লোকশিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া অভাব-অনটনের কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গান গেয়ে টাকা সংগ্রহ করছেন- এমন একটি পোস্ট দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। পোস্টে সুফিয়ার একটি গানের ভিডিও যুক্ত করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আবু নাঈমের ওই পোস্টটি শেয়ার করেছেন অনেকে। প্রখ্যাত এই শিল্পীর নিরুপায় হয়ে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টায় অনেকেই প্রকাশ করেছেন আক্ষেপ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী আবু নাঈম তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘জাহাঙ্গীরনগরের রাস্তায় হাঁটছিলেন, অথচ তাকে কেউ চিনতে পারছিল না! চিনলেও দূর থেকে দেখছিল। মাঝেমধ্যেই কাছে কাউকে দেখলে টাকা চাচ্ছেন। পরে Azad আর আমি গাড়িতে করে ক্যাফেটেরিয়ায় নিয়ে আসি। পরে শোনালেন তার অভাবের কথা। অনেক অসুস্থ। এখন আর কেউ তাকে গানের জন্য ডাকে না। পরে তার কয়েকটা গান শোনালেন। গান শুনে আরও অনেকেই কাছে আসলেন। যদিও সামর্থ্য অনুযায়ী অল্প সহযোগিতা করেছি এই জাতীয় সম্পদকে।’
বিষয়টি নিয়ে রোববার অনুসন্ধান চালিয়েছে নিউজবাংলা। কাঙ্গালিনী সুফিয়ার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি বক্তব্য নেয়া হয়েছে ফেসবুকে পোস্ট দেয়া শিক্ষার্থী আবু নাঈমের।
কাঙ্গালিনী সুফিয়ার বড় মেয়ে পুষ্প বেগম পরিবারে আর্থিক সংকটের কথা জানালেও তার দাবি, পথে পথে গান গেয়ে তার মায়ের অর্থ সাহায্য চাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
নাঈমও নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, তিনি সুফিয়াকে সরাসরি টাকা চাইতে দেখেননি। এমনকি তারা কয়েক বন্ধুও কিছু আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন ‘স্বপ্রণোদিতভাবে’।
আবু নাঈমের এই পোস্টটি শেয়ার করেছেন অনেকেসাভারের জামসিং এলাকায় নিজস্ব বাসায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া। তার বড় মেয়ে পুষ্প বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই বাড়িতে মাসহ আমার স্বামী, দুই মেয়ে, তাদের জামাইসহ ১০-১২ জন সদস্য থাকে। পুরো সংসারের ব্যয় চলে মায়ের গানের টাকায়। সংস্কৃতিমন্ত্রীর অনুদানে মা বছরে ৩৬ হাজার টাকা পায়। এ ছাড়া মাসে ১০ হাজার টাকা করে প্রধানমন্ত্রীর অনুদান ব্যাংকের মাধ্যমে আসে। বিটিভির সাবেক এক কর্মকর্তা মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দেন।
‘করোনাকালে অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মায়ের রোজগারও বন্ধ হয়ে যায়। এতে খুব কষ্টে আছি আমরা। এ ছাড়া মায়ের অসুস্থতার সময় সাত লাখ টাকা ঋণ করে চিকিৎসা করিয়েছিলাম। সুদের সেই টাকা বেড়ে এখন ১১ লাখ হয়েছে। প্রতি মাসে মায়ের ১৫ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়।’
কাঙ্গালিনী সুফিয়া শনিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাস্তায় গান গেয়ে সবার কাছে সাহায্য চেয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে পুষ্প বলেন, ‘মা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিল, ওখানে তার কিছু ভক্ত আছে। করোনার কারণে অনেক দিন তাদের সঙ্গে দেখা হয় না বলে সে গিয়েছিল।
‘এ ছাড়া মা খাজা বাবার ভক্ত। সামনে খাজা বাবার ওরস করবে, সে জন্য আমাদের চান্দা তুলতে হয়। এটা আমাদের নিয়ম। কারণ একটা ওরস করতে গেলে অনেক টাকা লাগে। এখন ওই টাকাটা আমাদের কাছে নাই। এ জন্য খাজা বাবার ওরসের জন্য মা টাকা কালেকশনে গিয়েছিল।’
অভাব-অনটনের কথা বলে তিনি টাকা চেয়েছেন, এমন তথ্য নাকচ করে পুষ্প নিউজবাংলাকে বলেন, ‘না, না। মানুষে কয় একটা, আর মানুষ শোনে একটা।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু নাঈম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের রাস্তায় তিনি হাঁটছিলেন, আমরা কয়েক বন্ধু দেখে তাকে নিয়ে এসে আরেক জায়গায় বসলাম। সেখানে তিনি আমাদের একটা বই দিতে চাইলেন, সেটি তার ওপর লেখা। যেটা তিনি মাঝেমধ্যে বিক্রি করেন। আমরা বসে তার গান শুনলাম, পরে সবাই মিলে অল্প কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেছি।’
কাঙ্গালিনী সুফিয়া অনটনের কথা জানিয়ে কারও কাছে টাকা চাননি বলে জানান নাঈম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরাসরি চাইতে দেখিনি, কিন্তু মানুষজন তাকে টাকা দিচ্ছিলেন। আর যারা দিচ্ছিলেন তাদের সঙ্গে কথা বলারও সুযোগ হয়নি।’
আপনাদের কাছে তিনি টাকা চেয়েছেন কি না, প্রশ্ন করলে নাঈম বলেন, ‘আমাদের কাছে চায়নি, আমরা স্বপ্রণোদিতভাবেই দিয়েছি।’