে আগে থেকেই ৬০ টাকা আদায় করা হতো। এখন ১০ টাকা বাড়িয়ে এ রুটের ভাড়া ৭০ টাকা করা হয়েছে। অথচ এই রুটের ৩৩ কিলোমিটারে সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া আসে ৫৯ টাকা।
তবে বরগুনা থেকে নিশানবাড়িয়া রুটে সরকারি হারে ৩০ কিলোমিটারে ৫৪ টাকা ভাড়া আসলেও ৫০ টাকা আদায় করা হয়। এ ছাড়া বরগুনা থেকে পুরাকাটা ১১ কিলোমিটারে সরকারি রেটে ২০ টাকা আসলেও এখন ২৫ টাকা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি গোলাম মোস্তফা কিসলু বলেন, ‘বিভিন্ন রকমের অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্মের কারণে আমরা টিকে থাকার প্রয়োজনে ভাড়ার হার নিজেরাই নির্ধারণ করে বাস চালাচ্ছি। সরকার এখন ভাড়া বাড়ালেও আমরা একটি রুটে আগের চেয়ে ২০ টাকা ও বেতাগী রুটে ১০ টাকা ও পুরাকাটা রুটে ৫ টাকা ভাড়া বাড়িয়েছি। আমাদের ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের কোনো অভিযোগ নেই।’
ভাড়া বাড়েনি দূর পাল্লায়
দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ায়নি বাস মালিকেরা। বরগুনা থেকে ঢাকা সড়ক পথের দূরত্ব মোট ৩১৬ কিলোমিটার। সরকার নির্ধারিত রেটে এই রুটে ভাড়া আসে মোট ৬০৪ টাকা। এ ক্ষেত্রে ঢাকা-বরগুনা রুটে আগের ৬০০ টাকা হারেই ভাড়া আদায় করছে কাউন্টারগুলো।
বরগুনা থেকে ঢাকা রুটের সোনারতরী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগেও ৬০০ টাকা ভাড়া নিতাম। এখনও ৬০০ করেই নিচ্ছি। একই ভাড়ায় সাকুরসহ অন্য বাসগুলোও বরগুনা থেকে রাজধানীতে যাত্রী পরিবহন করছে।’
তবে যাত্রীরা বলছেন, ভাড়ার তুলনায় সেবার মান অনেক খারাপ। বরগুনা যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সোহেল হাফিজ বলেন, ‘বাসের ভাড়া আগে থেকেই বেশি ছিল। অথচ এদের সেবার মান সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শর্ত পূরণ করে না। আশা করছি, নতুন রেটে যে ভাড়া আসে তা-ই আদায় করা হবে। এ ব্যাপারে বাস মালিক সমিতি ও জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।’