যশোরের মালঞ্চি মাঝের পাড়ায় নারীর মুখে চুনকালি দিয়ে, চুলকেটে ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মালঞ্চি এলাকার রিপন হোসেন, বিউটি খাতুন, বিলকিস বেগম ও জোৎস্না বেগম।
রোববার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করে পলাতক আরও তিন আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, দুই বছর আগে মালঞ্চির চুল কেটে নেয়া ওই নারীর স্বামী মারা যান। পরে তিনি মেয়েকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতেই থাকতেন। এর মধ্যে বছরখানেক আগে চাচা শ্বশুর নওয়াব আলীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তারা বিয়ে করেন। বর্তমানে তারা ওই বাড়িতেই স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করছেন।
এ ঘটনার বিরোধিতা করে আসছিলেন নওয়াব আলীর ভাগ্নে আক্তার হোসেন ও ভাইপো রিপন হোসেন। তাদের দাবি, ভাইপোর স্ত্রীকে বিয়ে করে তাদের পরিবারের সম্মান নষ্ট করা হয়েছে। তাই তার নতুন স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা বাড়িতে বসবাস করতে হবে।
কিন্তু চাচা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, তারা দুজন ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক স্বামী-স্ত্রী। তাই তারা ওই বাড়িতেই বসবাস করবেন।
পরে গত ৬ নভেম্বর দুপুরে রাজিবুল ইসলাম শিমুলের নেতৃত্বে রিপন, তার স্ত্রী জ্যোৎস্না, বিলকিস, আজগর, বিউটি, আক্তারসহ ৮/৯ জন ওই নারীকে ‘চরিত্রহীন’ আখ্যা দিয়ে মারধর করেন। এ সময় তারা ওই নারীর চুল কেটে মুখে চুনকালি মাখিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেন।
বিষয়টি জানতে পেরে স্বামী তার স্ত্রীকে মুক্ত করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আক্তার আলী ও রিপন হোসেন আহত হন। পরে পরিবারের লোকজন তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় খবর পেয়ে পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
ভুক্তভোগী নারী জানান, আইন মেনে তিনি চাচা শ্বশুরকে বিয়ে করেছেন। তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে জমি দখলের পাঁয়তারা করছে হামলাকারীরা। বাড়ি ছাড়তে অস্বীকার করায় তাকে ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মুখে চুনকালি লাগিয়ে চুল কেটে দিয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে রিপন হোসেন জানিয়েছেন, গ্রামে তারা সন্তান-সন্ততি নিয়ে বসবাস করেন। সন্তানরা বড় হচ্ছে। কথিত স্বামী-স্ত্রীর নোংরা সম্পর্কের কারণে তারা সমাজে সম্মান হারাচ্ছেন। এ জন্য চাচাকে তার স্ত্রীকে নিয়ে অন্যত্র বাস করতে বলা হয়। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের কুপিয়ে জখম করেছেন।
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম।