দুর্গাপূজার সময় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে মন্দির ভাঙচুরের মামলায় চার আসামিকে আটক করেছে র্যাবের একটি দল। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে মন্দির থেকে লুট হওয়া বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী।
চৌমুহনীতে মন্দিরে ভাঙচুরের মামলায় রোববার রাতে রাজধানীর ডেমরা, নারায়ণগঞ্জের বন্দর এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ হতে চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১১ এর একটি দল। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মন্দির থেকে লুট করা বিভিন্ন সামগ্রী। এগুলোর মধ্যে ছিল পিতলের তৈরি প্রতিমা, তৈজসপত্র, শো পিস, ধাতব মূদ্রা, প্রতিমা সাজানোর ইমিটেশনের অলংকারসহ আরও অনেক কিছু।
বাহিনীটি থেকে জানানো হয়, মন্দিরটিতে হামলার সময়কার একাধিক ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে র্যাব। সেসব ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হামলা এবং লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
উদ্দেশ্য মন্দিরে চুরি
র্যাব জানায় গ্রেপ্তার চার জনের মধ্যে তিন জন মন্দিরগুলোতে হামলাকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করার উদ্দেশ্যে।
গত ১৫ অক্টোবর চৌমুহনীর শ্রী শ্রী রাধামাধব জিউর মন্দিরে হামলার কয়েকটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে র্যাব। সেখানে গ্রেপ্তার হওয়া ৪ জনকে হামলা ও লুটপাটে অংশ নিতে দেখা যায়। এদের মধ্যে রুবেলকে মন্দিরের সমগ্রী বস্তায় ভরে নিয়ে যেতে দেখা যায়। বাকিরাও হামলা ও লুটপাট চালায়।
তাদেরকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে বিস্তারিত তুলে ধরে র্যাব। সেখানে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রুবেল চৌমুহনী এলাকার পেশাদার চোর ও ছিনতাইকারী। তার বিরুদ্ধে চুরি ও ছিনতাই মামলা রয়েছে। বাকিদের মধ্যে রাব্বী, রিপন পিকআপ চালক ও ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ করতেন।
ব্রিফিংয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রুবেল, রাব্বী ও রিপন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে প্রত্যক্ষভাবে হামলায় অংশগ্রহণ করেন। হামলা পর রুরেল, রাব্বী ও রিপন দুটি বস্তায় করে মন্দিরের বিভিন্ন পিতলের পূজার সামগ্রীসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যান। আর আটক হওয়া সোহাগ হলেন একজন ভাংগারি ব্যবসায়ী। সোহাগের সহযোগিতায় ধাতব আইটেমসমূহ রূপান্তর করে বিক্রির পরিকল্পনা করেছিলেন তারা।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা জানান, রুবেল, রাব্বী ও রিপনের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। তারা শুধু লুটপাটের উদ্দেশ্যেই মন্দিরে হামলা চালায়।
র্যাবের আরেকটি সুত্র নিউজবাংলাকে জানায়, স্থানীয় যেকোনো গণ্ডগোল হলেই রুবেল তাতে যোগ দেয় সুযোগ বুঝে চুরি করার উদ্দেশ্যে। গ্রেপ্তারকৃতরা কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে ১৫ অক্টোবর চৌমুহনী বাজারে মুসল্লিদের মিছিলে যোগ দেন। মিছিলটি বাজার এলাকা অতিক্রম করার সময় কিছু কিশোর-যুবক শ্রী শ্রী রাধামাধব জিউর মন্দিরে হামলা শুরু করে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে রুবেল, রাব্বী, রিপন দুটি বস্তায় করে মন্দিরের সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যান।
সূত্রটির দাবি, তারা প্রতিমায় থাকা ইমিটেশনের অলংকাগুলোকে আসল স্বর্ণ মনে করেছিলেন। সেই সঙ্গে সামনে পিতল ও কাসার যত সামগ্রী পেয়েছে সবই বস্তাবন্দি করে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে যাচাই করে সেগুলো আসল স্বর্ণ না হওয়ায় হতাশ হয় তারা। পরে সেগুলো সোহাগের ভাংগারি দোকানে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।