খুন, অস্ত্র চোরাকারবারি, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের নেতৃত্বে চলমান বিএনপি আগামীতে রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
লন্ডনে স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া এক সংবর্ধনায় তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।
লন্ডনের কুইন এলিজাবেথ সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী তার সফরকালীন আবাসস্থল হোটেল ক্ল্যারিজ থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন।
দলটির অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে দলের নেতৃত্বে সাজাপ্রাপ্ত, পলাতক আসামি সেই দলের অস্তিত্ব থাকে কীভাবে?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই দলটির (বিএনপি) আজকে অবস্থা কী? আপনারা নিজেরা একটু বিবেচনা করে দেখুন। একটা রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে কে আছে? অস্ত্র স্মাগলিং কেসে সাজাপ্রাপ্ত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতিমখানায় দেয়ার জন্য টাকা পেল খালেদা জিয়া। সেই টাকা এতিমদের না দিয়ে ভোগ করতে যেয়ে আজকে সেও সাজাপ্রাপ্ত। আর তার ছেলে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত।’
তিনি বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামি, পলাতক সে হলো একটা দলের নেতৃত্বে, তো সেই দলের অস্তিত্ব থাকে কীভাবে। যে দলের নেতৃত্বই হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাও খুনের মামলা, অস্ত্র চোরাকারবারি মামলা থেকে শুরু করে দুর্নীতির মামলা।’
খালেদা জিয়ার সন্তানদের দুর্নীতির তথ্য জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ছেলেপেলেদের দুর্নীতি, এটা আমাদের না, এটা আমেরিকার এফবিআই খুঁজে বের করেছে। সেখান থেকে ধরা পড়েছে, সিঙ্গাপুরে ধরা পড়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাচার করা কিছু টাকা আমরা ফেরত আনতেও সক্ষম হয়েছি। এটাই হলো বাস্তবতা।’
তাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্ষমতাকে ভোগের বস্তু মনে করে, লুটপাটের ক্ষেত্র মনে করে তারা।’
বেশ কয়েকটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ‘প্রবাসে বিলাসী’ জীবন যাপন করছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আপনারা নিজেরাই এখন দেখতে পারেন। এই প্রবাসে থেকেও কীভাবে তারা জীবন যাপন করে। তাদের সোর্স অফ ইনকাম কী? অর্থ কোথা থেকে উপার্জন করে?
‘তারেক জিয়াকে জিজ্ঞেস করেন, কোথা থেকে অর্থ পায়? কীভাবে চলে? জনগণের সম্পদ লুট করে তারা বিলাসিতা করে। আর আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে থাকে, জনগণের কল্যাণ চিন্তা করে।’
২০০১-পরবর্তী সময়ে বিএনপি শাসনামলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১-এ আসল খালেদা জিয়া ক্ষমতায়, বাংলাদেশকে পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করল, লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করল, হাওয়া ভবন খুলে খাওয়া-খাওয়ি শুরু করে দিল, দেশের মানুষের শিক্ষাদীক্ষা সব নষ্ট করে দিল।’
বিএনপি-জামায়াত আমলে দেশ পিছিয়ে গিয়েছিল জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ সামনের দিকে এগোয়, পেছনে চলে যায়, তা তো কখনও দেখি নাই। তারা সেটাই দেখাল।’
জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে না, জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করব, আমার বাবার আদর্শ বাস্তবায়ন করব, স্বপ্ন পূরণ করব। দুঃখী মানুষের মুখে হাঁসি ফোটাব।’
আওয়ামী লীগ শাসনামলে দেশের অগ্রগতির কথাও প্রবাসীদের উদ্দেশে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে। উন্নয়নকাজের ৯০ শতাংশ আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারি। সেই সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথাও। একটি মহল এই সেতু নিয়ে দুর্নীতির অপবাদ দিতে চেয়েছিল বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর অপবাদ দিতে চেয়েছিল। আমার ছোট বোন রেহানা এখানে থাকে। খুব সাধারণভাবে চলাচল করে, জীবন যাপন করে, নিজে কাজ করে খায়। তাকেও পর্যন্ত জড়াতে চেয়েছিল। দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল।’
বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম যে প্রমাণ করতে হবে দুর্নীতি হয়েছে। তারা প্রমাণ করতে পারে নাই। কোনো দুর্নীতি হয় নাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি, আমরা নিজেদের ভাগ্য গড়তে আসিনি, আমরা জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি, জনগণের ভাগ্য গড়াটাই আমাদের লক্ষ্য, আর সে লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার জন্যই আমরা কাজ করছি।’
প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলে যারা বিনিয়োগ করতে চান সেখানে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ সুবিধা পাবেন। বিশেষ করে আমাদের প্রবাসী যারা তাদের জন্য আলাদাভাবে বিশেষ সুবিধা আমরা দিব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রবাসীদের সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য আমরা সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছি। কারো যদি কোনো অসুবিধা হয়, বিনিয়োগে অসুবিধা হয়, আমাকে বলবেন কী কী অসুবিধা হচ্ছে, আমরা সেটা দেখব।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ।