জেল আপিল নিষ্পত্তি হয়ে ফাঁসি কার্যকর হলেও অনিষ্পন্ন থেকে গেছে আসামিপক্ষের দায়ের করা নিয়মিত আপিল। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ফলে তালিকায় থাকা আসামির আপিল শুনানির জন্য তালিকায় আসে।
সোমবার আপিল বিভাগে এ বিষয়ে শুনানি হয়। প্রশ্ন ওঠে, একটি আপিল নিষ্পত্তি হলেও আরেকটি আপিল কীভাবে থেকে গেল। এর দায় কার, তা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ শুনানি হয়। আদালত বলছে, প্রথমত, এ ভুল আইনজীবীদের। আর আইনজীবীরা বলছেন, আসামিপক্ষের কেউ যোগাযোগ রাখেনি। দ্বিতীয়ত, সিস্টেম ডিজিটাল না হওয়ায় এটি হয়ে থাকতে পারে। পর আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করে দেয়।
সোমবার (৮ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ দিন ঠিক করে দেয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ। অন্য দিকে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
আপিল বিভাগের তালিকায় থাকা ২৬ নম্বর আইটেমটি কল করলে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, ‘মাই লর্ড, এই মামলাটা তালিকায় আসার পর পত্রপত্রিকায় দেখলাম, এখানে নাকি আপিল পেন্ডিং থাকা অবস্থায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এটা শোনার পর আমরা খোঁজ নিয়ে দেখলাম, এরা একটা জেল আপিল ফাইল করেন। আমরা সে রায়ের সার্টিফায়েড কপি দেখলাম।’
তিনি বলেন, ‘জেল আপিলে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড ছিলেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা।’
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, এখানে আপিলকারী প্রথম জনের নাম কী?
অ্যাটর্নি বলেন, ঝড়ু।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, এ মামলার জেল আপিল নম্বর ০৩/২০১৬। শুধু তাই নয়, এ মামলার পেপারবুক তৈরি হয়েছে কোর্টের মাধ্যমে।
২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর শুনানি হয়েছে। পরে ওই দিনই রায় দেওয়া হয়। ১৪ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি আসামির দায়ের করা আপিলের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড সুফিয়া খাতুনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি কি এটা জানেন না? যখন জেল আপিল করা হয়, তখন একটা আবেদন দিয়ে দুটি একসঙ্গে কনভার্ট করে নিতে হয় যে, আমরা রেগুলার (নিয়মিত) আপিল করছি, আমাদের এটা কনভার্ট করে নেন।’
তখন আইনজীবী সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘এ মামলায় ক্লায়েন্ট আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। কোনো ফাইল দেয়নি। মামলা যিনি দিয়েছেন, তাকে যথাসময়ে জানিয়েছি। কিন্তু তারপর আর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তখন আইনজীবী এমডি রুহুল আমিন তুহিন এ মামলার আইনজীবী বলে জানিয়েছিলেন।
‘তিনি ছাড়া আর কোনো ক্লায়েন্ট বা আর কারও সাথে যোগাযোগ হয়নি। আসামির পরিবারের কারও সাথে যোগাযোগ হয়নি। তাছাড়া দুটি আপিল হলে সেকশনই তো যোগ করে দেয়।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সেকশন তো যোগ করে না। আমাদের এখানে তো ডিজিটাল সিস্টেম না। বরং আপিলকারী আইনজীবী এসে বলেন যে, এটা ওইটার সঙ্গে ট্যাগ করেন। মামলায় ক্লায়েন্টদের যখন যোগাযোগ থাকে, তখনই আমরা অ্যালার্ট হই।’
জেল আপিলে নাহিদ সুলতানা কীভাবে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডে হলেন, প্রশ্ন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা হয়তো কোর্ট থেকে নিয়োগ দিয়েছে।
সুফিয়া খাতুন বলেন, এটা তাহলে নাহিদ সুলতানারও দায়িত্ব ছিল আপিলের বিষয়টি বলে দেওয়া।
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল জেল আপিলে আইনজীবী নাহিদ সুলতানা কী বক্তব্য আদালতে দিয়েছিলেন, সেটা পড়ে শোনান।
পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী আসিফ হাসান আদালতে যুক্ত হয়ে কথা বলার সুযোগ চান।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এ মামলায় আপিল বিভাগে রায় হয়েছে ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর। ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রত্যাখ্যান করলেন। আর কারা কর্তৃপক্ষ তার পরিবারকে দেখা করার জন্য চিঠি দিল ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর। চিঠির পর তাদের পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎও করেছেন। রায় কার্যকর হলো ১৭ নভেম্বর। রায়ের এক বছর পর কারা কর্তৃপক্ষ তাদের চিঠি দেয়। এই এক বছর পর্যন্ত আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কিছুই করলেন না।
‘এতটা সময় পেল তারপরও তার কোনো আইনজীবী কিছুই জানাননি।’
এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ আগে আইনজীবী হুমায়ন কবির আমাকে এ মামলায় যুক্ত করেন। তিনি এ মামলাটি করে দিতে বলেন।
‘পরে আমি বললাম, তুমি মামলায় আসামিদের পরিবারের খোঁজ নাও। আমি একটু পড়ে দেখি। এরপর মামলাটি নিয়ে আমি প্রস্তুত হলাম। ওই দিন রাতে আইনজীবী হুমায়ন কবির আমাকে জানান, এ মামলায় আসামিদের সাজা কার্যকর হয়ে গেছে। আইনজীবী হুমায়ন কবির ওই এলাকার বাসিন্দা। তিনি আপিলে এনরোল না থাকায় ২০১৩ সালে আইনজীবী নওয়াব আলীকে সাহেবকে দিয়ে ফাইল করেছিলেন। তিনি তো নাই (মারা গেছেন)।
‘ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি শুনে আমি বললাম, অসম্ভব এটা তো হতে পারে না। আপিল পেন্ডিং থাকা অবস্থায় এটা কীভাবে কার্যকর হয়। তখন আমি হুমায়ন কবিরকে বললাম, তুমি আরও খোঁজ নাও। তারপর বারবার খোঁজ নেওয়ার পরে তিনি নিশ্চিত হলেন, আসামিদের ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেছে। তখন আমি তাকে বললাম, ঠিক আছে আমি কোর্টকে জানাই। এটা তো হতে পারে না। শত বছরেও এমনটি হয় না। পরবর্তী সময়ে পত্রপত্রিকা ও অ্যাটর্নি জেনারেল থেকে জানলাম, এটাতে জেল আপিল হয়েছে।
‘আসামির পরিবারের সদস্যরা অশিক্ষিত, অজপাড়াগাঁয়ের। তারা জেল আপিল কী, তাও মনে হয় বোঝে না। তারা নাকি জেলখানায় গিয়েছিল, দেখা করে কান্না করতে করতে বাড়ি চলে গেছে।’
এ সময় আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘মিস্টার আসিফ বলেন তো দেখি এখানে প্রসিডিওর মেইনটেইন হয়েছে কি না?’
জবাবে আইনজীবী আসিফ বলেন, ‘মাই লর্ড, একটু ইয়ে আছে। যেহেতু আমাদের কোর্টের একটা রুলস আছে।’
বিচারপতি বলেন, ‘আপিল শুনানি শেষে রায়, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সব কিছু হয়েছে কি না ‘
আইনজীবী বলেন, ‘এগুলো হয়েছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট রুলস অনুযায়ী বর্তমান আপিলের নোটিশ অবশ্যই জেলখানায় গিয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে ফাঁসি কার্যকর পর্যন্ত চার বছরে এটা পৌঁছাবে না, এটা অসম্ভব ব্যাপার। এটা তো অবশ্যই গেছে। তাদের উচিত ছিল, যেখানে একজন মানুষের জীবন যাচ্ছে, তাদের সতর্ক হওয়া।’
তখন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘তাদের যেমন উচিত ছিল, অ্যাডভোকেটের কি উচিত ছিল না? যখন জেল আপিল নিষ্পত্তি হয়ে গেল, এটা তো আমরা জানতে পারিনি, কেউ জানায়নি।’
এ সময় আপিল বিভাগের বিচারপতি নূরুজ্জামান বলেন, ‘আপিলটা ফাইল করেই তো আপনারা একটা দরখাস্ত করবেন স্টে নেওয়ার জন্য।’
আইনজীবী বলেন, ‘মাই লর্ড, আমরা ফাইল করলেই ধরে নেই যে ইনফর্ম হয়ে গেছে।’
বিচারপতি বলেন, ‘তাহলে স্টে করার বিষয়টি কেন আসে?’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড আইনজীবীর বক্তব্য হলো, তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগই করেনি।’
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘গতকাল একটা মামলায় রাষ্ট্রপতি এরই মধ্যে তার ক্ষমার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তারপরও আইনজীবী যখন বিষয়টি জানালেন আমরা কিন্তু তখন ফাঁসি কার্যকরে স্থগিতের আদেশ দিয়েছি, রিভিউ দেখব বলে।’
তিনি বলেন, ‘একটা মানুষের ফাঁসি হয়ে যাবে, আমরাই হয়তো আদেশ দিয়েছি। কিন্তু শেষ চেষ্টা তাকে করতে দেওয়া উচিত।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপিল বিভাগে এনরোল না হয়েও যখন অন্য একজনকে দিয়ে মামলা ফাইল করেছেন, তখন তিনি যদি আপিলের পদ্ধতি না জানেন, তখন মহা মুশকিলের কথা।’
আইনজীবী আসিফ বলেন, ‘আমরা যখন আপিল ফাইল করি, তখন অটোমেটিক্যালি ফাঁসির কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এটা অর্ডার ২৪ রুলস ৫-এ আছে।’
আইনজীবী আসিফ আরও বলেন, ‘মানুষের ভুল হতেই পারে। পৃথিবীতে এমন কেউ নাই, যার ভুল হয় না। এটা হতেই পারে। কিন্তু আমাদের চাওয়া হচ্ছে, জেল কর্তৃপক্ষ আরও সতর্ক হবে। তাদের আরও একটু যাচাই-বাছাই করা উচিত ছিল।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জেল আপিল তো মেরিটে শুনানি হয়েছে।’
আইনজীবী বলেন, ‘ঠিক আছে, তবে দুটি ট্যাগ হওয়া উচিত ছিল।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা যখন আইনজীবী ছিলাম, জেল আপিল যখন থাকে, তখন আমরা সেটি কনভার্ট করেছি। এই প্র্যাকটিস তো এখন টোটাল বন্ধ হয়ে গেছে।’
আইনজীবী বলেন, ‘এটা মাই লর্ড এখনও করছি। যখন জানতে পারি, জেল আপিল আছে, তখন সেটি ট্যাগ করে দেয়। সময়মতো আমাদের আপিলটা ফাইল হয়েছে, তারপরও কেন এমনটি হলো, তারপরও কষ্ট হচ্ছে মানুষের জন্য কিছু করতে পারলাম না। আমরা দুজন মানুষের জন্য চেষ্টা করতাম। জেল আপিলের আমরা কিছুই পাইনি।’
তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ বলেন, ‘এটা রিপোর্টেড রায়। রায়টি ৫৯ ডিএলআরে আছে।’
আইনজীবী বলেন, ‘মাই লর্ড এ বিষয়ে একটা গাইডলাইন দিয়ে দেন। সাথে সাথে এই গরিবদের জন্য যদি কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়।’
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘এই ক্ষতিপূরণ কিসের জন্য?’
বিচারপতি নূরুজ্জামান বলেন, ‘যে আইনজীবী ভুল করেছেন, তাকে বলেন। তিনি কিছু দিয়ে দিক। এটা তো কথা না।’
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আইনজীবী আসিফ হাসানের কাছে জানতে চান, ‘জেল কর্তৃপক্ষের দোষটা কোথায়? আপিল বিভাগ থেকে অন মেরিটে জাজমেন্ট হয়েছে, সেটা কমিউনিকেশন হয়েছে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা খারিজ হয়েছে, পরে রায় কার্যকর করা হয়েছে।’
আইনজীবী আসিফ হাসান তখন বলেন, ‘আইনগত কোনো ভুল নাই।’
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তখন বলেন, ‘তাহলে জেল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন কেন?’
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘যেহেতু মামলা লিস্টে (কার্যতালিকায়) এসেছে, শুনানি হয়েছে, উচিত ছিল অ্যাপিয়ার করা। জেল আপিলের সাথে এটা ট্যাগ করে দিতে পারতেন। আপনারা দোষটা স্বীকার করেন না কেন?’
আসিফ হাসান বলেন, ‘এমন একটা মক্কেল, এমনই মূর্খ এবং গরিব মানুষ এরা, আইনজীবীকে জানায়ওনি কখনও যে, জেল আপিল হয়েছে বা করেছে তারা। আদৌ তারা জেল আপিল বোঝে কিনা সন্দেহ আছে।’
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘এটা তো কোনো ব্যাখ্যা না। জেল আপিল হয়েছে, শুনানি হয়েছে, রিপোর্টেড হয়েছে…’
আসিফ হাসান বলেন, ‘আইনগতভাবে সবই ঠিক আছে।’
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘রায় হওয়ার সাথে সাথে এই আপিলটা (ফৌজদারী আপিল) ইনফেকচ্যুয়াস (অকার্যকর) হয়ে গেছে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আপিল বিভাগে এরা তিনজনই আছে।’
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আইনজীবী আসিফ হাসানকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘যে কথাটা বলেছেন, উনি সিনিয়র মানুষ। আমরা সবাই আইনজীবী থেকে এখানে এসেছি। প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে সবাই আইনজীবী ছিলেন। যার অবহেলা (ফাঁসি কার্যকর হওয়া ব্যক্তির ফৌজদারি আপিল কার্যতালিকায় আসার ক্ষেত্রে), সে আইনজীবী, যার জীবন গেল সে অভিযুক্ত এবং দণ্ডিত। নিচের আদালতে দণ্ডিত, আপিল বিভাগেও দণ্ডিত সব ধরনের প্রক্রিয়ায়। জেলখানায় তাদের স্বজনরা দেখা করল, সবকিছুই হলো। পত্রিকায় যেভাবে নিউজটা আসল, আপনাদের এগিয়ে আসা উচিত ছিল। এগিয়ে এসে বলা উচিত ছিল ঘটনাটা এ রকম।’
আইনজীবী আসিফ হাসান এ সময় বলেন, ‘সেইটা বলার জন্যই আমি অপেক্ষা করছি।’
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আপনারা কিছুই করেননি। আমরাও অ্যাডভোকেট ছিলাম। আজকে আপনি বলছেন জেলখানা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা, তাদের সতর্ক করা। তারা যথেষ্ট সতর্ক থাকে, তারা কিন্তু বিষয়গুলোকে ফলো করে এবং তাদের রেকর্ড ঠিক থাকে। দেখেছি, রেকর্ডে খুব একটা ভুল হয় না। আমাদের ভুলের কারণে, আমাদের বলতে অ্যাডভোকেটদের, ভুলের কারণে অনেক সময় এ রকমটা হয়। আমরা (বিচারপতিরা) কোর্টে বসে থাকি, অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডরা আসেন না। বারবার বলা হচ্ছে, অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডরা আসেন না। কী ধরনের দায়িত্ব বলেন?’
আইনজীবী আসিফ হাসান বিচারপতির কথায় সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘এ রকম হচ্ছে।’
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আইনজীবী আসিফ হাসানের কাছে জানতে চান, ‘জেল কর্তৃপক্ষের দোষটা কোথায়?’
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বিচারপতিদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা অন্তত রায়টা (আপিল বিভাগের) তো দেখেছেন, অ্যাডজাস্টিং জাজমেন্ট (সমন্বিত রায়)। জবানবন্দি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।’
এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আচ্ছা, আগামীকাল (মঙ্গলবার) এটা থাকুক। আগামীকাল এক নম্বর থাকবে এটা।’
এ সময় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাকে বাদ দিয়ে দেন, যেহেতু আমি এ মামলার ফিলইন লইয়ার ছিলাম।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বলা হয়েছে যে, আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। সাথে সাথে অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব খবর নিলেন, আমার এখানে আসলেন রাতে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমি সাথে সাথে জেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রলায়ের সাথে যোগাযোগ করেছি। উনারা আমাকে একদম চার্জশিট পাঠাইছে, নাম্বার পাঠাইছে, আপনাদের আদেশ দেখছি, দেখলাম যে, না এটা ঠিক না, যেভাবে (সংবাদপত্রে) আসছে, এটা ঠিক না। সাংবাদিকদের প্রপার ইনফরমেশন দেওয়া হয় নাই।’
এ সময় বিচারপতি নূরুজ্জামান বলেন, ‘এক মানুষ এটা (আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আসামির ফাঁসি কার্যকরের খবর) পত্রিকায় দেখে আমাদেরকে, কোর্টকে কত সমালোচনা করেছে। তারা কি ভেতরের এসব ঘটনা জানে? টক শোতে কত কথা বলা হচ্ছে।’
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘কেন করবে না, টক শো হয়েছে।’
আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, ‘এসব (জেল আপিল নিষ্পত্তির পর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন নাকচের পর ফাঁসি কার্যকর করার কথা) কারুরই জানা ছিল না।’
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব, আপনার কলিগরা, অ্যাডভোকেট সাহেবরা, তারা কমেন্ট করতেছেন। তারা কোনো কিছু না দেখে কমেন্ট করতেছেন, এটা কি ঠিক হলো?’
বিচারপতি নুরুজ্জামান বলেন, ‘অ্যাডভোকেট শিশির মনির কি আপিল বিভাগে তালিকাভুক্ত? সে যেভাবে মন্তব্য করেছে যে, সবাই দোষী। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, কোর্ট, বিচারক, এক্সিকিউট যারা করেছে, তারা সবাই দোষী। উনি কিছু না দেখে কেন এ রকম মন্তব্য করলেন? আমাদের সবারই মনে রাখতে হবে, আমরা কেউ প্রিজাইডিং অফিসার, কেউ কোর্ট অফিসার। এ রকমভাবে কোর্টকে অ্যাটাক করা, এটা তো খুব খারাপ স্ট্যান্ড। প্রয়োজনে তো সবাই কোর্টে আসে, সবাই রিলিফ নেয়, সবাই রিলিফ পায়। কোর্টের কোনো সামান্যতম ত্রুটি হইলেই এ রকম করে অ্যাটাক করা, এটা তো খুবই দুঃখজনক। আমরা তো কোনো অ্যাডভোকেট সাহেবকে এ রকমভাবে অ্যাটাক করি না, পানিশমেন্ট দেই না। আমরা তো চেষ্টা করি, কোনো একটা ভুল হলে ভুলটা শুধরে কীভাবে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়।’
এরপর প্রধান বিচারপতি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আপিল বিভাগের দিনের কার্যক্রম শেষ করেন।