ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া বাড়ানোর পর রাজধানীতে সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ার কোনো প্রতিকার করতে পারল না সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ। ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর সিএনজির বাসে বাড়তি ভাড়া নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার এখন বিষয়টি যাত্রীদের ওপর ঠেলে দিয়েছেন।
রোববার তেলচালিত বাসের ভাড়া বাড়ানোর পরদিন রাজধানীতে চলা সব বাসের শ্রমিকরাই দাবি করছেন, তাদের গাড়ি তেলে চলে।
সোমবার সকাল থেকেই নগরীর বাসগুলোতে যাত্রীদের সঙ্গে শ্রমিকদের তর্কাতর্কি দেখা যায়। কিন্তু এই তর্ক করলেও যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া থেকে নিস্তার নেই। শেষ পর্যন্ত দিতেই হয়েছে অতিরিক্ত টাকা।
আবার বিআরটিএ কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া ঠিক করলেও বাসগুলো এই হিসাবের ধারও ধারছে না। একটি নির্ধারিত গন্তব্য পর্যন্ত যে হারে ভাড়া নির্দিষ্ট করা ছিল, তার সঙ্গে ৫ বা ১০ টাকা বা আরও বেশি যোগ করে আদায় করা হচ্ছে।
যেমন যেখানে ভাড়া ছিল ১০ টাকা, সেখানে আদায় চলছে ১৫ টাকা, যেখানে ভাড়া ছিল ৩০ টাকা, সেখানে আদায় করা হচ্ছে ৪৫ টাকা। কিলোমিটারের দূরত্বের কোনো হিসাবই নেই।
সিএনজিচালিত বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে এক প্রশ্নে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিএনজির সিলিন্ডার তো গাড়িতেই থাকে। যাত্রীরা একটু কষ্ট করে দেখে নিয়ে তারপর ভাড়া দিলেই হয়।’
যাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যখন ভাড়া দেবেন অবশ্যই একটু দেখে নিয়েন, বাসটি সিএনজিচালিত না ডিজেলচালিত। এরপর ভাড়া দেবেন।’
রোববার বাস ভাড়া বাড়াতে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার
এটা যাত্রীদের দায়িত্ব কি না, এমন প্রশ্নে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাজধানীতে অসংখ্য পরিবহন রয়েছে। চাইলে বিআরটিএর একার পক্ষে বাড়তি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। আমরা মাঠে আছি। এই কাজে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
তাহলে বিআরটিএর দায়িত্ব কী?- এমন প্রশ্নে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া নিলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে সিএনজিচালিত বাসে ভাড়তি ভাড়া আদায় করলে আইন অনুযায়ী জরিমানা ও মামলা করা হচ্ছে।
‘বিআরটিএর মনিটরিং নেই এটা ভুল কথা। আমিসহ ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করছে। যাত্রীদের কাছ থেকে ঘোষিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া না নেয়া হয়, এ বিষয়টি তারা দেখছে।’
‘এই বক্তব্য দায়িত্ব এড়ানোর’
যাত্রীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিআরটিএ চেয়ারম্যান তার দায়িত্ব এড়ানোর জন্য এই কথাটি বলছেন। এই অনৈতিক কাজ করানোর জন্য আপনাকে এই প্রতিষ্ঠানে বসানো হয়নি। আমি তার এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমি বলব, দায়িত্বশীল পদে থেকে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা দায়িত্বশীল কথাবার্তা বলবেন এবং জনগণকে স্বস্তি ও শান্তিতে যাতায়াতের সুযোগ করে দেবেন।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি দায়িত্বটি সরকার তথা বিআরটিএর। যে বিআরটিএ ভাড়া নির্ধারণ করবে, তাকেই নির্ধারণ করে দিতে হবে কোন বাসটি সিএনজিচালিত, কোন বাসটি ডিজেলচালিত। তা না হলে একই বাসের ভাড়া বাড়ালেন, যখন সিএনজির মূল্য বেড়েছিল। আবার এখন একই বাসের ভাড়া বাড়ালেন, যখন ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।’
যাত্রীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী
মোজাম্মেল বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলাম, ডিজেলচালিত ও সিএনজিচালিত বাসের সামনে স্টিকার সাঁটানো প্রয়োজন। আজকে যখন ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পর পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হলো, সারা দেশে সিএনজিচালিত, অকটেনচালিত সব ধরনের যানবাহনের ভাড়া বেড়ে গেছে। সুযোগসন্ধানী অসাধু পরিবহন মালিকরা এই সুযোগটা নিয়েছেন।’
বাড়তি ভাড়া কখনও ঠেকাতে পারে না বিআরটিএ
প্রতিবার যখন অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়, তখন বিআরটিএ এই পদ্ধতিতেই কাজ করে। কিন্তু কখনও তা বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে পারেনি।
বিআরটিএ এর আগেও ভাড়া ঠিক করেছে, সেটি কখনও কার্যকর করতে পারেনি। নিউজবাংলা ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া হিসাব করে দেখেছে, নতুন যে হারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি টাকা আগে থেকেই নেয়া হয়। এখন সেই বাড়তি টাকার চেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছে।
এভাবে ১০/১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ঢাকা শহরের পয়েন্টে দাঁড়িয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে না পারার প্রসঙ্গটি তুললে বিআরটিএ চেয়ারম্যান তোলেন জনবল সংকটের বিষয়টি।
বাস সিএনজি নাকি ডিজেলচালিত, এ নিয়ে তর্কাতর্কি করলেও শেষ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দিতেই হচ্ছে যাত্রীদের
তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলেই সারা দেশে একযোগে মনিটরিং করতে পারব না। চট্টগ্রামে ৩ জন ও ঢাকাতে ১০, এই ১৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে চলছে মনিটরিং।
সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে বিআরটিএর এই ধরনের কোনো তৎপরতা না দেখার বিষয়টি জানালে চেয়ারম্যান বলেন, ‘হয়তো আপনি যেখানে রিপোর্ট করতে গিয়েছিলেন সেখানে আমাদের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ম্যাজিস্ট্রেট ছিল না, বা আপনার আশপাশেই ছিল আপনি লক্ষ্য করেননি।’