বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাদারীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য

  •    
  • ৮ নভেম্বর, ২০২১ ০৯:১৩

মাদারীপুর পৌর শহরে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ইভ টিজিং, মাদক সেবন ও বিক্রি, এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময় আটক হলেও জামিনে বেরিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়ছে তারা।

মাদারীপুর পৌর শহরে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য।

এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। বিভিন্ন মামলায় আটক করা হলেও জামিনে বেরিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা।

মাদারীপুর পৌর শহরে গত ১০ মাসে কিশোর গ্যাংয়ের হামলার অন্তত ছয়টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় হওয়া মামলায় আটক হলেও পরে জামিনে বেরিয়ে এসেছে অধিকাংশ কিশোর।

জামিনে বেরিয়ে ফের ইভ টিজিং, মাদক সেবন ও বিক্রি, এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় উঠতি বয়সের কিশোরদের অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তবে মাদারীপুরের প্রশাসনের দাবি, অভিভাবকদের অবহেলায় বেপথে যাচ্ছে এসব কিশোর। আর জেলা পুলিশ বিভাগ বলছে, কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেয়া হবে না।

সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত দশম শ্রেণির ছাত্র সৈকত সরদারের পরিবার জানায়, গত ৭ আগস্ট টিউশন থেকে তুলে এনে পৌর শহরের শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পেছনের বালুর মাঠে সৈকতকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারাত্মক জখম করে ৮ থেকে ১০ কিশোর।

হামলার সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করে ওই কিশোররাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ওই ঘটনায় ১০ আগস্ট সদর থানায় মামলা করেন সৈকতের বাবা।

পরিবারটির অভিযোগ, ওই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা জামিনে বেরিয়ে এসে নানা হুমকি দিচ্ছে।

শুধু সৈকতই নয়, গত ১০ মাসে মাদারীপুরে এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাংয়ের হামলার অন্তত ছয়টি ঘটনা ঘটেছে।

জেলার একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের জানুয়ারিতে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সদর উপজেলার মহিষেরচর এলাকায় রাজীব গৌড়াকে বেধড়ক মারধর করে। পরে ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়।

মে মাসে সদর উপজেলার পূর্ব রাস্তি এলাকায় শিশির ব্যাপারীকে পিটিয়ে আহত করা হয়। জুনে মাহিম শিকদার নামের একজনকে পুরান বাজার এলাকায় পিটিয়ে আহত করা হয়।

এ ছাড়া আগস্টে শহরের সবুজবাগ এলাকার কদর জমাদ্দার এবং একই মাসে অভি আকন নামের দুজন স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার হয়।

২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর মাদারীপুর শহরের শান্তিনগর এলাকায় একটি ভবনের ছাদে শারীরিক নির্যাতন শেষে ওপর থেকে ফেলে দেয়া হয় সোহান শেখ নামের এক কিশোরকে। এতে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়।

এসব ঘটনায় মামলা ও থানায় অভিযোগ দিয়েও কার্যত কোনো লাভ হয়নি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত এসব কিশোর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জামিনে বেরিয়ে এসেছে। হয়ে উঠেছে আরও বেপরোয়া।

আহত সৈকতের মা জালিয়া বেগম বলেন, ‘দিন দিন যেভাবে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বাড়ছে। এতে তো আমাদের সন্তানদের স্কুল-কলেজে পাঠাতে ভয় হয়। আমার সন্তানকে যেভাবে কুপিয়ে জখম করেছে, তাতে যারা গ্রেপ্তার হলো; তারা জামিনে বেরিয়ে আবারও ভয়ভীতি, হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।

‘এখন মনে হয় মামলা করেও ভুল করেছি। এদের রুখতে না পারলে আগামী দিনে আরও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে।’

মাদারীপুর লিগাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ‘পৌর শহরের ৯টি ওয়ার্ডের মাত্র ১৮টি স্থানে পুলিশের টহল জোরদার করা গেলে কিশোর গ্যাংসহ অনেক অপরাধ রোখা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘সন্ধ্যার পর ৮ থেকে ১০ জন কিশোর একত্রে হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের অভিভাবকদের জানাতে হবে। তাহলে কিশোররা অপরাধের সাথে জড়াতে পারবে না।

‘আর রাজনৈতিক বিভিন্ন সভা, মিছিল, মিটিংয়ে কিশোরদের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তাদের এক ধরনের নেশার মতো ব্যবহার করে রাজনৈতিক নেতারা। এটাও বন্ধ করতেই হবে।’

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘যেকোনো অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার জন্যে জেলা পুলিশ তৎপর রয়েছে। কিশোরদের অপরাধ কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

‘যদি সুনির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তাহলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়।’

তবে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দাবি, অভিভাবকদের সচেতনতাই পারে কিশোরদের বিপথ থেকে ফেরাতে।

জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, ‘শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতাই কিশোর গ্যাং রোধ করা যাবে না। যদি মা-বাবা সচেতন না হন, তাহলে রোধ হবে না।

‘এ জন্যে প্রত্যেক অভিভাবককে ছেলে-মেয়েকে কন্ট্রোলে রাখতে হবে। সন্ধ্যার পরে বের হতে হলে মা-বাবার অনুমতি নিয়ে বের হতে হবে। আমরা সবাই সচেতন হলে এসব অপরাধ রুখে দেয়া সম্ভব।’

এ বিভাগের আরো খবর