আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাজধানী ঢাকার ডিটেইল এরিয়া প্লান (ড্যাপ) অনুমোদন পাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
রোববার রাজধানীতে এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ড্যাপে শুধু বাসস্থান নয়, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, হাসপাতাল, দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত এমন সব কিছুকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। শহরে মানুষের চাপ কমানোর উদ্যোগও রয়েছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, রাজধানীকে বাসযোগ্য করতে ড্যাপ প্রণয়ন করছে সরকার। এরই মধ্যে এর একটি খসড়াও করা হয়েছে। খসড়ায় রাজধানীর প্রায় ৯৪ হাজার ৫৮ দশমিক ৪২ হেক্টর জমি নগর এলাকা হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর মধ্যে আবাসিক এলাকা হিসেবে ১৯ হাজার ৪৫৭ দশমিক ৬৭ একর, আবাসিক প্রধান মিশ্র ব্যবহার এলাকা এক লাখ ২৩ হাজার ৯৩১ একর আর আবাসিক-বাণিজ্যিক মিশ্র ব্যবহার এলাকা হিসেবে এক হাজার ৭৭৮ দশমিক ৯৩ একরকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্ট্রার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও উইমেন ইকোনমিক ইমপাওয়ারমেন্ট থ্রো স্ট্রেনদিং মার্কেট সিস্টেম যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নিবার্হী পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
এ কর্মশালার বিষয় ছিল ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজে গবেষণা নীতির সংযোগ।’
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম আরও বলেন, সরকারের নীতির মূল লক্ষ্য মানুষের উন্নয়ন ও সাম্য প্রতিষ্ঠা। করোনাকালীন সময়ে ব্যবসায়ী, খেটে খাওয়া মানুষ, কৃষক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ আপামর জনসাধারণের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
কর্মশালায় সিপিডির নিবার্হী পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রণোদনা প্যাকেজসহ যে সব নীতি–সহায়তা নিয়েছে সরকার, তার সুফল তেমন মিলেনি। এর অন্যতম কারণ, যারা সমস্যায় পড়েছেন তাদের কী ধরনের সুবিধা দরকার, কীভাবে সরকারের দেয়া সুবিধা নিতে হবে, কোন প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাজ করবে, এসব বিষয়ে কোনো গবেষণা ছিল না। প্রণোদনার সুবিধা পেতে গবেষণাকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, এসএমই ও নারী উদ্যোক্তারা যাতে সহজে ঋণ পান সেজন্য নীতি আরও সহজ করতে হবে।
ঢাকায় সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্স বার্গ লিন্ডে বলেন, ‘ছোটদের এগিয়ে আসার সুযোগ দিতে হবে। নারীদের আরও সুযোগ দেয়া দরকার। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নীতি স্পষ্ট হওয়া দরকার।’
নারী উদ্যোক্তা রংপুর ক্রাফটের মালিক স্বপ্না সেন ঋণ পেতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেন।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত নাজুক অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জকে আরও কঠিন করে তুলবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ বলেন, ‘নারী ও ছোট উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে এখন বৃত্তের বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে হবে। সময় হয়েছে এসএমই ব্যাংক ও নারী ব্যাংক চালুর।’
এমএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক ফারজানা খান বলেন, নারী উদ্যোক্তারা চাহিদামতো ঋণ পাচ্ছেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বলেন, ‘এসএমই খাতের জন্য যে নীতিমালা করা হয়েছে, তা অনেক ভালো। তবে এর বাস্তবায়ন আশানারূপ নয়। ঋণ পরিশোধের শর্ত আরও শিথিল করার পরামর্শ দেন।’
কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।