পল্লী বিদ্যুতের লাইনে বিদ্যুতায়িত হয়ে সাতক্ষীরার আশাশুনিতে শিশু রাকিবুজ্জামানের হাত-পা হারানোর জন্য এক শ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
রোববার শিশু রাকিবুজ্জামানের বাবা মো. আব্দুর রাজ্জাক ঢালী হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন।
রিটকারির পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম।
তিনি নিউজবাংলাকে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় শিশু রাকিবুজ্জামান বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তার হাত ও পা হারায়। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করা হয়েছে।
রিটটি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে।
রিটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিব, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়নের চেয়ারম্যান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার, জোনাল ম্যানেজার, সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার, প্রকল্প পরিচালক, সাতক্ষীরার ডিসি ও প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শককে বিবাদী করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে আইনজীবী মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত ২১ মার্চ সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার প্রতাপনগরের মো. আব্দুর রাজ্জাক ঢালীর বাসার ওপর দিয়ে আইন-বহির্ভূতভাবে ক্যাপ ও কভারবিহীন বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করে।
‘বাড়ির ওপর দিয়ে যাতে বিদ্যুৎ লাইনটি সরবরাহ না করা হয় সেজন্য শিশুটির বাবা আব্দুর রাজ্জাক ঢালী পাটকেলঘাটা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার বরাবর একটি আবেদন করেছিলেন। সে আবেদনে তারা কোনো সাড়া দেননি,’ যোগ করেন আইনজীবী।
“এরপর গত ৯ মে আব্দুর রাজ্জাক ঢালীর ৭ বছর বয়সী শিশুপুত্র রাকিবুজ্জামান ছাদের ওপর দিয়ে যাওয়া খোলা বিদ্যুতের লাইনে বিদ্যুতায়িত হয়। এতে তার শরীর ঝলসে হাড়-মাংস খসে পড়ে। রাকিবুজ্জামানকে তাৎক্ষণিকভাবে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার তাকে ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাষ্টিক সার্জারি ইনষ্টিটিউটে’ রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিগত ১২ মে রাকিবুজ্জামানের ডান হাতের বগল থেকে ও ডান পায়ের হাটু থেকে নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়।’’
এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে গত ২৫ মে আব্দুর রাজ্জাক ঢালী সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষতিপূরণসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান বা অন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। যে কারণে শিশুর বাবা আব্দুর রাজ্জাক ঢালী ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
পল্লী বিদ্যুতের অবহেলায় চট্টগামের বাঁশখালীতে মো. ইশান নামে শিশুর অঙ্গহানির ঘটনায় ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে গত ২২ আগস্ট রুল জারি করে হাইকোর্ট।
এ-সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
পরে আইনজীবী শামসুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আদালত আমাদের আবেদনের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছে।’
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে জ্বালানিসচিব, পল্লী বিদুতের চেয়ারম্যান, পল্লী বিদুতের আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকসহ ৬ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।